পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখতে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা সশস্ত্র বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে তাদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে চাইÑ এটা যে শুধু যুদ্ধের জন্যই দরকার তা নয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের জন্যও এর প্রয়োজন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে চীনের সফররত প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল চ্যাং ওয়াংজুয়ান-এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে একথা বলেন। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘চমৎকার’ সম্পর্ক থাকার কথা তুলে ধরেন বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী; বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে তারা অংশ নিচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে ভাল সহযোগিতা হতে পারে মত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চীনা মন্ত্রীকে বলেন, দুই দেশেরই প্রচুর জনসংখ্যা। তাই কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহযোগিতা হতে পারে।
বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার করিডোরের (বিসিআইএম) কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কানেকটিভিটিকে শক্তিশালী করবে এবং এর মাধ্যমে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ’ওয়ান চায়না পলিসি’ বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই যে কোন দেশের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব।
চীনকে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন কাজে বেইজিং বরাবরই সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই ঘনিষ্ঠতা উত্তোরত্তোর আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মাধ্যমে চীনের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানান।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ সময় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান রয়েছে এবং দেশের অর্থনীতিও ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে উল্লেখ করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরো সুদৃঢ় হবে। জেনারেল চ্যাং ওয়াংজুয়ান এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালে চিন সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সেই সফরেই দুই দেশ ‘স্টেট টু স্টেট’ এবং ‘মিলিটারি টু মিলিটারি’ সম্পর্ক উন্নয়নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের তিনবাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের মধ্যে খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও মতবিনিময় হয়। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ সময় বলেন, দু’পক্ষই মনে করে এক্ষেত্রে ‘হাই লেভেল’ এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির এবং জুনিয়র অফিসারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবার পর থেকেই উভয়ের মধ্যে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং সেনা সহযোগিতা চলমান রয়েছে এবং দুটি দেশই আঞ্চলিক শান্তি স্থাপন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশের ওয়ান চায়না পলিসিতেও এ সময় চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত মা মিংজিয়াং উপস্থিত ছিলেন।
চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ ত্যাগ
চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল চ্যাং ওয়ানকুয়ানের নেতৃত্বে ৩৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল তিনদিনের সফর শেষে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছে। গতকাল সোমবার তারা দেশে ফিরে যান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের বিদায় জানান। এসময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াংসহ বাংলাদেশের ঊর্ধতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত হন তাকে বিদায় জানাতে।
প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফরকালে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সফরকালে তারা বিভিন্ন সামরিক-অসামরিক স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
এদিকে চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকা সফরে গিয়ে গত রোববার চ্যাং ওয়ানকুয়ান বলেন, ১৯৭৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই দুইপক্ষের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই দেশের নেতারা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সামরিক ক্ষেত্রেও আরও গভীর সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, চীনা সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চায়। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কৌশলগত বিনিময়, পারস্পরিক সহযোগিতা, সামরিক প্রশিক্ষণ, সমরাস্ত্র প্রযুক্তি বিনিময়- এসবের প্রেক্ষাপটেই দুই বাহিনীর মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিএমএইচে স্পিকারের শয্যাপাশে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে দেখতে যান এবং তার শয্যাপাশে কিছু সময় অবস্থান করেন। শেখ হাসিনা উপস্থিত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের কাছে স্পিকারের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রী তার দ্রুত রোগ মুক্তি কামনা করেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গত শনিবার থেকে সিএমএইচের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।