পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লাইলাতুল কদর নামের সাথে পরিচিত নয়, এমন মুসলামন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারণ, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা এই নামের সাথে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।
লাইলাতুল কদরের অর্থ ও মর্ম : লাইলাতুল কদর অর্থ কী? লাইলাতুল কদর বলতে কী বুঝায়? এ প্রসঙ্গে আল্লামা বদরউদ্দীন আইনী রহ. বলেছেন, লাইলাতুল কদর বলতে এমন রাত বুঝায় যাতে যাবতীয় কর্মকান্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এর চূড়ান্ত রূপ দান করা হয় এবং এক বছরের জন্য মহান আল্লাহ পাক এই রাতে সকল বিধান ও মর্যাদার ফয়সালা নিষ্পন্ন করেন।
এ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরী রহ. বলেছেন, এই রাতটি নিজস্ব মাহাত্ম্য, উচ্চ মান-মর্যাদা এবং মাহাত্ম্যের জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল কদর। আবু বকর আল ওয়াররাক রহ. বলেছেন, এই রাতের নাম কদর রাত রাখা হয়েছে এ জন্য যে, যে ব্যক্তি মান-মর্যাদাসম্পন্ন নয় সে যদি যথাসময়ে এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহ পাকের ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হয় তাহলে সেও সম্মান ও মর্যাদাবান হয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এই নামকরণের কারণ হলো এই রাতে মুমিন-মুসলমানগণ যেসব নেক আমল করেন আল্লাহ পাকের কাছে তা গৃহীত হওয়ার কারণে তারা সমধিক মূল্য ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ পাকের মর্যাদাবান কিতাব আল কোরআন এই রাতে নাজিল হয়েছে বিধায় এই রাতের নামকরণ করা হয়েছে কদর রাত। সাহল ইবনে আব্দুল্লাহ রহ. বলেছেন, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই রাতে মুমিন বান্দাদের প্রতি রহমত ও মাগফেরাত বর্ষণের পরিমাণ নির্ধারণ করেন এবং এই রাতে আল্লাহ পরবর্তী এক বছরের নিয়ম বিধানের চ‚ড়ান্ত ব্যবস্থা করেন বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে কদর রাত।
কদর রাত কবে? এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় তারিখের রাতগুলোতে কদর রাত সন্ধান করো। -সহিহ বুখারী। এ হাদিসে কদর রাত খুঁজে বের করার কথা বলা হয়েছে। এতে দু’টি দিকনির্দেশনা লাভ করা যায়। একটি হলো এই রাতটি রমজান মাসের শেষ দশকের কোনো একটি রাত হবে। আর দ্বিতীয়টি হলো রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো একটি রাত হবে। শেষ দশকের বেজোড় রাত বলতে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখের রাত বুঝায়। সুতরাং এই রাতগুলোর কোনো একটি রাত কদর রাত হবে। সুতরাং কদর রাত পাওয়ার আশায় মুমিন মুসলমানদেরকে উল্লিখিত পাঁচটি বেজোড় রাতে এবাদত-বন্দেগি বেশি বেশি করা।
সূরাতুল কদর : লাইলাতুল কদর-এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বিবৃত করে আল কোরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাজিল হয়েছে। কোরআনুল কারিমের ৯৭তম সূরা হচ্ছে সূরাতুল কদর। এই সূরায় মোট পাঁচটি আয়াত আছে এবং একটি রুকু আছে। এই সূরাটি নাজিল হয়েছে মক্কায়। সূরায় ৩১টি শব্দ রয়েছে এবং এর অক্ষর সংখ্যা ১১৬।
সূরাটির বাংলা অনুবাদ : ‘দয়াময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। ১. আমি ইহা (আল কোরআন) এক মহিমান্বিত রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। (অর্থাৎ কদরের রাতে আল কোরআনকে লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আকাশের বাইতুল ইজ্জতে নাজিল করা হয়)। ২. আর (হে মুহাম্মদ সা.), তুমি কি জানো মহিমান্বিত রজনী কী? ৩. মহিমান্বিত রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ৪. সে রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাইল ফেরেশতা প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। ৫. সেই রজনী শান্তিই শান্তি, ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’
এই সূরায় সুস্পষ্টভাবে তিনটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রথমত, কদর রাত হাজার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কোনো বান্দাহ একনাগাড়ে হাজার মাস এবাদত-বন্দেগি করলে যে পরিমাণ সওয়াব লাভের অধিকারী হয়, শুধু কদর রাতের এবাদতে একজন বান্দা সে পরিমাণ সওয়াব লাভে কৃতার্থ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এই রাতে জিবরাইল ফেরেশতা ও তার সহযোগী রহমতের ফেরেশতাগণ আল্লাহ পাকের নির্দেশক্রমে প্রত্যেক কাজ সম্পন্ন করার জন্য অবতীর্ণ হয়। তৃতীয়ত, এই রাতে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত এবাদতগুজার বান্দাদের প্রতি ও অন্যান্য সৃষ্টিকুলের প্রতি শান্তি ও স্বস্তি ও নিরাপত্তামূলক রহমত অবিরত ধারায় বর্ষিত হতে থাকে। অতএব, এমন একটি মর্যাদাবান ও মহিমান্বিত রজনীকে হেলায় উপেক্ষা করা মোটেই সমীচীন নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।