Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিনি ডাস্টবিনের অপব্যবহার

প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীজুড়ে বসানো হচ্ছে মিনি ডাস্টবিন। দুই মেয়রের নির্বাচনী ওয়াদা ‘ক্লীন ঢাকা’ বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে প্রথম দফায় ৫ হাজার ৭০০ ডাস্টবিন স্থাপন করেছে। উত্তর সিটিতেও প্রায় এক হাজার ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। ৪ কোটি টাকা খরচ করে দক্ষিণ সিটি ৫ হাজার ৭০০টি ও ৭০ লাখ টাকা খরচ করে উত্তর সিটি এক হাজার মিনি ডাস্টবিন বসানোর পরও দুই সিটির রাস্তা ঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুই সিটিতে স্থাপন করা মিনি ডাস্টবিনগুলোর কোন কোনটি বসানোর পর আজ পর্যন্ত পরিস্কার করা হয়নি। কোথায়ও মিনি ডাস্টবিন বসানোর পর ভেঙ্গে পড়ে আছে। আবার কোথায়ও মিনি ডাস্টবিন ঘিরে ময়লা আবর্জনার ঢিবি তৈরি হয়ে আছে। কোথায়ও মিনি ডাস্টবিনটি উল্টে থাকতেও দেখা গেছে। যেখানে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের নাম ও বক্তব্য উল্টে আছে। এ নিয়ে কেউ কেউ উপহাস করে বলছেন, দক্ষিণ সিটির মেয়র উল্টে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর বখতিয়ার বলেন, মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাস সহজে যায় না। এতোদিন নগরবাসী সেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলেছে। এখন নতুন এ নিয়মটি মানতে ও অভ্যাসে আসতে নগরবাসীর আরও সময় লাগবে। আশা করি মানুষ এগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে নগরবাসীকে আরো সচেতন করে তুলতে নানা গণসচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। এর মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন ও রেডিওতে নাটিক, সভা-সেমিনারসহ পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তোলা।
দক্ষিণ সিটির ডাস্টবিনের গায়ে ময়লা ফেলার বিনীত অনুরোধ জনিত লেখার মাধ্যমে মেয়র সাঈদ খোকনের নাম ও বক্তব্য রয়েছে। আর উত্তর সিটির ডাস্টবিনে লেখা হয়েছে, এখানে আবর্জনা ফেলুন। আমাদের প্রিয় শহর পরিচ্ছন্ন রাখি।
দুই কর্পোরেশনের পথচারীদের মধ্যে উত্তর সিটির অনেকেই অভ্যাস বদলে রাস্তার পাশের মিনি ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে শুরু করেলেও দক্ষিণের মানুষ এখনও এর যথাযথ ব্যবহার করছেনা। কোনো ধরনের প্রচারণা ছাড়াই এধরণের উদ্যোগ নেয়ার কারণে এর ব্যবহার এখনও নগরবাসী পুরোপুরি বুঝে উঠেনি বরে বিষেজ্ঞরা মনে করছেন। তবে উত্তর সিটির নাগরিকদের এখন খালি বোতল, চিপস কিংবা চকলেটের মোড়ক ডাস্টবিনে ফেলতে দেখা গেছে।
এ অবস্থায় মানুষের সচেতনতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়- জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, সিটি কর্পোরেশন থেকে নেওয়া উদ্যোগটি খুবই ভালো। তবে কোনো ধরনের সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়াই এটা করা হয়েছে। আমাদের অনেক দুষ্টু প্রকৃতির লোক আছেন, যারা এ বিষয়গুলোকে পাত্তা দেন না। আর দীর্ঘদিনের পুরনো অভ্যাস পাল্টাতে তো সময় লাগবেই।
এজন্য সবাইকে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার বিষয়ে সচেতন করতে হবে। টেলিভিশনে এ বিষয়ে মেয়ররা সচেতনতামূলক বক্তব্য দিতে পারেন। পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে। মোড়ে মোড়ে এ বিষয়ে শিক্ষনীয় বার্তা দিয়ে ব্যানার লাগানো যেতে পারে। সচেতনতার পরও এ ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
জানা যায়, যে সব স্থানে মানুষের ভিড় বেশি সে সব স্থানে ১৫০ মিটার পরপর ডাস্টবিন বসানো হচ্ছে। আর যে সব স্থানে জনসমাগম তুলনামূলক কম, সেসব স্থানে আপাতত ডাস্টবিন বসানো হচ্ছে ৩০০ মিটার পরপর। রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, মহাখালী, গুলশান, বনানী, কাকলী ও ইডেন কলেজ এলাকায় বসানো মিনি ডাস্টবিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নগরবাসীর অনেকেই চলতি পথে হাতের ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন এসব ডাস্টবিনে।
দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, আমরা একটি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় পাঁচ হাজার ৭০০ ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো ডাস্টবিন বসানো হবে। এখন হাসপাতাল, বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হাত বাড়ালেই ময়লা ফেলার ডাস্টবিন পাওয়া যাবে।
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বলেন, উত্তর সিটি এলাকায় শুকনো বর্জ্য ফেলতে রাস্তার পাশে প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ডাস্টবিন বসানো হচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে এ ধরনের পাঁচ হাজার ডাস্টবিন বসানো হবে।
তিনি জানান, শুধু এ ডাস্টবিনই নয়, ইতিমধ্যে আমরা ২৫টি বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন চালু করেছি। যেসব এলাকায় বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন চালু হয়েছে সেখানে আর কেউ রাস্তায় ময়লা রাখতে পারছে না। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ ধরনের ৭২টি বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন চালু হয়ে গেলে নগরীর রাস্তার ওপরে কোনো ময়লা থাকবে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে দক্ষিণ সিটির ৫ হাজার ২৪৯ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী একযোগে কাজ করছে। আমরা ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর ঘোষণা করেছি।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক বলেন, অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল সড়কে বর্জ্য থাকবে না। সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন বানানো হচ্ছে। কতগুলো চালু হয়েছে। আর তিন-চার সপ্তাহ পর সড়কে খুব একটা আবর্জনা থাকবে না।
দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বর্জ্য অপসারণের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন নগরবাসী। মিনি ডাস্টবিনে বসানোর বিষয়টিকে সচেতনতার সঙ্গে স্বাগতও জানান তারা। উৎসাহের সঙ্গে ময়লা ফেলাও শুরু করেন অনেকেই।
তবে কিছু কিছু মানুষের অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে অনেকে ভালো উদ্যোগও সফল হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাদের মতো অনেকেই দীর্ঘদিনের পুরনো অভ্যাস সহজে পাল্টাতে পারছেন না। এক হাত দূরে ডাস্টবিন থাকলেও সেখানে ময়লা না ফেলে পুরনো অভ্যাস চালিয়েই যাচ্ছেন। সচেতনতার অভাব ও কিছু অজ্ঞ লোকের কারণে একটি ভালো উদ্যোগ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অল্প ব্যবধানে বসানো হয়েছে কয়েকটি ডাস্টবিন। ডাস্টবিনগুলোর সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা। তবে অনেকে ময়লা ফেললেও যতœ সহকারে না ফেলায় ডাস্টবিনের সামনেই পড়ে আছে। আবার অনেকেই ডাস্টবিনে না ফেলে পাশে ভেজা ময়লা স্থানে সুযোগ বুঝে ময়লা ফেলছেন।
মিরপুর কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের গোড়ায় বেশ কিছু মিনি ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। এরপরও পাশেই জমানো ময়লা দেখা গেছে। পাশেই বসা দোকানদার কালু মিয়া বলেন, ডাস্টবিন বসানোয় খুব ভালো হয়েছে। এখন আর দোকানের সামনে ময়লা হয় না। তবে কিছু মানুষের মরলেও স্বভাব যায় না। এ কারণে ওভাবে ময়লা পড়ে থাকে। তারা কোনো বিষয়কেই গুরুত্ব সহকারে নেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিনি ডাস্টবিনের অপব্যবহার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ