পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওঁলাদ ফ্রান্সের ভার্দুনে বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছেন। এ প্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়টাতে ফিরে তাকিয়েছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডি ডব্লিউ। ভার্দুনের যুদ্ধে ৩০০ দিন ধরে কা-জ্ঞানহীন গণহত্যা চলেছিল। আর সে যুদ্ধে কেউ জয়ী হয়নি।
১৯১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা কামান গর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল অপারেশন জাজমেন্ট। বিভিন্ন ক্যালিবারের জার্মান অস্ত্রগুলো একটানা নয় ঘণ্টা ধরে আগুন উগরে চলে। বিশ্ব আগে এ রকম ঘটনা দেখেনি। ১২০ মাইল দূর থেকেও ভার্দুনের কামান গর্জন শোনা যাচ্ছিল। জার্মান লেখক আর্নস্ট জুংগার একে ‘ইস্পাতের ঝড়’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। এ সময় ইউরোপের যুদ্ধের দেড় বছর চলছিল। তবে ভার্দুনের লড়াই শেষ পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতীকে পরিণত হয়। যুদ্ধের ৩শ’ দিনে ফরাসিরা ১ লাখ ৬২ হাজার ও জার্মানরা ১ লাখ ৪৩ হাজার সৈন্য হারিয়েছিল। জার্মান পক্ষে প্রতিদিন ৫শ’ সৈন্য ও ফরাসি পক্ষে প্রতিদিন তারও বেশিসংখ্যক সৈন্য নিহত হয়। আগেকার যুদ্ধে সৈন্যদের রণক্ষেত্রে পড়ে যেভাবে মৃত্যু হতো এ সৈন্যদের মৃত্যু সেভাবে হয়নি। তারা মারা যায় টুকরো টুকরো হয়ে, উড়ে গিয়ে বা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে।
পাহাড়ি এলাকায় চারদিকে মিউজ নদীবেষ্টিত ভার্দুন ছিল ফরাসিদের কাছে সামরিক কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক হারফ্রিড মুংকলার বলেন, লোরেইন অঞ্চলে অবস্থিত শহরটি ছিল ফরাসি-জার্মান যুদ্ধের একটি প্রতীক। মধ্যযুগে এখানেই ক্যারোলিংগিয়ান সা¤্রাজ্য তিন ভাগে বিভক্ত হয় যা থেকে পূর্ব ও পশ্চিম ফ্রান্সের উদ্ভব ঘটে। ফরাসিদের জন্য এ জায়গার মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব বিরাট। তাই কোনো অবস্থাতেই তারা ভার্দুনকে শত্রুর হাতে পড়তে দিতে রাজি ছিল না।
সামরিক বিশেষজ্ঞ ও ঐতিহাসিকরা ব্যাপকভাবে একমত যে, জার্মানরা যদি আসলেই ২৫০ কি. মি. দূরবর্তী প্যারিসের দিকে অগ্রাভিযান করতে আগ্রহী হতো তাহলে ভার্দুনকে তাদের আক্রমণ শুরুর স্থান হিসেবে বেছে নেয়া ভার্দুন সঠিক স্থান ছিল না। জার্মান সুপ্রিম কমান্ডার এরিখ ভন ফকেনহাইন কোনো সাফল্য বা ঘেরাও ও দখল অভিযান চাইছিলেন না। ভার্দুন ছিল একটি ব্লাড পাম্প যা ফ্রান্সের রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছিল।
ভার্দুন প্রতিরোধকারী ফরাসি জেনারেল ফিলিপ পেতাঁ ভন ফকেনহাইনের পরিকল্পনা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি ফ্রান্সকে ধ্বংসের জার্মান লক্ষ্য মোকাবেলা করতে চালাকির কৌশল গ্রহণ করেন। কার্যত তিনি গোটা জাতিকে যুদ্ধে নিয়োজিত করেন। শতকরা ৭০ ভাগ সৈন্যকে তিনি ভার্দুনের কাছে ট্রেঞ্চে কমপক্ষে একবার ৮ থেকে ১০ দিন যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। বিশেষ করে ১৯১৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুনের মধ্যে প্রায় প্রতিটি ফরাসি পরিবারের একজন সদস্য যুদ্ধে অংশ নেয়। সে সময় সেনাবাহিনীর বড় অংশকেই ওই এলাকায় যুদ্ধের জন্য জড়ো করা হয়েছিল।
যুদ্ধে ছোট ছোট অভিযান ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে জেনারেল ভন ফকেনহাইন কঠোর প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানের নির্দেশ দেন। বিশেষ করে সোমি ফ্রন্টসহ বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন থেকে জার্মান সৈন্যদের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল। অক্টোবর নাগাদ ফরাসিরা অগ্রাভিযান শুরু করে। ডিসেম্বর নাগাদ তারা তাদের হারানো প্রায় সকল এলাকা পুনরুদ্ধার করে।
সামরিক হিসাব অনুযায়ী ভার্দুনের যুদ্ধকালে ১২ বর্গমাইলেরও কম এলাকায় মোট ১.৩৫ টন ওজনের প্রায় ১০ লাখ ইস্পাতের গোলা নিক্ষিপ্ত হয়। এসব নিক্ষেপের সময়কার আওয়াজে আশপাশের এলাকার অনেকেই বধির হয়ে যায়। ভয়ংকর দুর্গন্ধ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়। ভার্দুনের যুদ্ধ ছিল মহাদেশব্যাপী যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ।
সামরিক ঐতিহাসিক জার্মান ওয়ারদি লিখেছেন, ভার্দুনের যুদ্ধ মারনির ‘ওয়ার অব মুভমেন্ট’-এর মতো ছিল না। মিউজ অঞ্চলের যুদ্ধ ছিল উত্তেজনাহীন ও একঘেয়ে, যা হয়ে উঠেছিল ৪ বছরের পরিখা যুদ্ধে গতানুগতিক মৃত্যুর প্রতীক।
ঐ এলাকার ভূ-দৃশ্য চার দশক ধরে দূষিত ছিল। বহু এলাকা ‘জোন রুজ’ বা নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণা করা হয়। মানুষের মৃত্যু ও সমরোপকরণের যথেচ্ছ ব্যবহার ওই এলাকাকে অগম্য করে রাখে। কোনো সেনাবাহিনীই ৪ কিলোমিটারের বেশি অগ্রসর হতে পারেনি।
ঐ এলাকার সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী বিষয় হলো হত্যাযজ্ঞের অসংখ্য স্মৃতিস্তম্ভ। সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভার্দুনের সবচেয়ে কাছের উত্তরাঞ্চলীয় দুর্গের সামনে দুয়ামন্তের অসুয়ারিতে ১৯২৭ সালে এর উদ্বোধন করা হয়। এ গণসমাধির প্রধান টাওয়ার হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার অজানা ফরাসি ও জার্মান সৈন্যের মিশ্র দেহাবশেষের স্মারক। এমনকি আজো এ অঞ্চলের বাগান, মাঠ ও বনে পাওয়া মানুষের হাড় অসুয়ারিতে এনে কবরস্থ করা হয়।
ফরাসিরা প্রতিরক্ষামূলক বিজয় ঘোষণার চেষ্টা করেছিল। তারা গান গাইতÑ ‘ভার্দুন! অন নি পাসে পাস!’ (ভার্দুন! তারা অতিক্রম করতে পারবে না)। অন্যদিকে জার্মানিতে এ যুদ্ধ ছিল নিস্ফলতার সমার্থক। তা সত্ত্বেও এ বিপর্যয়কে গৌরবান্বিত করার চেষ্টা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধক্ষেত্রগুলোকে অবিস্মরণীয় ভূদৃশ্যপট করে তোলা হয়েছে। সূত্র ডি ডব্লিউ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।