Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের নিয়ে জাবিতে ‘আসল ছাত্রদল’!

কমিটিতে পদ পেতে চলছে জোর লবিং

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাবি সংবাদদাতা : আসল বিএনপির পর এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘আসল’ ছাত্রদলের আবির্ভাব ঘটেছে। এক সময়ে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল, তারাই এখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেতে জোর লবিং শুরু করেছে। টানা পাঁচ বছর পর জাবি শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠনের গুঞ্জন শুনে এমন অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতাকর্মীরা দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। অথচ চাঁদাবাজি-ছিনতাই, ছাত্রদল কর্মীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বিতর্কিত এই নেতাদের বিরুদ্ধে। এ সব কর্মকা-ের দায়ে সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ কেউ বহিষ্কৃতও হয়েছেন। দলের কর্মীদের দাবি ছাত্রলীগ মুক্ত জাবি ছাত্রদল চাই,  অছাত্র, অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে নিয়মিত ছাত্র ও ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দিলে ফের ঘুরে দাঁড়াবে ছাত্রদল। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরাও দাবি করেছেন, ছাত্রলীগ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিয়ে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সুযোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। এমনটাই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রত্যাশা তাদের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে শাখা ছাত্রলীগ থেকে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রদল কর্মীরা। এমন অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ছাত্রদল কর্মীদের মারধর, ছাত্রলীগের ব্যানারে হামলা-ভাঙচুর, ছিনতাই-চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে নেতৃত্বে ছিল তারা। সেই বিতর্কিত ছাত্রলীগ কর্মীরা এখন শাখা ছাত্রদলে সক্রিয়। বর্তমান শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাসহ ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রলীগ কর্মী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। এদের মধ্যে অন্যতম সোহেল রানা। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলমের হাতে রাজনীতি শুরু করেন শহীদ সালাম-বরকত হলের এই ছাত্র। পরে ওই হলে মোবাইল ফোন চুরির অপরাধে তাকে হল থেকে বের করে দিলে তিনি আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ নেতা এমিলের কাছে আশ্রয় নেন এবং নির্ঝর-এমিলের সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন।
পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৫ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ভয়াবহ সংঘর্ষে সম্পাদক গ্রুপের অনুসারী সোহেল হামলায় অংশ নেন। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রুপের পক্ষে আব্দুল মালেক বাদী হয়ে সোহেলসহ সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। সে মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল সাত নম্বর আসামী ছিল। তবুও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক পদ পান। সেই ১২ জনের মধ্যে ৬ জন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে রয়েছে। প্রকৃত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জাবি ক্যাম্পাসে না আসতে পারলেও ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করে সোহেল ক্যাম্পাসে মাঝে মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরবর্তীতে সেই বিক্ষোভ মিছিলের ছবি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে এ সব অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন সোহেল রানা। এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও পাওয়া যায়নি। আরেক ছাত্রলীগ কর্মী মুরাদ হোসেন হীরা। প্রথম বর্ষে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখে শুরু করেন ছাত্রদলের রাজনীতি। অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় ছাত্রদলের কোনো কমিটিতেই পদ পাননি তিনি। তবুও হাল ছাড়েনি এই ছাত্রলীগ কর্মী। অভিযোগের বিষয়ে হীরা বলেন, এটা ভুল তথ্য। আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে কখনো রাজনীতি করিনি।
আরেক ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম। যিনি শহীদ রফিক-জব্বার হলের আহ্বায়ক হলেও স্থানীয় (সাভার) ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ছিনতাই ও নেশাজাতীয় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার এমন বিতর্কিত কর্মকা-ে বিব্রত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। অভিযোগের বিষয়ে আশরাফুল বলেন, আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরেক ছাত্রদল কর্মী ইসরাফীল চৌধুরী সোহেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ মোবাইল ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। সম্প্রতি হেমায়েতপুরে অবৈধ জমি দখল করতে গেলে র‌্যাব তাকে আটক করে। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড় পায় এ নেতা। অভিযোগের বিষয়ে ইসরাফীল বলেন, এ সব মামালা মিথ্যা ও বানোয়াট। এ সংক্রান্ত তথ্যদি থাকলে নিউজ করতে পারেন। না থাকলে নিউজ কইরেন না।
যেমনটি ভাবছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা : বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান মনে করেন, ‘সোহেল তো ছাত্রলীগের সাথে ক্যাম্পাসে  ঘোরা ফেরা করে। সে ছাত্রদলের জন্য ডিজাস্টার (হুমকি)। ওকে সভাপতি করা হলে ত্যাগী ছাত্রদল নেতাদের বঞ্চিত করা হবে।’ নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠনের গুরুত্ব দিয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের এই নেতা আরো বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের পরামর্শ নিয়ে কমিটি গঠন করা হলে ছাত্রদলের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সুযোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। তাতে জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শামছুল আলম সেলিম বলেন, অনুপ্রবেশকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে যখন কমিটি হওয়ার আভাস শুনতে পাই, তখন আমাদের খুব খারাপ লাগে। আমরা চাই নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হোক।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ‘এদের অভিযোগগুলো আমাদের হাতে রয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কমিটি দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল জাকিরুল ইসলামকে সভাপতি ও আবু সাঈদ ভূইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে জাবি শাখা ছাত্রদলের ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের নিয়ে জাবিতে ‘আসল ছাত্রদল’!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ