Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার বিএনপি ধ্বংসের গভীর চক্রান্তে লিপ্ত
খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে
সাফাদির সাথে বৈঠক সম্পর্কে জয়কে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগে করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই’ বলে সকলকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব। গতকাল রোববার বিকালে এক আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব এই অভিযোগ ও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আজকে একের পর এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা কোনো দিন সম্ভব হবে না। দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে সকলকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে তারা (আওয়ামী লীগ) বিনষ্ট করে দিয়েছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠান একে একে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ বাংলাদেশ একটি অগণতান্ত্রিক, বদ্ধ শ্বাসরুদ্ধকারী একটি দেশে পরিণত হয়েছে। শুধু এই কথাটা বলতে চাই, এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দেশনেত্রী ইতোমধ্যে আমাদের আহ্বান জানিয়েছেন, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমিক সকল মানুষকে এক হয়ে, এদেশের ফ্যাসিস্ট অগণতান্ত্রিক সরকার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে, তাদের সরানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা করে বিএনপি
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যের হাতে জিয়াউর রহমান নিহত হন।
দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অতিথি সারিতে বসে আলোচনা শুনেন। তার সঙ্গে পাশে ছিলেন বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ব্যারিস্টার শাহজাগান ওমর, এ এস এম আবদুল হালিম, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম, শামা ওবায়েদ, নাজিমউদ্দিন আলম, কবীর মুরাদ, শাহ আবু জাফর, অঙ্গসংগঠনের এম এ তাহের, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আনোয়ার হোসেইন, হাফেজ আবুল মালেক, শাহ নেসারুল হক, নুরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসানসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের নেত্রীকে একরকম মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত যে দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে তারা দেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজকে তারা আবার গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে তারা একইভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়।
বিএনপির বিরুদ্ধে ইজরায়েল নিয়ে অপপ্রচার চালানো সরকারের অপতৎপরতার কঠোর সমালোচনা করেন ফখরুল ইসলাম। তিনদিন আগে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে মিটিংয়ের ভিডিও ক্লিপ বেরুনো পর, সেই লোকই (মেন্দি এন সাফাদি) নিজেই যখন বলছেন মিটিং হয়েছে, তখন বলা হচ্ছে এটা নাকি সাজানো নাটক। তোমাদেরটা সাজানো নাটক আর আমাদের আসল নাকি রাষ্ট্রদ্রোহ। জয়কে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান, আমাদের দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে কেন আটকিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের নির্যাতন করা হচ্ছেÑএর জবাবও সরকারকে একদিন দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চার বছর রাষ্ট্রপতি থাকাকালে জিয়াউর রহমান এমন কোনো ক্ষেত্রে নেই যেখানে তার স্পর্শ লাগেনি। তিনি দেশের মানুষের কাছে ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি ও নেতা। এদেশের জনগন বিএনপির আর্দশ, দর্শন, শহীদ জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেজন্য যখনই জনগন সুযোগ পেয়েছে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আজকের সরকারের মতো জোর করে বিএনপি কখনো ক্ষমতায় বসেনি।
এখন যখন সরকার দেখছে, হামলা-মামলা দিয়ে বিএনপি বিভক্ত করা যাচ্ছে না, তার জনপ্রিয়তা রুখা যাচ্ছে না, তখনই পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালিয়ে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করতে চায়। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন-এটা ঐতিহাসিক সত্য। আজকে এতো নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, জেল-জুলুম, হত্যা-খুন হচ্ছে, কই আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন নেতা তো শহীদ জিয়ার আর্দশ ছেড়ে আওয়ামী লীগ যায়নি। এখনো আমরা টিকে আছি। তাই নেতা-কর্মীদের বলব, হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
বিএনপির কাছে আজকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, শহীদ জিয়া দেশে যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তা আজ হারিয়ে গেছে। সেই গণতন্ত্র আজকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু বর্তমান ভূ-প্রেক্ষাপটে এটা সম্ভব নয়। সেজন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে আরো ব্যাপক করতে হবে। একে সফল করার জন্য সব দেশপ্রেমিক শক্তি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ সকল মানুষকে নিয়ে আমাদেরকে নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান ঢালী বক্তব্য রাখেন। এর আগে পবিত্র কোরআনখানি তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আলোচনা সভায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ওপর কবি আল মাহমুদের লেখা কবিতা ‘ডানাওয়ালা মানুষ’ আবৃত্তি করেন অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমীন সীমা ইসলাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ