পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদের আগমনে মহানবী (সা.)-এর সাহাবিগণ পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময় করে তাদের আনন্দের প্রকাশ ঘটাতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিগণ ঈদের দিনে একে অপরকে বলতেন : ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার আমল কবুল করুন। (ফতহুল বারী)।
ইসলামে ঈদের দিনে উচ্ছল বিনোদন ও খেলাধুলার শালীন কসরত বিদ্যমান ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) এসব কাজে উৎসাহ দিয়েছেন। উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (আনহা) বলেন : আমি মসজিদের মধ্যে ক্রীড়ারত হাবশিদের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম আমি তখন দেখলাম রাসূল (সা.) আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন এমতাবস্থায় উমর (রা.) এসে তাদেরকে ধমক লাগালেন। তখন রাসূল (সা.) বলেন, উমার তাদেরকে ছেড়ে দাও। ছেলেরা, তোমরা নিশ্চিন্তে খেল। তিনি আরো বলেন, ইয়াহুদিরা জানুক যে, আমাদের দ্বীনে উদারতা আছে। আমাকে উদার সহনশীল দ্বীনে হানিফসহ প্রেরণ করা হয়েছে। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম।
ইসলামে ঈদের প্রচলন : সকল জাতির আনন্দ উপভোগের বিশেষ দিবস রয়েছে, সে দিবসগুলোতে তারা সবাই মিলে মন খুলে আনন্দে মেতে ওঠে। তদ্রুপ ইসলামেও বৈধ আনন্দ উপভোগের জন্য আল্লাহ তায়ালা ঈদ উৎসবের ব্যবস্থা দিয়েছেন। প্রতি বছর এই দিবসগুলো খুশি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে প্রতিটি মুসলিমের কাছে ফিরে আসে বলেই এটির নাম ঈদ।
মদিনায় হিজরতের মাধ্যমে ইসলাম একটি স্বাধীন আবাসস্থল খুঁজে পায়। ইসলাম ও মুসলিমগণ যুগান্তরের যাতনা ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত হয়ে বিজয়ের আলোকরশ্মি যখন দেখল, ঠিক সে সময় থেকেই ইসলামে ঈদের আনন্দের শুভ সূচনা হলো। এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদিস প্রণিধানযোগ্য :
রাসূল (সা.) হিজরত করলেন, মদিনাবসীদের তখন দুটো দিন ছিল। যে দিন দু’টিতে তারা খেলাধুলা করত। রাসূল (সা.) বললেন, এ দিন দু’টি কী? তারা বলল : এ দিন দু’টিতে আমরা জাহেলিয়াতের সময়ে খেলাধুলা করতাম, তখন রাসূল (সা.) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সে দু’টি দিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দু’টি দিন দিয়ে তোমাদেরকে বদলে দিয়েছেন, তা হলো- ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।
সুতরাং প্রত্যেক জাতির আনন্দঘন সৌন্দর্যের প্রকাশ এবং খুশির আতিশয্যে ঘর থেকে বের হওয়ার দিনগুলোর বদলাতে মুসলিমদের ঈদের দিন। ইসলামপূর্ব সহস্র বছরব্যাপী চলে আসা নওরোজ ও মাহারজান নামের দুটো ঈদের বদলে আল্লাহ তায়ালা উত্তম দুটো দিন মুসলিম দেরকে দান করলেন।
অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর আনন্দের দিবসগুলো পাপ-পঙ্কিলতায় ভরপুর। মদপান, ব্যভিচার, গান-বাদ্য ও অপচয় হলো অন্যান্য জাতির আনন্দ দিবসসমূহের মূল উপজীব্য, তদস্থলে ইসলামে আনন্দ-উৎসবের দিন দু’টি আল্লাহর ইবাদত, হালাল খাদ্য গ্রহণ, আত্মীয়র সম্পর্ক রক্ষা, বৈধ খেলাধুলা, নির্মল হাসি-আনন্দ, পারস্পরিক উপহার বিনিময় এবং সব কিছুতে মিতচারিতা মূল উপজীব্য। তবে তাকওয়াশূন্য কতিপয় মুসলিম ইসলামের ঈদ আনন্দের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিধর্মীদের সাদৃশ্য কর বহুবিধ অশ্লীলতা ইসলামে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দিচ্ছে। তাদের জন্যই আল্লাহ তায়ালার বাণী প্রযোজ্য : ‘নিশ্চয় যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না। (সূরা : নূর-১৯)।
সুতরাং যারা ইসলামের পবিত্র ঈদ আনন্দকে অশ্লীল নাটক, সিনেমা, গান-বাদ্য, মদপান, লটারি জুয়া, অপচয় আর অবৈধ খেল তামাশা দিয়ে কলুষিত করবে, নারীর নগ্নতা দিয়ে ইসলামের অনাবিল পরিবেশকে নোংরা করবে তাদের জন্য আল্লাহর আজাব অবধারিত হবে। তাই আসুন, ইসলামের উৎকৃষ্ট ঈদ আনন্দকে আমরা মনের চরম আনন্দে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হই, আর নির্মল ও পবিত্র আনন্দগুলো সবাই মিলে ভাগ করে নিয়ে উপভোগ করি। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন ও তাওফিক আতা করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।