পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা :প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবনের অবস্থা কাহিল। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক সুন্দরবন বুক পেতে দুর্যোগের পর দুর্যোগের ধাক্কা সামাল দিতে দিতে একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অথচ সুন্দরবনের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয় না। সুন্দরবন ১৯৭০ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড় হেরিকেন থেকে শুরু করে সিডর, আইলা ও রোয়ানুসহ ছোট বড় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছে বিশাল এলাকার উপকূলীয় জনপদকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় প্রতিবছর একাধিকবার সমুদ্র উত্তাল হয়ে বড় ধরনের ধাক্কা দিচ্ছে। অতীতের রেকর্ড পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, মানবসৃষ্ট দুর্যোগ যেমন সুন্দরী, গেওয়া, শাল, কেওড়া, বাইন, কাকড়া, পশুর, ধন্দুল ও গোলপাতাসহ উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গ্রীন বেল্ট উজাড়, বনে ঘন ঘন আগুন লাগা, প্রতিবাদ সত্ত্বেও রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, নৌরুটের শব্দ দূষণে জলজ ও বনজ প্রাণীসহ জীব-বৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি, বাস্তবে গত ৩০ বছরে নতুন বনায়ন না করা এবং সুন্দরবন থেকে নেয়া ছাড়া দেয়ার বিষয় দৃশ্যমান না হওয়ায় পৃথিবীর অনন্য সম্পদ সুন্দরবনের বনভূমি বিপদের সন্মুখীন। উদ্ভিদ জীব-বৈচিত্র্য, পরিবেশ ও উপকূলীয় অঞ্চল চরম হুমকিতে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমুদ্রের পানির উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘন ঘন ছোট-বড় সাইক্লোন, নদ-নদীতে পলি জমে সিলটেশন হওয়া, জলবায়ুর পরিবর্তন ও গাছপালা মারা যাবার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবন বিপর্যস্ত। এর থেকে উত্তরণের পথ কি তাও খুঁজে দেখা হয় না কখনো। সূত্রমতে, আসলেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বনসম্পদের বিরাট ক্ষতি হয়। প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা পূরণ হলেও মাস্টার প্লান করে সুন্দরবনকে রক্ষার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। সুন্দরবন রক্ষা কমিটি ও তেল গ্যাস জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটি জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে সুন্দরবন রক্ষার জন্য। কিন্তু কোন ফল হচ্ছে না। একের পর এক ধাক্কা সামলাতে সামলাতে সুন্দরবনকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা মূল্যবান গাছ পরিচর্যার কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে সুন্দরবন থেকে। গাছ কাটা, মাছ ধরা ও মধু আহরণসহ সুন্দরবনকে ঘিরে অসংখ্য উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। অযতœ ও অবহেলায় সুন্দরবন টিকে আছে। বারবার ভয়াল প্রাকৃতিক থাবায় হাজার হাজার উপকূলবাসীকে পথে বসাচ্ছে। বিধ্বস্ত করছে উপকূলের গ্রাম-জনপদ। গোটা সুন্দরবন ধ্বংসের একমাত্র কারণ বন বিভাগের লাগামহীন দুর্নীতি।
সূত্রমতে, বর্তমান অবস্থায় সুন্দরবনের আশপাশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত। বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল হয়। বিশাল সুন্দরবন এলাকায় জনবল সংকট, নড়বড়ে জলযান ও ভাঙ্গাচুরা ওয়্যারলেস সেটসহ নানা অবহেলাও আছে। অনেকক্ষেত্রে সুন্দরবন ‘লুটপাটের খনি’ হিসেবে অনেকের আশীর্বাদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এমন কথাও রয়েছে। সামদ্রিক মৎস্যসম্পদের আবাসস্থলও ক্ষতি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনে। উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ পোল্ডার, ভেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচেপড়া সমুদ্রের লোনা পানিতে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সুন্দরবনের শুঁটকির গন্ধের সাথে মাঝেমধ্যেই লাশের গন্ধে একাকার হচ্ছে। মুহূর্তে থেমে যায় জীবনযাত্রা। ঘটে মানবিক বিপর্যয়। তাই বন, পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞ এবং আবহাওয়াবিদগণের অভিমত, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে উত্তরণ ও সুন্দরবন রক্ষার উপায় খুঁজতে হবে।
সুন্দরবনের নদী রায়মঙ্গল ও আড়পাঙ্গাসিয়াসহ ছোট-বড় দেড় সহ্রসাধিক খাল ও নালা রয়েছে। যা কখনোই সংস্কার কিংবা খনন করা হয় না। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা সুন্দরবনকে বাঁচানোর কোন পরিকল্পনা নেই। দেশের নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ার স্বাভাবিক ধারা হয়েছে অস্বাভাবিক। স্রোতহীন নদীর পানি একরকম চুইয়ে পড়ার মতো অবস্থার কারণে লবণাক্ততা গ্রাস করছে। ভূমি গঠনেরও পরিবর্তন ঘটছে। বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত সুন্দরবনের নদ-নদীর পানির প্রবল তোড় কমে গেছে। স্রোতহীন নদ-নদীর কারণে সমুদ্র উত্তপ্ত হচ্ছে। পদ্মা ও তার শাখা নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। সবমিলিয়ে মেরুদ- ও দেহ নিস্তেজ হয়ে গেছে সুন্দরবনের। এর থেকে উত্তরণের পথ দেখা যাচ্ছে না। অথচ সুন্দরবনকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত সুন্দরবন। ভারতের ২৪ পরগনার দক্ষিণ ভাগও সুন্দরবন। পশ্চিমে ভাগীরথি নদীর মোহনা থেকে পূর্বে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত সুন্দরবন বিস্তৃত। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সুন্দরবনের ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ভূ-ভাগ আর ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জলভাগ। সমুদ্রের পানির উচ্চতাবৃদ্ধির ফলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ক্রমাগতভাবে ডুবে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, সাপ, শুকর, বানর, কাঠবিড়ালি, বাজপাখি ও শকুনসহ বিভিন্ন পশু-পাখির বিলুপ্তির পথে। সবচেয়ে যে বিষয়টি মহাবিপদ ডেকে আনছে তা হচ্ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুমন্ডলে নিঃসরণ কমাতে যে গাছ প্রধান ভূমিকা পালন করে সেই গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত ও গাছ সাবাড় করাসহ নানা কারণে কমে গেছে সুন্দরবন থেকে। ফলে সুন্দরবন ক্রমাগতভাবে ধ্বংস হচ্ছে। যেভাবেই উপায় খুঁজে বের করে একে রক্ষা করতে হবে বৃহত্তর স্বার্থে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।