পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : রানী পছন্দ আর গোপাল ভোগের আগমনের মধ্য দিয়ে আমের রাজ্য রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হলো বনেদী যাত্রা। যদিও এর রেশ কিছুদিন আগে আমরসিকদের রসনা মিটিয়েছে নানা জাতের গুটি আম। আর কাঁচা আম তো সেই মধ্য বৈশাখ থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে ডাল-মাছের সাথে, কিংবা টক হিসাবে। কাঁচা আমের জুসও গরমে তৃপ্তি এনেছে। এরপর যাত্রা শুরু হলো রসালো-শাসালো আমের। প্রশাসন থেকে আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয়ায় এতদিন আসি আসি করেও আসতে পারেনি। বনেদী জাতের আম গোপাল রানী পছন্দসহ বেশ কিছু আমের আসার সময় শুরুর সময় ছিল ২৫ মে। দিন পার হবার সাথে সাথে বাজারে চলে আসতে শুরু করেছে। আম বিক্রির অস্থায়ী হাটবাজারগুলো জমজমাট হয়ে উঠতে শুরু করেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমনে। কুরিয়ার সার্ভিসের বড় বড় কার্গোভ্যান পেট বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে আম-লিচু। বাজারে বোম্বাই চায়না-৩ জাতের লিচুও এসেছে। লিচু ক্ষণিকের অতিথির মতো। ক’দিনের মধ্যে আর দেখা যাবে না। আবার বোঁটায় পোকা ধরবে। বিষমুক্ত আর ফরমালিনমুক্ত রসালো ও পরিপক্ব আম বাজারজাতকরণের জন্য এবারো প্রশাসন আম চাষীদের সময় বেঁধে দিয়েছিল। সে সূচি অনুযায়ী ২৫ মে থেকে গোপাল ভোগ ও রানী পছন্দসহ গুটি জাতের আম। পহেলা জুন হিমসাগর, ক্ষীরসাপাতি, লখনা। ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও বোম্বাই। ২৫ জুন থেকে আমের রাজা ফজলী ও পহেলা জুলাই আ¤্রপালী ও ১৫ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম বাজারজাত করার কথা। নির্দিষ্ট সময়ে আম বাজারজাত করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন আমচাষী আম ফাউন্ডেশনসহ বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। নজরদারী চলছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে কেউ কেউ বাজারজাত করতে গিয়ে ধরাও খেয়েছে। প্রশাসনের বক্তব্য হলো আমরা আমের ঐতিহ্য রক্ষা করতে চাই। সারা দেশের মানুষ চেয়ে থাকে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের আমের রসালো স্বাদ নেবার জন্য। পরিপক্ব ও বিষমুক্ত আম ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এমন ব্যবস্থা। তাছাড়া এখন যাতে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম পাকাতে না পারে সেজন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড, পিজিআর, ফরমালিন বিক্রির ওপর কঠোর নজরদারী রাখা হচ্ছে। আম বাজারজাতকরণের সময় শুরু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, শিবগঞ্জ, ভোলাহাটের আম ফাউন্ডেশন, সদরঘাট, মল্লিকপুর, রহনপুর আমবাজার আর অড়তগুলো চলে এসেছে। আড়তগুলো আগে থেকে প্রস্তুত ছিল। সময় শুরু হওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আম পাড়া বহন টুকরি করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত মানুষ। আম বিক্রির স্থানগুলোয় আশেপাশের হোটেলগুলো বছরের এ সময়টাতে সরগরম হয়ে ওঠে। এবারো তেমনটি হয়ে উঠেছে।
রাজশাহী নগরীর বাজারেও চলে এসেছে আম। এখন আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে আম আসছে। বানেশ্বর বাজার আমের একটা বড় মোকাম সেখানে ব্যস্ততা নজরে পড়ার মত। আমগাছি চারঘাট, বাঘা বাজারেও আম বাণিজ্য শুরু হয়েছে। আম বাগানের বিস্তৃতি ঘটায় ধানপ্রধান এলাকা নওগাঁয় আমের বাজার ভাল। নগরীতে সেই সকাল থেকে মহল্লায় মহল্লায় ‘আম নিবেন গো আম’ এমন হাঁক ডাক ছেড়ে ছুটছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। ক’দিন ধরে ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা আমেও বাজার ভরা। আচারের জন্য এসব আম বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে দশ থেকে কুড়ি টাকা কেজি দরে। গৃহিণীরা ব্যস্ত এসব আম দিয়ে আচার আর আমচুর বানাতে, যাতে করে সারা বছর আমের স্বাদ পাওয়া যায়। আমের বাজার জমজমাটভাবে শুরু হলেও দামের আঁচটা বেশ চড়া। শুরুতে প্রকারভেদে মণপ্রতি আম বিক্রি হচ্ছে ছাব্বিশ শ টাকা দরে। তাই বলে বিক্রির কমতি নেই। অন্য জাতের আমগুলো বাজারে আসা শুরু হলে বাজার আরো জমজমাট হবে। তখন দাম কিছুটা কমবে এমন প্রত্যাশা ক্রেতাদের। তবে আমচাষীরা বলছেন, দাম কমার সম্ভাবনা নেই বরং বাড়বে। এবার আমের ফলন গতবারের চেয়ে কম। যদিও শুরুতে গাছ ভরে ফুল এলেও পরবর্তীতে মেঘলা আবহাওয়া ও ঠিকমত পরাগায়ণ না হবার কারণে গুটি ধরেছে কম। এরপর শুরুতে শিলাবৃষ্টি আর পরবর্তীতে তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়েছে আমের উপর। আবার এখন ঝড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তাছাড়া আগে প্রায় সব জাতের আম বাজারে আসায় সরবরাহ বেশী থাকত। ফলে দামও কম হতো। এখন সময় বেঁধে পর্যায়ক্রমে আম বাজারজাত করায় সরবরাহ কম হচ্ছে। ফলে দাম কমছে না। এতে করে ব্যাপারীরা বেশী লাভবান হবে। অনেকের হয়তো পরখ করে দেখা হবে না আমের স্বাদ। কাঁচা আম দিয়ে রসনা মেটাতে হবে। আম পাড়ার সময় এবার গত বছরের চেয়ে সাত দিন এগিয়ে আনা হলেও চাষীরা খুব একটা খুশী নয়। তাদের বক্তব্য হলো সময় বেঁধে আম পাড়ার বিষয়টা যুক্তিযুক্ত নয়। গাছের আমে একটু হলুদ ভাব এলে বুঝতে হয় পাকার সময় হয়ে গেছে। তখন থেকে আম পাড়া চলে আসছে বহুকাল ধরে। আর এখন সময় বাধার ফলে একসাথে অনেক পাকা আম বাজারে চলে আসছে। ফলে ক্রেতার অভাবে আম পচে যাবার সম্ভাবনা থাকছে। বিশেষ করে আম পাড়ার পর তা দ্রুত অন্যত্র পাঠাতে গিয়ে এমনটি হবার সম্ভাবনা বেশী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।