Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সেলস গার্ল থেকে মুখ্যমন্ত্রী

ইসলামের ইতিহাসে এমএ পাস করেন মমতা

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সনাতন ধর্মাবলম্বী, অথচ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে লেখাপড়া করেছেন ইসলামের ইতিহাসে। ইতিহাসে বিএ পাস করলেও এমএ পাস করেন ইসলামের ইতিহাসে। রাজনীতিতে আসার আগে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন, করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা। কখনো টিউশনি এমনকি দোকানে সেলস গার্লের কাজও করেছেন। লিখেছেন বহু কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ, এমনকি উপন্যাসও। চিত্রশিল্পী হিসেবে ছবিও আঁকেন। তার আঁকা ছবি বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকার পুরোটাই তিনি জমা দেন দলের ফান্ডে। এতক্ষণ যার সম্পর্কে বলা হলো তার নাম মমতা ব্যানার্জি। দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। অটল বিহারী বাজপায়ী সরকারের শাসনামলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রেলমন্ত্রী ছিলেন। রেল হলো ভারতের সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয়ের অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গের ভোটযুদ্ধে এবার তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেস-বাম দলের সমন্বয়ে জোট করলেও মমতা-ঝড়ে সবকিছু উড়ে যায়। নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর মমতাকে নিয়ে ভারতজুড়ে পড়ে যায় হৈচৈ। সেই হৈচৈ এ মিডিয়াগুলোতে তাকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হওয়ায় তার কর্মময় জীবনের আদ্যোপান্ত বের হয়ে আসে।
দিদি হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত মমতা ব্যানার্জির নামের পাশে কখনো ‘জননেত্রী’, কখনো ‘অগ্নিকন্যা’ বিশেষণ বসানো হয়। সাধাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত মমতা এখনো পড়েন তাঁতের সাদা শাড়ি। আর দশটা উচ্চশিক্ষিত নারীর মতো বিলাসিতা, প্রসাধন নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই শুধু নন, ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজনীতিক হওয়ার পরও দক্ষিণ কলকাতার ঘিঞ্জি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে টালির বাড়িতে থাকেন মমতা ব্যানার্জি। এখনো অল্প বৃষ্টি হলেই তার বাড়ির সামনে চলাফেরার পথে জমে যায় পানি। তখন মমতা বাড়ির সামনে পাতা ইটের ওপর পা রেখে হেঁটে বড় রাস্তায় গিয়ে গাড়িতে ওঠেন।
প্রভাবশালী এবং ব্যাপক জনপ্রিয় নেত্রী হওয়ার পরও মমতা সাধারণ খাবার খান, সাধারণভাবে চলাফেরা করেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়ে সব সময় থাকেন মার্জিত। শত শত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরা তিনি পছন্দ করেন না। জনগণের নেত্রী, তাই জনগণের সঙ্গেই চলাফেরা করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তৃণমূল দলের প্রধান মমতার শাসনামলে দলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে ‘মহা মহা’ দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তার পরিবার-আত্মীয়-স্বজনদের তিনি কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দেন না। এমনকি পরিবারের কাউকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাননি। ব্যক্তিজীবনে তৈলাক্ত খাবার বা ভাজাভুজি খেতে বিশেষ পছন্দ করেন না। তিনি ভাত-রুটির পাশাপাশি খেতে পছন্দ করেন মুড়ি, চা ও চকোলেট। ঘনিষ্ঠ মহলে হালকা মেজাজে আড্ডা দিতে বসলে মুড়ির সঙ্গে আলুর চপ খেতে ভালবাসেন। দামি খাবার মুখে তোলেন না।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দল পরিচালনা এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল তৃণমূল পরিচালনা করলেও তিনি প্রতিদিন ট্রেডমিলে অন্তত ৫-৬ কিলোমিটার হাঁটেন। রাজ্যের বিধান সভায় অধিবেশন চলাকালে বিধানসভার লম্বা করিডোর ধরে সহকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে হাঁটেন। গল্প করতে করতে একসঙ্গে ১০ কিলোমিটারও হাঁটলেও ক্লান্তিবোধ করেন না। একরঙা পাড়ের সাদা তাঁতের শাড়ি পরতে ভালবাসেন মমতা ব্যানার্জি। এই ধরনের শাড়ি তৈরির জন্য জনপ্রিয় হুগলির ধনেখালি। সেখান থেকেই শাড়ি কিনে নেন।
মমতা ব্যানার্জির বিশেষ পছন্দ প্রকৃতি। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই দার্জিলিংয়ের পাহাড় বা মেদিনীপুরের জঙ্গলে ছুটে যান। নিজেই ক্যামেরা দিয়ে নেচারের ছবি তোলেন। ফটোগ্রাফি নাকি তার শখ। প্রকৃতিপ্রেমী হওয়ায় তিনি কলকাতার সেন্ট্রাল পার্কের সৌন্দর্যায়ন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি গান শুনতে ভালোবাসেন। সময় পেলেই শোনেন রবীন্দ্রসঙ্গীত, পাঠ করেন নজরুলের কবিতা। বীরভূমে মমতার মামার বাড়ি। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে মামার বাড়ি গেলেই সেখানকার ধানক্ষেতে খেলা করতেন। এখনো ছোটবেলার সেই খেলাধুলার স্মৃতি সহকর্মীদের কাছে রোমন্থন করেন পশ্চিম বাংলার এই মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা সহকর্মীদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। কেউ উপকার করলে ভোলেন না। উপকারের প্রতিদান দিতে চেষ্টা করেন। যুব কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল দল গঠনের প্রাক্কালে দুঃসময়ে যারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের কখনও ভোলেন না মমতা। মমতার রাজনৈতিক কেরিয়ারে সাবেক কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ ভূমিকা ছিল। সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় এখন পূর্ণমন্ত্রী।
আটপৌরে ব্যস্ত সময়ে কাটানোয় কার্যত দৌড়ের ওপর থাকতে হয়। তারপরও মমতা মুখে মুখে ছড়া তৈরি করেন; সহকর্মীদের উৎসাহ দেন। বিভিন্ন জনসভায় কোনো রকম স্ক্রিপ্ট ছাড়াই বিরোধীদের (বামপন্থী) নিশানা করে দুই-চার লাইনের ছড়া কাটেন মমতা। সেই ছড়া শুনে প্রশংসা আর হাততালিতে ভরিয়ে দেয় উপস্থিত জনতা। সংস্কৃতিমনা মমতার বাংলার লোকশিল্পের প্রতি আন্তরিক অনুরাগ রয়েছে। মমতা প্রকৃত অর্থেই একজন জননেত্রী। ফেসবুকে তার কোটি কোটি ফ্রেন্ড। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যান। ফেসবুকে লাইভ চ্যাট করেন, নিয়মিত টুইট করেন। বিধানসভা নির্বাচনের সময় তিনি ফেসবুক ৩৬০ টুল ব্যবহার করেছেন। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় দফায় শপথ গ্রহণ করেন।



 

Show all comments
  • অমল ঘোষ ৩১ জুলাই, ২০১৭, ৩:০৬ পিএম says : 0
    খুব ভাল একটি জীবনী পাঠ করে আনন্দ উপভোগ করলাম আরো লিখুন।উনার সম্পর্কে।
    Total Reply(0) Reply
  • উম্মে রাবেয়া কাইয়ুম ইতি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৯:২৮ এএম says : 0
    অনেক অনেক ভাল লাগল পড়ে। এই যুগে এইরকম নেত্রি দেখে অনেক ভাল লেগেছে। এত ক্ষমতা থাকা সত্তেও কি সাদামাটা জীবন যাপন করেন। অনেক অনেক ভাল লেগেছে। সত্যি ই তিনি যোগ্য নেত্রি। নেত্রি এমন ই হওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেলস গার্ল থেকে মুখ্যমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ