Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ম ধাপে ১০ জন নিহত

দখল-বর্জনে ৭১৭ ইউপিতে ভোট

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৪ পিএম, ২৮ মে, ২০১৬

আজিবুল হক পার্থ : ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র হামলা, পুলিশের সামনেই ভাংচুর, দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই প্রিসাইডিং অফিসার-পোলিং এজেন্টদের মারপিট করে বের দেওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫ম ধাপের ৭১৫ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট। প্রতিপক্ষের হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ শতাধিক। দেশের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রে হামলা, গুলি, ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, প্রার্থী ও তার সমর্থকদের কুপিয়ে জখম, ভোটের আগেই বাক্সে ব্যালট ভর্তিসহ ভোট কেন্দ্রে নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামলীগের নেতাকর্মীদের সাথে জাল ভোটে অংশ নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্টরাও। হামলার মুখে অর্ধশতাধিক ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছে। সহিংসতার কিছুটা আমলে নিয়ে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সারাদেশের সহিংসতার মধ্যেও ভোটে সন্তুষ্ট ইসি। কমিশন মনে করছে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। অন্য ধাপের ভোটের তুলনায় গতকালকের নির্বাচনে সংঘর্ষ বেশি হয়েছে। সারাদেশেই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এদিকে সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে অন্তত ১০ জনের প্রাণ গেছে। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনায় ঠাকুরগাঁওয়ে প্রাণ গেছে দুই ভোট কর্মকর্তার। সারাদেশে কমপক্ষে এক হাজার প্রার্থী সমর্থক আহত হয়েছে। ইসি ভোট গ্রহণ বন্ধ করেছে ৫৩টি কেন্দ্রের। তবে আরো বেশি কেন্দ্রের বন্ধ হলেও পরবর্তীতে ভোট নেওয়া হয়েছে। শতাধিক প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় বলারামপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি বিদ্রোহী) কামাল উদ্দিন প্রতিপক্ষের হামলায় টেঁটাবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কুঠিরচর এবতেদায়ি মাদরাসা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও দলটির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নুরুল ইসলাম (৬৫), জিয়াউর রহমান (৩৫), মাজেদ (১৪) ও নবীরুল (১৫) নামের চারজন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়া থানার বড় উঠান ইউনিয়নের শাহ মিরপুর কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মেম্বর প্রার্থী মো. ইয়াসিন ও রায়পুর ইউনিয়নের রুবেল নামে দুইজন নিহত হয়েছেন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কে বি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রেগুলিতে যুবলীগ কর্মী শাকিল নিহত হয়েছেন। রাজগঞ্জ ইউনিয়নের রাজগঞ্জ মাদরাসা কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্র্ষে সৈয়দ আহমেদ (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
এদিকে ৫ম ধাপেও শতাধিক প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে। এরমধ্যে বিএনপি, স্বতন্ত্র এবং সরকার দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। ব্যাপক ভোট কারচুপি, পুলিশ, প্রিসাইডিং অফিসারদের অসহযোগিতামূলক আচরণ ও কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাটাই (উত্তর) ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবুল কাশেম, তালশহর (পূর্ব) ইউনিয়নের বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম, কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমুল হাসান ও শহরের রামরাইল ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী মো. সাদেকুর রহমান ভোট বর্জন করেন। পাবনা ঈশ্বরদীর ৬টির মধ্যে ৫টির ইউপির বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে। আওয়ামীলীগের দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থীও ভোট বর্জন করেছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মো. হজরত আলী নির্বাচন বর্জন করেছেন। নরসিংদীর সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মনির হোসেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপাশা ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন সিকদার বেলা ১১টার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে তিন ইউনিয়নে বিএনপিধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সোনারগাঁ পিরোজপুর ইউনিয়নের বিএনপিধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম, সাদিপুর ইউয়নের বিএনপির প্রার্থী কামরুজ্জামান মাসুম। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে ৪ প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে।
সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ব্যালট পেপার ছিনতাই, জালভোট প্রদান, হামলা, কেন্দ্র দখল, মারামারি নানাবিধ কারণে ৫৩টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে রিটার্নিং অফিসাররা।
জামালপুরে নিহত পাঁচ
জামালপুর থেকে নূরুল আলম সিদ্দিকী জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খুঠিরচর এফতেদায়ী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের গুলিতে ৫ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ১০০ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও ইসলামপুর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা সমর্থকরা শনিবার সকাল থেকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিএনপির প্রার্থীর এজেন্ট ও সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নৌকায় সীল মেরেছে। এ নিয়ে দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সরিষাবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় সবক’টি কেন্দ্রে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর এজেন্ট ও সমর্থকদের বের করে দিয়ে নৌকায় সীল মারার অভিযোগে শনিবার দুপুরের বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সকলেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউপি নির্বাচন চলাকালে শনিবার সকালে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাকিরুজ্জামান রাখাল, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহান শাহ ও দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ মামুনের নেতৃত্বে সশস্ত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা খুঠারচর এফতেদায়ী মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে অতর্কিতে হামলা চালায়। পরে তার নৌকা ছাড়া অন্য সকল প্রতীকের এজেন্ট ও সমর্থকদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সীল মারতে থাকে। এনিয়ে প্রথমে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে এলাকাবাসী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাকিরুজ্জামান রাখাল, মেয়র শাহান শাহ ও কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ মামুনকেসহ সশস্ত্র আওয়ামীগ নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাকিরুজ্জামান রাখালসহ সশস্ত্র আওয়ামীগ নেতা-কর্মীরা এলোপাথারি গুলি ছুড়তে ছুড়তে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহানের সমর্থক জিয়াউর রহমান (৩৬), নূরুল ইসলাম (৬৫), নবিরুল ইসলাম (১৫), আব্দুল মাজেদ (১৬) ও নুর আলম (৩০) নামে পাঁচ জন নিহত হয়েছে এবং আরও প্রায় ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে কুদ্দুছ নামে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাত রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করেছে। একই উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের শিশুয়া বাঘমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থী ও আ.লীগ বিএনপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়াও জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনায় জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খোটারচর এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কান্দিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র এবং জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ভাটারা ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
জামালপুর জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় দেওয়ানগঞ্জে চারজন মারা গেছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম করে তাদেরকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নোয়াখালীতে নিহত ২, ৮১ কেন্দ্র ভোট স্থগিত
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, ভোট কেন্দ্রে হামলা, বিশৃঙ্খলা, ব্যালট বক্স, পেপার ছিনতাই, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলার ২৩২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনায় দুই উপজেলার ৮১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে প্রিজাইডিং অফিসারগণ।
এদিকে একটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়ায় দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে সৈয়দ আহম্মদ (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ এবং অন্য একটি কেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাকিল (১৫) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছেন। বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে আরো ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো, বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের ছোট হোসেনপুর গ্রামের মৃত সামছুল হকের ছেলে সৈয়দ আহমদ ও একই উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের উত্তর জিরতলী গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে শাকিল আহমেদ।
জানা গেছে, সকাল ১১টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের ‘রাজগঞ্জ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা’ কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এসময় ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হতে গিয়ে ভয়ে দিকবিদিক ছুটাছুটি করার সময় দেওয়ালের সাথে মাথায় আঘাত লেগে সৈয়দ আহমদ নামের এক ব্যক্তি আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
অপরদিকে দুপুর দেড়টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা জিরতলী ইউনিয়নের ‘কেবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের সাথে একদল দুর্বৃত্তের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে শাকিল আহমেদ, জসিম উদ্দিন ও রাব্বিসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে শাকিল ও জসিমের অবস্থার অবনতি হলে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে কুমিল্লায় শাকিলের মৃত্যু হয়। ৮১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতের বিষয়টি বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান ও সেনবাগ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
পটিয়ায় ৩ জন নিহত, আহত শতাধিক
পটিয়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের পটিয়ায় গতকাল শনিবার ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন উপজেলার কর্ণফুলী থানার বড় ওঠান ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মোঃ ইয়াছিন (৪১) ও আশিয়া ইউনিয়নে মেম্বার সমর্থক বাবুল শীল (৫৭)। এদিকে গর্র্জন ইউনিয়নের শাহ মীরপুর কেন্দ্রে আহত নূরুল ইসলাম (৩৫) গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নে আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফৌজুল কবির কুমারের গাড়ী থেকে ২টি এলজি (বন্দুক) ও ৬ রাউন্ড গুলি এবং ১৩টি ইষ্টিলের বার উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় প্রার্থীকে বহনকারী একটি মাইক্রো বাস (চট্টমেট্রো-চ, ১১-৩৩৪৫) আটক করা হয়। কর্ণফুলী থানাধীন চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদকে ব্যালটে সীল মারার সময় সকাল ১০টার দিকে কর্তব্যরত ম্যাজিষ্ট্রেট হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ্ উদ্দীন ও পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আকতার পটিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এছাড়া নির্বাচনী সহিংসতা ও ভোট জালিয়াতির কারণে ৪টি ভোট কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে কচুয়াই ইউনিয়নের কচুয়াই সিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জঙ্ঘল খাইন ইউনিয়নের জঙ্ঘলখাইন এয়াকুবদন্ডী সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের পশ্চিম চরপাথরঘাটা রেজিঃ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইছানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রে সহিংসতায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। তাদের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ২
লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ১২টি ইউনিয়নে গতকাল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে দিঘলি ইউনিয়নের শানকিভাঙ্গা, দিঘলি উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাজিরপাড়া ইউনিয়নের ইউসুফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চারটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারগণ। হাজিরপাড়া ইউনিয়নের ইউছুফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শতাধিক ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২ যুবক গুলিবিদ্ধ হয়।
ভোট কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার, ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে সিল মারা, জাল ভোট দেয়া সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ১০ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটককৃতদের মধ্যে নূর হোসেনকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড, এবং আমির হোসেন, শাহআলম, ইকবাল, নূর আলম, রিয়াজ, ইউসুফ, বেলালসহ সাতজনকে ১ মাসের কারাদ-াদেশ দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আ’লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজাম উদ্দিন মুন্নাসহ ৮ জনকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শামছুল ইসলাম বাবুল পাটওয়ারীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
হাজিরপাড়া, চন্দ্রগঞ্জ, উত্তরজয়পুর, দিঘলী, তেওয়ারীগঞ্জ, কুশাখালী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীদের কোন এজেন্ট ছিলো না। বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারার অভিযোগে ১৯নং তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ নূরুল আলম দুপুর ১২টায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন। এছাড়া ১১নং হাজিরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির চেয়ারম্যন প্রার্থী মাছুন উদ্দিন তুহিনসহ বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।
অপর দিকে জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ২নং নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক ধানের শীর্ষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেনের হোটাটিয়া পাটওয়ারীবাড়ীস্থ বাসায় শনিবার দুপুরে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করে। এ সময় তারা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাসার দরজা, জানালা, আসবাপত্র ভাংচুর করে ও মালামাল লুট করে বলে অভিযোগ করেন। আগামী ৪ জুন রামগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আড়াইহাজারে সংঘর্ষে আহত ৩০
আড়াইহাজার উপজেলা সংবাদদাতা জানান, না’গঞ্জে আড়াইহাজারে বিভিন্ন স্থানে মেম্বার প্রার্থী নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। ব্যালেট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে ২টি কেন্দ্র ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
জানা গেছে, খাগকান্দা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শম্ভুপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে ওই কেন্দ্রের মেম্বার প্রার্থী জাকির (তালা) ও মোতালিব (মুরগি) প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হাইজাদী ৭নং ওয়ার্ডের সিংহদী মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২ মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কিছু সময়ের জন্য ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিশনন্দী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে দয়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টায় জসিম উদ্দিনের ফুটবল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোরগ প্রতীকে আলী আক্কাশের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আলী আক্কাশ, শাহজালাল, শওকত, ইয়ানুসসহ ৭ জন আহত হয়।
খাগকান্দা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শম্ভুপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী তালা প্রতীকের জাকির হোসেনের সমর্থকদের সাথে মোরগ প্রতীকে মোতালিবের সমর্থকদের এতে পুলিশসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়। দড়ি বিশনন্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী আ. হান্নান ও খোকনের সমর্থকদের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পাবনায় দুই মেম্বার প্রার্থী সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৫
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, ঈশ্বরদী উপজেলায় ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে সাহাপুর ইউনিয়নের বাবুলচরা ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত: ২৫ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় কিছু সংখ্যক ব্যালট পেপার ছিনাতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এরপর ঐ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে মেম্বার প্রার্থী আব্দুল করিম ও হাশেম গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা লোকজন দিগি¦দিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই সংঘর্ষের কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেন। আহতদের মধ্যে ৭ জনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নওগাঁয় ৩ পুলিশসহ আহত ১০
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ১নং খট্টেশ্বর ইউনিয়নের (রানীনগর সদর) তিনটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। তারা হলেনÑথানা যুবলীগ প্রান্নাথপুর গ্রামের নেতা সায়েম উদ্দীন, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ ও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছিল বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
নাঙ্গলকোটে ম্যাজিস্ট্রেটসহ আহত অর্ধশতাধিক
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : পঞ্চম দফা ইউপি নির্বাচনে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ব্যাপক সহিংসতা, বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, অস্ত্রের মহড়া ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসময় নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিট্রেট, পুলিশের এসআইসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। আহতদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক।
এদিকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দিয়ে জোর পূর্বক নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপি সমর্থিত ৩ প্রার্থীসহ ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে নির্বাচন বর্জন করেছেন। তারা হলেন- মৌকরা ইউপির বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী কলিমুল্লাহ, ঢালুয়া ইউপির বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন এবং সাতবাড়িয়া ইউপির বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জালাল উদ্দিন দুলাল।
দুর্গাপুর ও চারঘাটে আহত ১৮
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরুর পর রাজশাহীর দুর্গাপুর ও চারঘাটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুর্গপুরের চৌপুকুরিয়ায় বিএনপির ভোটারদের ভোট দানে বাধা দিয়ে মারধর করা হয়। এতে অন্তত আটজন বিএনপির সমর্থক নারী পুরুষ আহত হয়। চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নে আ’লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষেও দশজন আহত হয়।
শনিবার সকালে চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে সকালে ভোট শুরু পর ভোট কেন্দ্রের পাশে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর মধ্যে মাথায় ইটের আঘাত লাগা রেন্টু নামের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় প্রায় আধা ঘণ্টা নিমপাড়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিলো। রাজশাহীর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঝামুনা ব্রিজের ওপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা অবস্থান করছিল। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে যেতে শুরু করলে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য তাদের জোর করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিএনপি সমর্থকরা এর প্রতিবাদ করে। পরে ওই তিন যুবককে মারধর করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অন্তত দশজন আহত হয়। পরে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও চতুর্মুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় লাঠি চার্জ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রায় ৩০ মিনিট পর পরিস্থিতি আনে।
এদিকে দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার পথে এক শিশুসহ বিএনপির ৮ নারী সমর্থককে পিটিয়ে আহত করেছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝালুক ইউনিয়নের চৌপখুরিয়া ভোটকেন্দ্র থেকে ১০০ মিটার দূরে ওয়াজের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলো, রুনা (৪৫), তার ছেলে রুকন (৯), রুজিনা (৪৫), নাজমা বেগম (৩৫), শাহিদা (৪০), মাহফুজা বেগম (৩৫), শারমিন (৩৫), নাজমা (৪০) এবং চম্পা (৩৫)। তারা সবাই বিএনপির প্রার্থীর সমর্থক।
কসবায় সহিংসতা
কসবা উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ককটেল বিষ্ফোরণ, ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলি বর্ষণের মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
সকালে চাপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী রবিন চৌধুরী ও আবুল কাশেমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ভোট কেন্দ্রে দুই ও তিন নং বুথে মহিলা সদস্যের ব্যালেট পেপার দেয়া হয়। অন্য পদে ব্যালেট দেয়া হয় নাই। ওই কেন্দ্রের জনৈক ভোটার বলেন, ভোট দিতে গেলে তাকে শুধু একটি ব্যালেট দেয়া হয়। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবদুল কুদ্দুছ বলেন, কয়েকজন লোক ব্যালেট ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তা দেয়া যাচ্ছে না।
ইউপি সদস্য প্রার্থী রবিন চৌধুরী বলেন, আবুল কাশেমের লোকজন ব্যালেট ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় কেন্দ্রের বাহিরে দাড়িয়েছিলেন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন; কেন্দ্রের বাহিরের দায়িত্ব তার ভিতরের নয়।
সকালে মইনপুর মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার অলি আহাদ মিয়া বলেন; দুই মেম্বার সমর্থকদের সংঘর্ষের কারণে ৪০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। এ সময় মেম্বার প্রার্থী হাছান মিয়া ও রেনু মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে আহত শাহাদাৎ হোসনে (৩৫) ও নুর আহাম্মদ (৪০) কে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মইনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সদস্য প্রার্থী মো. কামাল হোসেনের সমর্থকদের সাথে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মোতাহের হোসেনের সমর্থিতদের সংঘর্ষে কামাল হোসেনের সমর্থিত চানঁ মিয়ার (৫০) ডান হাতের কব্জি কেটে গেছে। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাবেদ মিয়া (৩৫), লিটন মিয়া (৩৫), কাউছার মিয়া কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ভর্তি করা হয়েছে।
চন্ডিদ্বার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মেম্বার সমর্থিত লোকজন ব্যালেট বাক্স ভেঙে সিল মারা ব্যালট লুটের চেষ্টা করলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নরসিংদীতে রাতেই সীল মারার অভিযোগ
নরসিংদী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ব্যাপক বোমাবাজী, বেপরোয়া কেন্দ্র দখল, অবাধে সীলমারাসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নরসিংদী শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে ব্যাপকভাবে বোমাবাজী করেছে। ভোটগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে শত শত ককটেল ও বোমা বিস্ফোরনের খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদীর এসিল্যান্ড মাসুদ কামাল পাঁচদোনার পাটুয়া কেন্দ্র থেকে ৫টি ককটেলসহ মনির হোসেনসহ ৩ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছে। কেন্দ্র দখল ও সীলমারার কারণে আমদিয়া ইউনয়িনে বিএনপি প্রার্থী আবু সিদ্দিক মিয়া, পাঁচদোনা ইউনিয়নে লাল মিয়া, নজরপুর ইউনিয়নে জালাল উদ্দিন সরকার সকাল সাড়ে ১০ টায় নির্বাচন বর্জন করেছেন। নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে ৭টি ভোট কেন্দ্রে।
বোমা ফাটাফাটির ঘটনায় সবচেয়ে বেশী বোমা বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে হাজীপুর ইউনিয়নের কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে। ফলে ১ নং ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু পরে আবার চালু করা হয়। ভোট গ্রহণ চলাকালে পাইকারচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল কাদির বোমা হামলায় মারত্মক আহত হয়েছে। তাকে ঢামেকে প্রেরণ করা হয়েছে। চিনিশপুর ইউনিয়নের পুরানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে অলি মেম্বার নামে একজন মেম্বার পদপ্রার্থীকে কয়েক ঘন্টা আটক করে রাখে মামুন নামে অপর একজন সরকারী দলের মেম্বার পদপ্রার্থী। এসময় তারা অলি মেম্বারের ১৫ জন সমর্থককে কুপিয়ে আহত করে। আহতদের মধ্যে আরিফ নামে ১ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢামেকে প্রেরণ করা হয়েছে। এ কেন্দ্রে বহুসংখ্যক বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভোটাররা। মেহেরপাড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কেন্দ্র দখল ও সীলমারামারির কারণে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করেছেন। এদিকে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গত রাতেই অধিকাংশ ইউনিয়নে সীল মারামারির কাজ সম্পন্ন করে নিয়েছে সরকারী দলের বিভিন্ন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। বাকী থেকে যায় শুধুমাত্র মেম্বারদের ভোট। অধিকাংশ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং ও পুলিং অফিসাররা শুধুমাত্র মেম্বারদের ব্যলট পেপার নিয়ে বসে থাকে। পরে মেম্বারদের ভোট নিয়েও ব্যাপক হানাহানির ঘটনা ঘটে।
উজিরপুরের ওসি প্রত্যাহার
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালের উজিরপুরের গুঠিয়া ও বাকেরগঞ্জের দুর্গাপাশা ইউনিয়নে সকাল থেকে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতিতে শুরু হলেও বেলা এগারোটার দিকে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট দেবার অভিযোগে গুঠিয়া ইউনিয়নের বান্না সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ডহরপাড়া ও বৈরকাঠী কেন্দ্র মিলিয়ে ৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এসময় নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে উজিরপুর থানার ওসি গোলাম সরোয়ারকে। বাকেরগঞ্জের দুর্গাপাশা ইউনিয়নে অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাকেরগঞ্জে বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছে।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, বান্না সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বহিরাগত ক্যাডাররা কেন্দ্রে ঢুকে ৫০/৬০টি ব্যালট পেপার ছিনতাই জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন। তবে পুলিশ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়া দুর্বৃত্তদের আটক করতে পারেনি। এছাড়াও ডহরপাড়া ও বৈরকাঠি কেন্দ্রে একই অভিযোগে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। জসিম উদ্দিন আরও জানান, প্রার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উজিরপুর থানার ওসিকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন
অপরদিকে উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রে শনিবার বেলা এগারোটার দিকে জাল ভোট দেবার সময় দু’জন ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ওই ওয়ার্ডের বৈরকাঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে আটককৃতরা হলো, ছাত্রলীগ কর্মী বাচ্চু মোল্লা ও আবু জাফর তালুকদার। আটকের পর তাদের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শফিকুল ইসলামের আদালতে সোপর্দ করা হলে প্রত্যেককে ছয় মাসের কারাদ- প্রদান করা হয়।
বিএনপির প্রার্থীদের ভোট বর্জন
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, জাল ভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল এবং বিএনপি প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হল দাগনভূঁঞার ৫ ইউপির নির্বাচন। গতকাল সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯ টার দিকে মাতুভূঞা ইউনিয়নের উত্তর আলীপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের বোন ফরিদা আক্তার ব্যালট পেপারে টানা সিল মেরে বাক্স ভর্তি করছেন। এছাড়া লক্ষণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গজারিয়া আদর্শ একাডেমী, সিন্দুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুজাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাসানগনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিরাগতরা অনুপ্রবেশ করে একচেটিয়া জালভোট দিতে দেখা গেছে। এদিকে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল্লা আল মামুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদ হোসেনকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সোহেল রানা।
এদিকে বিভিন্ন অভিযোগে ভোট বর্জন করে নতুন করে তফসিল ঘোষণার দাবী জানিয়ে দুপুর ২ টায় ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি দলীয় ৫ প্রার্থী। তারা অভিযোগ করেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা সকাল থেকেই কেন্দ্র দখল এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে একতরফা সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট দিতে বাঁধাদিলে কেন্দ্রের আশ পাশে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, সরকার দলীয় কর্মী সমর্থকরা ভোটের আগের দিন রাতভর বোমা ফাটিয়ে এবং ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না আসার জন্য হুমকী ধমকী দিয়ে আসে। বিএনপির প্রার্থীরা প্রহসনের নির্বাচনের বাতিল করে পুনঃতফসিলের দাবী জানান।
নাটোরে ১০ প্রার্থীর ভোট বর্জন
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরে ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বহিস্কার, প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া এবং ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়াসহ বিভিন্ন অভ



 

Show all comments
  • Fahad ২৯ মে, ২০১৬, ১২:৪২ পিএম says : 0
    সংঘর্ষের সময় পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ............. tahole tader kaj ki sudu nirob dorsok ar birodi dol domon ?
    Total Reply(0) Reply
  • কবির ২৯ মে, ২০১৬, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    এজন্য সেনাবাহিনী দেয়া হয় নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Tania ২৯ মে, ২০১৬, ১২:৫৬ পিএম says : 0
    ata nirbachon noy rokto nea holi khela.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৫ম ধাপে ১০ জন নিহত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ