Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমেরিকা অঞ্চলে ভয়ঙ্করভাবে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে

ডব্লিউএইচও’র জরুরি দল গঠন

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক  : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কর্মকর্তারা বলেছেন, জিকা ভাইরাস আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোতে ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় তারা জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার এক জরুরি বৈঠক আহ্বান করবেন। খবর দি নিউইয়র্ক টাইমস।
হু’র মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চ্যান বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক বক্তৃতায় বলেন, বিপদের মাত্রা অত্যন্ত বেশি।
প্যান আমেরিকান স্বাস্থ্য সংস্থার ইউনিট চিফ ডা. সিলভেইন আলডিঘিয়েরি বলেন, আমেরিকার দেশগুলোতে আগামী ১২ মাসে মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ লাখ লোক জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে আমাদের বড় রকমের ফাঁক রয়েছে। এগুলো গাণিতিক মোটামুটি হিসাব।
ড. চ্যান বলেন, সুনির্দিষ্ট উদ্বেগের বিষয় হল মাইক্রোসেফালির ঘটনা। এ হচ্ছে এক বিরল ঘটনা যাতে শিশুরা অস্বাভাবিক ছোট মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জিকার বিস্তৃতির সাথে ব্রাজিলে এ ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞা বলছেন যে এ পরিস্থিতির জন্য জিকাই দায়ী কিনা তা বলা বেশি আগাম হয়ে যাবে। তবে কিছু ইঙ্গিত রয়েছে যে এ দু’য়ের মধ্যে যোগসূত্র আছে।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বুধবার বলেন যে অক্টোবর থেকে ৪১৮০টি মাইক্রেসেফালির ঘটনা জানা গেছে যা আগের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। এ মহামারির আগে ব্রাজিলে বছরে ১৫০টি মাইক্রোসেফালির ঘটনা রেকর্ড করা হয়।
এটা ব্যাপক ভিত্তিক সতর্কতা জারি করেছে। কারণ গবেষকরা বলছেন, এ ভাইরাস সম্প্রতি ব্রাজিলে পৌঁছেছে। চিকিৎসকগণ, হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা কর্মকর্তারা মাইক্রোসেফালিতে বিপুল সংখ্যায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ও এ প্রাদুর্ভাবের প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি রাখছেন।
তবে এর কারণ যে জিকা তা নিরূপিত হওয়া এখনো বহুদূরে।           


ডব্লিউএইচও’র সহকারী মহাপরিচালক ড. ব্রুস আইলওয়ার্ড বিশেষ ভাবে জিকা ভাইরাস এবং মাইক্রোসেফালির (এক ধরনের যোগ যার ফলে মানুষের মাথা অস্বাভাবিক ছোট হয় এবং মস্তিস্কের প্রবৃদ্ধি সম্পূর্ণভাবে হয় না) মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে উল্লেখ করে বলেন, এ রোগের সহায়ক এবং এর কারণের মধ্যে কী তফাৎ তা বুঝাটা অতি জরুরি।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানায়, তারা মাইক্রোসেফালির ৭শ’ রোগীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে মাত্র ৬টি শিশুর মাঝে জিকার অস্তিত্ব পেয়েছি। এর আসল কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, ব্রাজিলের পরীক্ষণ পদ্ধতি সেকেলে এবং জিকার অনেক ঘটনা অধরা থেকে যেতে পারে। তারা আরো বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুর মাইক্রোসেফালির কারণে মায়ের মধ্যে জিকা থাকতে পারে। এমনকি শিশু হয়তো এ ভাইরাসে আক্রান্তই হয়নি।
ওই অঞ্চলের ২০টি দেশ ও ভূখ-ে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ডা. চ্যান বলেন, তিনি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বিগ্ন। তিনি আন্তর্জাতিক পরিম-লে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাব্যতা, যে মশা এ ভাইরাস বহন করে তার বিষয়ে সর্বব্যাপী উদ্যোগ এবং কত সীমিত সংখ্যক মানুষ এর প্রতিষেধকের জন্য কাজ করছে সে বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। ১৯৪০ সালে উগান্ডায় প্রথম দৃশ্যমান এই রোগটি সত্যিকারেই আমেরিকায় দেখা গেছে।
তিনি বলেন, অনিশ্চয়তার মাত্রার সাথে সাথে উদ্বেগের মাত্রাও অতি ঊর্দ্ধে। প্রশ্ন প্রচুর। কিন্তু আমাদের দ্রুত এর উত্তর বের করতে হবে।
ডা. চ্যান তার গভীর উদ্বেগের কথা প্রকাশ করলেও মি. ব্রুস আইলওয়ার্ড এ রোগের কিছু কিছু ভয়াবহ দিক সম্পর্কে অনেকটা নরম সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ’ শব্দটি এখানে ব্যবহার করা সঠিক। ‘আতঙ্কিত’ বলাটা সঠিক ভাষা হবে না।
ব্রাজিল অলিম্পিকে জনগণের যাওয়াতে ডব্লিওএইচও নিষেধ করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন, আমি মনে করি এটা ঠিক হবে না যখন একটি এলাকায় রোগের উদ্ভব হয়েছে এবং এর সুযোগ রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে কি না সে বিষয়ে পরামর্শের জন্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক আহ্বান না করায় কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ ডা. চ্যানের সমালোচনা করেছেন।
বুধবার জামা জার্নালে দু’জন বিশেষজ্ঞ অবিলম্বে একটি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এক্ষেত্রে বিলম্বের মধ্যে ২০১৪ সালে ইবোলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে ডব্লিউএইচও’র বিলম্বের প্রতিধ্বনি লক্ষ্য করছেন।
এদিকে জিকা ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের কারণে ‘জরুরি দল’ গঠন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের কোনো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান বলেছেন, জিকা ভাইরাস সাধারণ হুমকি থেকে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং এটা হৃদয় বিদারক। বিশেষ ওই জরুরি দল আগামী সোমবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ওই সাক্ষাতে জিকার কারণে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইবোলা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
চ্যান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও প্রশ্ন অনেক বেশি। আমাদের দ্রুত কিছু উত্তর জানা প্রয়োজন। এসব কারণে আমি একটি জরুরি দল গঠনের আহ্বান করেছি। আমি ওই দলের কাছে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমেরিকা অঞ্চলে ভয়ঙ্করভাবে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ