পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ. টি. এম. রফিক, খুলনা থেকে : সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন নদী দিয়ে নৌযান চলাচলে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে সুন্দরবনকে। অবৈধ নৌ চলাচলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীব-বৈচিত্র্য। এতে পানিশুন্য হয়ে পড়েছে গোটা সুন্দরবন ও নদ-নদীর পানি।
বর্তমান বনের ভিতর দিয়ে প্রতিদিন বড়ছোট মিলিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ জাহাজ চলাচাল করে। এ সব জাহাজ চলাচলের কারণে সৃষ্ট ঢেউয়ের জন্য নদীর পাড় ভাঙছে। জাহাজের নিঃসৃত বর্জ্য ও তেল দূষিত করছে পানি। অতিরিক্ত হর্ন সাইরেন বাজানোর কারণে শব্দ দূষণের মাত্রাও ক্রমেই বাড়ছে। এ সব কারণে নদীর পাড় ঘেঁষে থাকা হরিণের অভয়ারণ্যে ওই প্রাণীটির দেখা মেলে না। একই অবস্থা ডলফিনের অভয়ারণ্যের। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গেল বছর শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজ, সার ও কয়লাবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়া এবং সম্প্রতি পশুর নদীতে কার্গো ডুবির ঘটনায় এ উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দেয়। সুন্দরবনের পাশে সরেজমিন নদী ঘুরে এবং বনের ভিতরে আসা পেশাজীবীসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
এ সব বিষয়ে কথা বলতে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইছউল আলম ম-লের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নৌ চলাচল ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নৌ চলাচল যে বনের জন্য ক্ষতিকর একথা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। নৌযান থেকে বের হওয়া সারায়নিক বর্জ্য পানিতে মিশে পানি বিষক্ত হয়ে পড়েছে। শব্দ দূষণের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকাতে যেসব প্রাণী দেখা যেত সে সব এখন আর দেখা যায় না। পানি দূষণ জাহাজের সৃষ্ট প্রবল স্রোতসহ নানান কারণে এখন ডলফিনের অভয়ারণ্যেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের এক কর্মকর্তা জানান, নাব্যের কারণে মংলা থেকে ঘষিয়াখালী চ্যানেল (নৌপথ) বন্ধ হয়ে যাবার পর ২০১১ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে অবৈধভাবে নৌযান চালু হয়। বনের ভিতর দিয়ে সন্নাসী, রায়েন্দা, বগী, শরণখোলা, দুধমুখী, হরিণটানা, আন্দারমানিক, মৃগমারী, চাঁদপাই, জয়মনিগোল-মংলা পথে চলতে শুরু করে ভারী জাহাজ-কার্গো। এ পথটি বন্ধ করতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চ্যানেলটি দিয়ে ভারী জাহাজের চলাচল বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন অধিদপ্তর সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার্থে বনের ভিতর দিয়ে পরিচালিত নৌপথটি বন্ধের সুপারিশ করেছে। জীব-বৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথটি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অবিলম্বে চালু করারও সুপারিশ করা হয়। আর এ পথ চালু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প পথ গ্রহণ করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে সুপারিশ করেছে বিকল্প নৌ রুট অনুসন্ধান বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ সূত্র এবং সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মংলা থেকে বরিশালের বগী হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং ভারতের সঙ্গে নৌ পথের যোগাযোগ রয়েছে। এ নৌ পথের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৭৪ সালে মংলা ও বগীর মধ্যবর্তী স্থলভাগে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার খনন করে ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথটি চালু করা হয়। নৌপথটির দু’পাশে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি ঘের গড়ে উঠেছে। এ কারণে চ্যানেলটির বিভিন্ন স্থান পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নৌ চলাচলের। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং খনন না হওয়ায় নৌপথটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এরপর বনের ভিতর দিয়ে সংরক্ষিত ও ডলফিনের অভয়ারণ্যে এলাকার মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে সন্নাসী, রায়েন্দা, বগী, শরণখোলা, দুধমুখী, হরিণটানা, আন্দারমানিক, মৃগমারী, চাঁদপাই, জয়মনিগোল, মংলা নৌপথ চালু করে নৌমন্ত্রণালয়। শুরুতে দিনে ২৫ থেকে ৩০টি ভারী জাহাজ-কার্গো-তেলবাহী ট্যাঙ্কার চললেও বর্তমানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি জাহাজ এ পথ ব্যবহার করছে।
সুন্দরবনের কর্মরত বনবিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বনের অভ্যন্তরে চালু হওয়া নৌপথটিতে পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। মিঠাপানির উৎসও কাছাকাছি। তাই এ অঞ্চলের বাঘ, হরিণ, বনবিড়াল, কচ্ছপ, বন্যশুকর, বানর, কুমির, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ পশুপাখির বিচরণও বেশি। এ নৌ পথের অন্তর্ভুক্ত মৃগমারীকে কুমিরের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ঘোষণা করেছিল বনবিভাগ। জাহাজ চলাচলের আগে এ অঞ্চলের কুমির এর বিচরণও ছিল বেশি। কিন্তু বর্তমানে এ অঞ্চলে কুমির তেমন দৃশ্যমান নয় বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মরতরা।
সন্ন্যাসী, রায়েন্দা, বগী, শরণখোলা, দুধমুখী, হরিণটানা, আন্দারমানিক, মৃগমারী, চাঁদপাই, জয়মনিগোল, মংলা চ্যানেলে সুন্দরবনের তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্যের সব অবস্থিত। জাহাজ চলাচলের কারণে বিরল প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন ও ইরাবতি ডলফিনের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ডলফিনের নিরাপদ আবাসস্থল। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বংশ বৃদ্ধি। আগে এ এলাকাগুলোয় প্রচুর ডলফিন, শুশুক দেখা গেলেও বর্তমানে দেখা মেলে খুবই কম। এছাড়া এ অঞ্চল দিয়ে মাছসহ অন্যান্য জলজপ্রাণী বিচরণও কমেছে মারাত্মকহারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।