পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : রাজনীতিতে এখন হট ইস্যু মেন্দি এন সাফাদি। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নিম্নস্তরের এই নেতাকে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে চলছে তোলপাড়। ইহুদি সাফাদিই যেন হয়ে গেছে এদেশের আগামী রাজনীতির নিয়ন্তা। মিডিয়াগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি সাফাদি ইস্যুতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিএনপি’র হাইব্রীড নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাফাদির ছবি প্রকাশের পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তায় বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ভারতে সাফাদি-আসলাম বৈঠক হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি’র পাল্টা অভিযোগ, আসলামের আগে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সাফাদির বৈঠক হয়েছে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাফাদি দাবি করেছেন, তিনি জয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অবশ্য সজিব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, সাফাদির সঙ্গে তার কোনো বৈঠক হয়নি।
ইহুদি ধর্মাবলম্বী সাফাদি নামের কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের রাজনীতি ওলোট-পালট করে দিতে পারে এমন ধারণা দেশবাসীর ছিল না। অথচ তাকে নিয়ে বড় দুই দলের মহাযজ্ঞে তেমন ধারণাই দিচ্ছে। ইসরাইলি ওই নাগরিক যেন এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে হট ইস্যু হয়ে গেল। কোথাকার কোন সাফাদি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাত করবে! আর প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় পৃথিবীর হাজারো শক্তিধর ব্যক্তির বদলে সাফাদির মতো অখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করবেন! যে ইসরাইলকে আমরা ঘৃণা করি, সেই ইসরাইলের নাগরিক সাফাদি যেন হয়ে গেল বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান কারিগর। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত দেশের মানুষ। রমজানকে কেন্দ্র করে পণ্যমূল্য বাড়ছে, ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকের বিপর্যয় অবস্থা, ইউপি নির্বাচনে নামে তৃণমূলে গণতন্ত্রের কবর হচ্ছে, ভোটে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, সীমান্তে হত্যা বন্ধই হচ্ছে না, পানির অভাবে দেশের সব নদী শুকিয়ে গেছে, সাধারণ নাগরিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শ্রমিক ফিরছে, নামেমাত্র মাসুলে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে, সাগরে ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু হারিয়ে লাখ লাখ মানুষ খোলা আকাশের নীচে, খাবার নেই, পানি নেই চরম দুর্দশায় পড়েছে। এ সব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোই। না সরকারি দল; না মাঠের বিরোধী দল। দু’পক্ষই এখন ব্যস্ত সাফাদি ইস্যুতে একে অপরের গায়ে বিষ্ঠা নিক্ষেপে।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ভারতীয় পত্রিকায় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদিসহ তিনজনের ফুলের মালা পরিহিত ছবি প্রকাশ হয়। বলা হয়, ভারতের আগ্রা সিটি কর্পোরেশনের (তাজমহল এলাকা) মেয়র আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ছবি তোলা হয়। মিডিয়ার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিকুদ পার্টির নেতা সাফাদির সঙ্গে আসলাম বৈঠক করেছেন। এ নিয়ে তৎপর হয়ে উঠে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। অতঃপর ১৫ মে চট্টগ্রামের আসলামকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ভারতে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নেতা সাফাদির সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের’ ষড়যন্ত্রে আলোচনা করেছেন এই অভিযোগেই আসলামকে গ্রেফতার করা হল। দুই দফায় রিমান্ডের পর আসলাম এখন কারাগারে। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেন, ভারত থেকে ফোন আসায় আসলামকে রিমান্ড থেকে কারাগারে পাঠানো হয়। আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। অবশ্য ভারতের সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি জানান, তারা ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি এন্ড এডভোকেসির প্রধান মেন্দি এন সাফাদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। সেখানে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না।
আসলামকে রিমান্ডে নেয়ার পর পুলিশ জানায়, তার কাছে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া গেছে। আরো কয়েকজন সরকার উৎখাতের এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। বিএনপি’র নেতারা এ ঘটনাকে ‘আজগুবি’ হিসেবে অভিহিত করে প্রচার করে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ভাল বন্ধু ভারতে বসে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ষড়যন্ত্র আষাঢ়ে গল্প। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহসহ কয়েকজন নেতার বক্তব্য হলো- আসলাম ব্যবসায়িক কাজে ভারত গেছেন। সেখানে সাফাদির সঙ্গে ছবি তুলেছেন। রিজভী বলেন, ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী লীগ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল বিএনপি’র বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। অবশ্য ঢাকায় কর্মরত ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রদূত সাফাদির সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলামের ছবি প্রকাশের পর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে প্রভাবশালী গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি এন্ড এডভোকেসির প্রধান মেন্দি এন সাফাদির সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেখানে সাফাদি দাবি করে আসলামের সঙ্গে ভারতের আগ্রায় ছবি তোলার দুই মাস আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে বৈঠকের সময় তিনি জানতেন না সজিব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা। বিবিসি’র এই খবর নিয়ে ‘জয়-সাফাদি কানেকশন’ প্রচারণায় মরিয়া হয়ে উঠে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল আলম হানিফ এটাকে বিএনপি’র পাতানো খেলা হিসেবে অভিহিত করে বিবিসিতে প্রতিবাদ পাঠানোর কথা বলেন। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা সাফাদির সঙ্গে কোনো সময়ই সাক্ষাত হয়নি। জয় গতকাল নিজের ফেসবুক একাউন্টে দেয়া স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বিএনপি এমনই এক বোকার দল, এমনকি তারা যখন মিথ্যা বলে তখনও বোকামিপূর্ণ ভুল করে। আমি চাই বিএনপি এবং সাফাদি একটা প্রশ্নের জবাব দিক। ওয়াশিংটনের ঠিক কোথায় সে আমার সাক্ষাত পেয়েছে? কোন অনুষ্ঠানে? অন্য কার অফিসে? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রথম বোকামিপূর্ণ ভুল তারা করেছে কারণ, আমি গত ৩-৪ বছরে ওয়াশিংটনে কোন অনুষ্ঠান বা কারও অফিসে যাইনি। যে মিটিংগুলো আমার হয়েছে সেগুলো সবই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এবং একান্ত ব্যক্তিগত। তাহলে কোথায় তার (সাফাদি) সাথে আমার সাক্ষাৎ হতে পারে? আমার সাথে সাফাদির কোনো সময়ই সাক্ষাত হয়নি, এটা ওয়াশিংটনেও না বা অন্যকোনো জায়গায়ও না। সে মিথ্যা বলছে।’
জয়ের এ বক্তব্যেও থেমে নেই সাফাদি ইস্যু। দুই পক্ষই নাছোড়বান্দা। ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ অবস্থা। পঞ্চম দফায় ভোটের দিনও ১১ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ভোট কেন্দ্র দখলের মহোৎসব হয়েছে। এই যে এতোগুলো মানুষ মারা গেল তা নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মিডিয়াগুলো নিজেদের মতো করে ‘সাফাদি ইস্যু’ প্রচার করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিই যেন এখন ইহুদি সাফাদির ওপর নির্ভর করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।