পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : সুমাইয়া শিমু (ছদ্ম নাম)। তৃতীয় শেণীর ছাত্রী। বয়স সাড়ে ৭ বছর। রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে মায়ের সাথে থাকে। টিনসেড বাসার একটি ছোট্ট রুমে মা ও ছোট দুই ভাইসহ তিন বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে। মা ওই এলাকায় বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে তাদের লালন পালন করেন। কষ্টের সংসার, তবু তারা সুখেই ছিলেন। মায়ের আশা ছিল তার তিন সন্তানকে লেখাপড়া করাবেন। এ লক্ষ্যেই অভাব অনটনের মধ্যেও মেয়েকে কোথাও কাজে না দিয়ে স্কুলে ভর্তি করেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার মেয়ের ভাগ্যে নেমে এলো অন্ধকার। শিমুর মা কথাগুলো বলতে গিয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠলেন। তিনি জানান, পাশের বাসায় ডেকে নিয়ে শিমুর বাবার বয়সী (৪৫) এক ভ- তাকে ধর্ষণ করে। তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। বাসা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। শিমুর মা জানান, ওই ঘটনার পর থেকে তার মেয়ে ঘুমের মাঝেও ভয়ে চিৎকার করতে থাকে।
ঘটনাস্থল ডেমরা থানার কোণাবাড়ি এলাকা। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ জানান, গত বছর তার ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশুকে পাশের বাসার এক ভাড়াটিয়াসহ ২ জন গণধর্ষণ করে। ওই গৃহবধূর স্বামী ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘আমার মতো অনেক মা-বাবা ধর্ষিত সন্তানদের যন্ত্রণা ও ভয়ঙ্কর কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন। ধর্ষিত শিশুদের ভয়-আতঙ্ক প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়। এ কষ্ট, এ যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। শুধু এ দুইটি শিশুই নয়, দেশে এখন প্রতিদিনই শিশুরা এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি শিকার হচ্ছে। তাদের জীবনে নেমে আসছে ভয়াবহ অন্ধকার। যেন ফুল ফোটার আগেই কলি ঝরে যাওয়ার মতো। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে সেইসব পাষ- লম্পটরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশে শিশু ধর্ষণ ও হত্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। চলতি বছরের ৫ মাসে ১৩৮ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তন্মধ্যে ৩৯ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ থেকে ৫ বছরের শিশু কন্যাও রয়েছে। ২০১৫ সালে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৩৫০, ধর্ষণের পর হত্যা বেড়েছে ৪২ এবং সামগ্রিকভাবে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ১৬১ শতাংশ। চলতি প্রথম ৪ মাসের চেয়ে এ বছরের প্রথম ৪ মাসে ১৪ শতাংশ ধর্ষণ বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পরিস্থিতি বড়ই উদ্বেগজনক। ঘরে কিংবা বাইরে, কোথাও নিরাপদ নয় শিশুরা। শিশুরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে গণধর্ষণ, অপহরণ, নিপীড়নসহ ধর্ষণের পর হত্যার। নির্যাতনের ফলে শুধু শিশু নয়, পরিবারের সদস্যরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের পর হত্যা। এমন ঘটনার সংখ্যা যেন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।
অপর একটি মানবাধিকার সংগঠন অর্থাৎ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত সারা দেশে ১৬৮ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হযেছে। ২০১৫ সালে সারা দেশে ৮৪৬ নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী সময়ে ৬০ জনকে হত্যা করা হয়। অপমানে আত্মহত্যা করে দু’জন। আর ২০১৪ সালে ধর্ষণের শিকার হয় ৭০৭ জন। দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী ও শিশুরাও ধর্ষণ ও হত্যা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মানবাধিকার সংগঠন কাপেংয়ের ‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১৫’তে দেখা যায়, গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১৩ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন নারী ও শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ধর্ষণ কিংবা গণধর্ষণের ১শ’ অপরাধে গড়ে ২টার বেশির শাস্তি হয় না। আমার জানা মতে, গত ৫ বছরে গণধর্ষণের ৯৮ শতাংশ অপরাধে কারও শাস্তি হয়নি। যে অপরাধে শাস্তি হয় না, সেই অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আমি ১০ বছর ধরে এসব কথা বলে আসছি। ধর্ষণের পর হত্যার মতো নৃশংস ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলেই অপরাধীরাও এমন বর্বর ঘটনা পুনরায় ঘটাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, সামাজিক অস্থিরতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি শিশু হত্যা ও নির্যাতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী। শিশুদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শিশু সদনের আদলে ২০১৩ সালে যে আইনটি করা হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন নেই। শিশুদের নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, মে মাসে ৪৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তন্মধ্যে ধর্ষণের পর ১৪ শিশু ও ৬ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৪ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ১৪ জন নারী, ১১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয় । ৬ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৩ জনকে। লক্ষীপুরে গণধর্ষণের শিকার হয় দুইবোন। সিরাজদিখান উপজেলার বারুচর ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয় এক গৃহবধূ। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেশী ঘটে ঢাকা বিভাগে। গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা দুটো ঘটে ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮৬ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৫৫ জন, ৩১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ১৩ জন নারী হয় গণধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৮ জনকে। মার্চে ২৪ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষিত হয় ১০ জন, শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ৮ জন, গণধর্ষণের শিকার হয় ৩ জন ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। মার্চে সেনানিবাসের ভেতর কলেজ ছাত্রী তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের শিকার ৩৫ জন, এদের মধ্যে ৭ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার হয় ৬ জন ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৩ জনকে। ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জন শিশুধর্ষিত হয়। পিরোজপুরে শিরিন আক্তার নামের এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা করে দুর্বৃত্তরা। জানুয়ারী মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার হয় ৪ জন ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মতে, বিদ্যমান মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরস্কার, সামাজিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে, বিদ্যমান মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ,অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরস্কার, বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, বিচারহীনতা এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণেই দেশে শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো বর্বরতা বাড়ছে। ২০১৫ সালে শিশু গণধর্ষণ বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ, ধর্ষণের পর হত্যা বেড়েছে ৪২ শতাংশ। চলতি বছরের ৪ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ গুণ গণধর্ষণ বেড়েছে।
অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণ শেষে হত্যার মতো ঘটনা বাড়ায় সাধারণ মানুষের মনে আতংক তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অপরাধীদের যথাসময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে না পারলে এ অপরাধ বাড়তেই থাকবে।
পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমান সরকারের ২৯ মাসে সারাদেশে প্রায় ১৭শ’ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৪ সালে থেকে ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে গত দুই বছর ৫ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৫৮৩ নারী-শিশু। গণধর্ষণ করা হয়েছে ৫০৩ জনকে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২১০ জনকে। অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে ৪৪ জন। তবে এ পরিসংখ্যানের চেয়ে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ধর্ষণের প্রকৃত ঘটনা পরিসংখ্যানের কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দাবী করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
২০১০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৫৬ জন, শিশু ৩০৮ জন, হত্যা করা হয় ৬১ জনকে, গণধর্ষণের শিকার ১১৯ জন ও আত্মহত্যা করেছে ৬ জন। ২০০৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৫৪ জন, শিশু ২৪৩ জন, হত্যা ৯৭ জন, গণধর্ষণ ১৭৬ জন ও আত্মহত্যা করেছে ৮ জন।
বাংলাদেশে শিশুর আর্থ-সামাজিক অধিকারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অগ্রগতি পরিলক্ষিত হলেও শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা ও আত্মহত্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ)।
বিএসএএফ পরিচালক শহীদ মাহমুদ শিশু হত্যা নির্যাতনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ এর এপ্রিল পর্যন্ত শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ।
বিএসএএফ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫২১ টি শিশু, যাদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৯ জন আর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ৩০ টি শিশু। যা ২০১৪ সালে সংঘটিত শিশু ধর্ষণের তুলনায় ১৬১ শতাংশ বেশি এবং গণ ধর্ষণ হয়েছে ৩৫০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে ২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৩৮ শিশু। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে অভিভাবকদের হাতে খুন হওয়া শিশুর সংখ্যা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, ২০১৫ সালে ধর্ষণের শিকার হয় ১ হাজার ৯২ জন নারী-শিশু। আর ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৬৬ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর মার্চ মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে মোট ধর্ষণের শিকার ১৬৯ জন নারী ও শিশু। এই তিন মাসে যৌন হয়রানির শিকার হন ৭০ জন। আর এসিড সহিংসতার শিকার হন ১১ জন নারী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে মোট ধষর্ণের শিকার হয় ১০৫ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয় ২৯ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় তিনজনকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে ২ জন। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছে এমন ২০ জন ভিকটিমের বয়স ৭ থেকে ১২ বছর।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একই সময়ে শিশু নির্যাতন নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ২ জন শিশুর। শারীরিক নির্যাতনে একজন গৃহশ্রমিক শিশু ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় ১৮টি শিশুকে। অপহরণের পর হত্যা করা হয় ১১ জন শিশুকে। এ সময়ে ১৩ জন নিখোঁজ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু অপরাধীদের পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু বলেছেন, দিন দিন নারী ও শিশু ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের মতো বেদনাদায়ক ও জঘন্য ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও এ ব্যাপারে যেন কারও টনক নড়ছে না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিংবা পেশিশক্তির জোরে অনেক সময় পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে না পারলে আগামীতে পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহ হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয়, দেশে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেলেও এসবের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না আমাদের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।