Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সদরঘাটে ঈদ ঘিরে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

 ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে সদরঘাটে। কুলিদের (ঘাট শ্রমিক) কাছে সাধারন যাত্রীরা প্রকাশে চাঁদাবাজির শিকার হলেও প্রতিকারের কোন উদ্যোগ নেই। অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ সাধারন মানুষের। অথচ যাত্রীসেবার জন্য সরকারি পয়সায় দৈনিক ভাতা দিয়ে কুলিদের ‘পুষছে’ ঢাকা নদী বন্দর কর্তৃৃপক্ষ। 

ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানায়, ঘাটের টাকা’র নাম করে চাঁদা তোলা তো দূরের কথা যাত্রীদের অনুমতি ছাড়া তাদের মালামালে হাত দেওয়ারও সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও ঢাকা নদীবন্দর সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মীরা অর্থনৈতিক সুবিধা, কখনো কখনো সিন্ডিকেটের চাপের কারণেও কুলিদের চাঁদাবাজি ও অনিয়মের সুযোগ করে দেন। শুধু তাই নয়, জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। কুলিদের মাধ্যমে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা টাকার অংকটা অনেক বড় হওয়ায় এর পেছনে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। একই সাথে স্থানীয় প্রশাসনের সাথেও রয়েছে এদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ।

গতকাল চাঁদপুর থেকে এমভি রাসেল-৩ লঞ্চে ঢাকায় এসেছেন ইমরান হোসেন। চটের ব্যাগ ও বস্তায় কিছু আম, বেগুন, কচুর ডগা ও ডাটা শাক সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তিনি। টার্মিনালে নামার আগেই লঞ্চের ডেকে হলুদ জামা পরা একদল কুলি ইমরান ও তার সঙ্গে আসা সবাইকে ঘিরে ধরেন। তাদের সঙ্গে থাকা চটের ব্যাগ, বস্তার জন্য ‘ঘাটের টাকা’ দিতে হবে বলে ১৫’শ টাকা দাবি করেন তারা। মালামাল নিজে বহন করলেও টাকা দিতে হবে। ইমরান ২০০ টাকা দিতে চাওয়ায় ব্যাগ নিয়ে টানা হেঁচড়া ও হুমকি-ধমকিও দেয় কুলিরা। সংঘবদ্ধ এই চক্র এভাবে ব্যাগ, বস্তা, লাগেজ সঙ্গে থাকা লঞ্চ যাত্রীদের টার্গেট করে এবং চাঁদাবাজি করে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সূত্র জানায়, সদরঘাট টার্মিনালে নিউ ভিশন ইকোসিটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০৪ জন কুলি বা ঘাট শ্রমিক কাজ করেন বিআইডবিøউটিএ-এর জন্য। নিউ ভিশন ইকোসিটি লিমিটেডের পরিচালক দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আওয়ামী যুবলীগের নেতা শিপু আহমেদ।

ঢাকা নদীবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, নিউ ভিশন ইকোসিটি লিমিটেডের অধীনে নেয়া ঘাট শ্রমিকদের দৈনিক ৩৬৫ টাকা ভাতা হিসেবে দেয়া হয়। চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

যাত্রী রায়হান বলেন, সদরঘাট টার্মিনালে চাঁদাবাজি ও যাত্রী হয়রানির এ দৃশ্য নিয়মিত।, অভিযোগ দিয়ে কি হবে? ঝামেলার ভয়ে অনেকে নীরবে টাকা দিয়ে চলে যান। কুলিরা বলে বন্দর কর্মকর্তারা তাদেরই লোক। ঘাট কর্তৃৃপক্ষ নাকি তাদের টাকা তোলার দায়িত্ব দিয়েছে। সেখানে আমরা কার কাছে অভিযোগ করবো?
নিউ ভিশন ইকোসিটি লিমিটেডের পরিচালক দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আওয়ামী যুবলীগ নেতা শিপু আহমেদ বলেন, সদরঘাটে আগে যে হয়রানি ছিল এখন তার ৯০ শতাংশ কমে গেছে। টুকটাক হতে পারে। কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই কঠোর ব্যবস্থা নিই।

সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায়, লঞ্চের কর্মীরা যাত্রীদের ডাকছেন। কেউবা দেখিয়ে দিচ্ছেন নির্ধারিত আসন। টিকিট সংগ্রহের বেলায়ও যাত্রীকে সহযোগিতা করছেন লঞ্চ কর্মীদের কেউ কেউ। এদিকে দুয়েকটি লঞ্চ ঘুরে দেখা গেল যে সব যাত্রী লঞ্চের সিট পাননি তারা বিছানা চাদর, পাটি বা গামছা বিছিয়ে আসন পেতেছেন। অনেকে ছাদেও আসন পেতেছেন। মাথার ওপর রোদ। কিন্তু তাতে কী? বাড়ি তো যেতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদাবাজি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ