পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাড়তে হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির বিতর্কিত মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে। গতকাল ছুটির দিনে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ নথি গোপনে সরাতে (চৌর্যবৃত্তি) গিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ধরা খান। অতপর তাদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে নিজ কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে প্রতিষ্ঠানটির বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। পরে কৌশলে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে সক্ষম হন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেয়ার পর হঠাৎ বঙ্গবন্ধুপ্রেমী হয়ে উঠেন। তখন থেকে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি কার্যত নিজের খেয়ালখুশি মতো পরিচালনা করে আসছেন। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আলোচিত সমালোচিত ও বিতর্কিত হন। আলেমদের নিয়ে কোটারি সৃষ্টি করে দেশের আলেম সমাজকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিমুখ করে তোলেন। তার অপকর্মের খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারও হয়েছে।
এর আগে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করার অভিযোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর চেয়ে তিনি নিজেকে অধিক ক্ষমতাবান মনে করায় সেই কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব এখনো দেননি বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নূরুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার সকালে ছুটির দিনে গোপনে ফাউন্ডেশনে আসেন সামীম আফজাল। তিনি নিজের কক্ষ থেকে অফিসের প্রয়োজনীয় কিছু নথি গোপনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে কাগজ-পাতি রেখেই পিয়নের সহায়তায় দ্রুত কার্যালয় ত্যাগ করেন। সচিব বলেন, নানা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মন্ত্রণালয় তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘দুর্নীতির অভিযোগে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না এবং তার নিয়োগ কেন বাতিল করা হবে না’ কারণ জানতে চেয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশও বাতিল করা হয়েছে। মহাপরিচালকের অনৈতিক আদের্শ নির্দেশ না মানায় গত ৩০ মে মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন সামীম মোহাম্মদ আফজাল। এর আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (সংস্থা) মো. জিয়া উদ্দিন ভূঞা বলেন, ক্ষমতা বহির্ভূত, বেআইনি, অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে করা সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি বাতিল করা হল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে নিয়োগ, পদোন্নতি, ক্রয় কার্যক্রমসহ নানা কাজে দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কিছু সুর্নিদিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে দুদক গত ৭ মে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট শাখার পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেসব অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার যৌক্তিকতা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। ওই বরখাস্তের আদেশ বাতিল করতে গত ৩ জুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন মহীউদ্দিন। সেই আবেদনের পর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পর্যালোচনা করে কিছু অনিয়ম এবং বেআইনি বিষয় নজরে আসে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। বলা হয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। পরিচালক মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশের ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের (প্রতিমন্ত্রী) অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এছাড়া ওই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার আগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৌখিক সম্মতিও নেওয়া হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও মহীউদ্দিন মজুমদারকে দেয়া হয়নি। এ কারণে মহাপরিচালকের দেওয়া সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি বে-আইনি, অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অকার্যকর বলে চিঠিতে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন জুডিসিয়াল সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা সামীম মোহাম্মদ আফজাল। অতপর তিনি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনকে নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করেন। নিজের অনুগত কিছু আলেমকে দিয়ে দেশের আলেম সমাজকে ফাউণ্ডেশন বিমুখ করেন। তিনি ফাউণ্ডেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে অত্যন্ত ধূর্ত ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত। মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বেশ কয়েকবার সামীম মোহাম্মদ আফজালকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিফ করেননি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার বলেন, মহাপরিচালক নিজের দোষ ঢাকতেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। এখন তাকেই ফাউন্ডেশন ছাড়তে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গত বছর অক্টোবরে বায়তুল মোকাররমের একটি পিলার ভেঙে একটি দোকান বড় করা হয়। এ বিষয়ে ব্যব্স্থা নেওয়ায় মহাপরিচালক ক্ষুব্ধ হন। ওই ঘটনায় আমি থানায় জিডি করি, ওই দোকান বন্ধ করে দিই। ওই দোকানদার দুদিন পর তালা খুলে ফেলে। পরে আবার আমি পুলিশ আনাই। সেই দোকানদার আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। সুত্র জানায়, বিতর্কিত ব্যাক্তি সমীম মোহাম্মদ আফজালকে ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক পদে রাখতে নানা জায়গা থেকে চেষ্টা তদবির হচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছক ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, অত্যান্ত ধূরন্দর-ধান্দাবাজ সামীম মোহাম্মদ আফজাল সরকারকে এতোদিন ভুলভাল বুঝিয়ে ফাউণ্ডেশনের মহাপরিচালক পদ ধরে রেখেছেন। কিন্তু তিনি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর চেয়ে নিজেকে অধিক ক্ষমতাবান মনে করায় ধরা খাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ফাউণ্ডেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে তিনি ধিকৃত হলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।