Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনা-শিনজো বৈঠক - ৬শ’ কোটি ডলার দেবে জাপান

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৩০ এএম, ২৯ মে, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা
জাপান বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ৬শ’ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদানের অংশ হিসেবে এ বছর দেড়শ’ কোটি ডলার প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, ‘আমাদের সরকার বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ৬শ’ কোটি ডলার সহযোগিতা প্রদানের অংশ হিসেবে এ বছর দেড়শ’ কোটি ডলার প্রদান করবে।’ জাপানের নাগোয়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এই সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন তিন দিনের সরকারি সফরে জাপানে অবস্থান করছেন। তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র আমন্ত্রণে শিল্পোন্নত দেশসমূহের জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য জাপান আসেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইআরডি’র সিনিয়র সচিব মেজবাহউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বিফিংয়ে বলা হয়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পদ্মার পাড়ের চরজানাজাত-এ একটি অত্যাধুনিক বিমানবন্দর তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়েও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন। এছাড়া জাপান ২০১৯ সালের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করে দেয়ার বিষয়েও ত্বড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণেও নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বলেও ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়াবলি বৈঠকে আলোচিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালের জাপান সফরের পর সেই সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাক্সক্ষার সঙ্গে জাপান অতীতের মতোই সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর নাগোয়ার আবাসস্থল হোটেল হিলটনে বৈঠক হয় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে। সেখানে শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনা জানান, বন্যায় তাদের ক্ষয়ক্ষতিতে প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা দেওয়া হবে। সে নির্দেশনাও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে জানান সিরিসেনাকে।
টোকিওতে নতুন চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিওতে বাংলাদেশের নবনির্মিত চ্যান্সারি ভবনের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার জাপানের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক দিনে দিনে আরো জোরদার হবে।
তিনি বলেন, জাপান হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর অন্যতম এবং বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার। তাই, আমরা ঐতিহাসিক টোকিও নগরীর কেন্দ্রস্থলে আমাদের নিজস্ব একটি ঠিকানা পেয়ে নিঃসন্দেহে গর্বিত। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এ খবর জানায়। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭১৪ বর্গমিটার এলাকায় টোকিও’র কেন্দ্রস্থলে কিওইচো, ছিওদা-কু এলাকায় বাংলাদেশের দূতাবাসের নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা স্বাগত বক্তৃতা করেন। জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারী ফ্রেন্ডশীপ লীগের মহাসচিব ইচিরো তাসুকাদা এমপি এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা বক্তৃতা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাপান সফরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর কনিষ্ঠ বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সফরের মধ্য দিয়ে জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য শেখ রাসেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দুর্ভাগ্যের রজনীতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নৃশংসভাবে নিহত হন। শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে জাপানের অবদান বিশেষ করে আমাদেরকে সহায়তা দেয়ার জন্য টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে জাপানী শিশুদের অর্থ সংগ্রহের কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর জাপান যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। তিনি বলেন, জাপান সরকার এবং জাপানের প্রতিটি লোক আমাদের জন্য তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সম্পর্ক জোরদার রাখার লক্ষ্যে সবসময় সচেষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকা-ে জাপানের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, হোটেল সোনারগাঁও, যমুনা সেতু, রূপসা সেতু এবং পদ্মা সেতু নির্মাণে জাপানের ব্যাপক অবদান রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাপান আমাদের কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। তারা (জাপান) আমাদের মেট্রোরেল প্রকল্পসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পেও সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, কাজেই জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বকে আমরা সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং আমরা তাদের সহযোগিতার কথা কখনও ভুলে যাব না।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ’৯৬ মেয়াদে সরকার গঠনের পর থেকেই নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। নতুন ভবন নির্মাণের ফলে দূতাবাসের কাজে আরো গতিশীলতা আসবে এবং জাপানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জি-৭ বেঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই আমন্ত্রণের ফলে পুনরায় জাপান সফর করার পাশাপাশি টোকিওতে নিজস্ব দূতাবাস ভবনও উদ্বোধন করার সুযোগ হলো। ২০১০ সালে যে ভবন নির্মাণের জন্য তিনি নিজেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই এই উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। অনুষ্ঠানে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের মহাসচিব ইচিরো সুকাদা, জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা তারা দু’জনই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং আরও এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা-শিনজো বৈঠক - ৬শ’ কোটি ডলার দেবে জাপান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ