Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জয়ের সাথে এন সাফাদির বৈঠকের খবর জানা নেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ইসরাইলের মেন্দি এন সাফাদির বৈঠক হয়েছে এমন কোন তথ্য তার জানা নেই। বিএনপি মোসাদ কানেকশনে ফেঁসে যাচ্ছে এই জন্য তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এখন এগুলো করছে। তিনি বলেন তার ধারণা এটা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার। কারণ ওই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে বিএনপির একজন নেতা। তবে বিষয়টি খাতিয়ে দেখা হবে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় কী কারণে মেন্দির সঙ্গে বৈঠক করবেন তা আমার জানা নেই। আর বৈঠক করার কোন কারণও নেই। তারপরও যেহেতু কথাটি এসেছে এই কারণে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। যে ভিডিওটি  প্রকাশ করা হয়েছে তা বানানো হয়েছে কিনা কিংবা উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি ও কর্মকর্তা হিসাবে জয়ের নাম সেখানে লাগানো হয়েছে কিনা সেটাও দেখা হতে পারে। তিনি বলেন, এমনও হতে পারে বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরীর নামে যখন মামলা হয়েছে ঠিক ওই সময়েই এই ভিডিও প্রকাশ উদ্দেশ্য প্রণোদিত বটে।
যদি সত্যি হয় তাহলে কি জয়ের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে যা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বৈঠকের বিষয়ে আমি কিছুইতো জানি না। তাই এই ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছি না। সাফাদি নিজে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পুত্র ও তার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়েছিল। আসলামের আগে জয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তার। আগ্রায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের অন্তত দুই মাস আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে জয়ের সঙ্গে তার এই সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেন্দি সাফাদি। ইউটিউবে আপলোড করা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের কথাটি জানিয়েছেন ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা ও দলটির কূটনৈতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য জাহিদ এফ সরদার সাদী ইউটিউবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৃহস্পতিবার মেন্দি সাফাদির ভিডিওটি আপলোড করেন। ভিডিওটি যিনি আপলোড করেছেন, তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি পিরোজপুর-১ আসনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যিনি ভিডিওটি আপলোড করেছেন তার সম্পর্কে জানতে হবে। তার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এই সাক্ষাৎকারটি কখন কিভাবে নেওয়া হয়েছে তা অবশ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। মন্ত্রী বলেন, এখন আমি জানি না বলে বেশি কিছু বলতে পারছি না। তবে আমি জেনে বলতে পারবো। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পরিচয় পাওয়ার পর প্রয়োজনে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মেন্দি সাফাদি বলেন, বাংলাদেশের অনেক লোকের সঙ্গে আমার ফেসবুকে যোগযোগ রয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে যখন দিল্লি সফর করি তখনও বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেছি এটা সত্য তবে তা কোন বৈঠক ছিল না। ভারতীয় জনতা পার্টির আমন্ত্রণে আমি যাই, তখনি আমার আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়। আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের দুই মাস আগে ওয়াশিংটনে সজীব ওয়াজেদ জয় নামে বাংলাদেশের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে।
এ সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী টেলিভিশন পর্দায় প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি দেখিয়ে বলেন ইনি কি সে ব্যক্তি? উত্তরে মেন্দি সাফাদি বলেন, হ্যাঁ ইনিই সে ব্যক্তি যার সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ হয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হলে সেটাকি তাকে ছবি দেখিয়ে প্রমাণ করাতে হবে। কারণ তারতো এমনিতেই মনে থাকার কথা তিনি কার কার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সাক্ষাৎকারে জয়ের ছবি দেখিয়ে সেটা জিজ্ঞাস করার মানেই হলো এখানে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে।
সেখানে মেন্দি সাফাদিকে প্রশ্ন করা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে আপনি কি জানেন? জবাবে সাফাদি বলেন, আমি জানতাম তিনি বাংলাদেশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তবে তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, তা আমার জানা ছিল না। সাফাদি বৈঠক করার আগে জানবেন না কার সাথে তার বৈঠক হচ্ছে  এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা?
মন্ত্রী বলেন, এটা কতটা বানানো কথা। একজন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্রর সঙ্গে তার বৈঠক হবে আর তিনি জানবেন না তিনি কি, এগুলো একদম বাজে কথা। তাদের নেটওয়ার্ক এত দুর্বল সেটা আমরা বিশ্বাস করি না। বিএনপি যে রকম করে চিন্তা করে সেই রকম করেই ওই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে। এর পেছনে তাদের আরো কোন ব্যাপার থাকতে পারে।
সাফাদি দাবি করেছেন, বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে তার বৈঠক হয় ঘটনাক্রমে, তিন বার কথাও হয় আসলাম চৌধুরীর সাথে। বাংলাদেশের আরো অনেকের সাথেই ফেইসবুকে যোগাযোগও আছে তার।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। এই ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কার কার সাথে তার বৈঠক হয়েছে এটা আমরা বের করে ফেলবো। তার কার কার সাথে বৈঠক হয়েছে সেটাও বের করা যাবে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক  তথ্য পেয়ে গেছি। এই ব্যাপারে আমরা সময় মতো সব বলবো।
আসলাম চৌধুরীর গ্রেফতারের সমালোচনা করে বলেছেন, ভারতে ঘটনাক্রমে আসলাম চৌধুরীর সাথে স্বাক্ষাৎ হয় তার। কথা হয় বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে। মন্ত্রী বলেন, তিনি যতই দাবি করেন ঘটনাক্রমে দেখা হয়েছে এটা ঠিক না। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ও পূর্ব নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। এটা আমরা জেনিছি। প্রমাণও আছে। এমন অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে সেখানে চাইলেই কি যে কেউ যেতে পারেন? আবার তিনিতো এটাও বলেছেন, আসলাম চৌধুরীর সাথে তার তিনবার কথা হয়েছে। তার মানে আরো তিনবার তাদের বৈঠক হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই তদন্তে সব প্রকাশ পাবে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন। আসলাম চৌধুরীকে কে ভারতে পাঠিয়েছেন। কার নির্দেশে তিনি তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কী নিয়ে বৈঠক করেছেন আমরা সেগুলো জেনেছি। মামলা হয়েছে আপনারা ও দেশের জনগণ সব জানতে পারবেন। এই ব্যাপারে আমরাও সময় মতো সব বলবো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন বাঁচার কোন পথ না পেয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সাফাদি বৈঠক হয়েছে বলে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। সেটা সফল হবে না। বিএনপি তাদের নেতাদের বাঁচানোর জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে পারে। এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, সাফাদিরতো বাংলাদেশ নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি এই দেশের সমস্যা নিয়ে এত কাজ করছেন তার নিজের দেশের খবর রাখেন কিনা সেটাও দেখতে হবে। সাফাদির ব্যাপারেও খোঁজ খবর করা হচেছ। তিনি সংখ্যা লঘুদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন এর পেছনে অন্যকোন উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটাও আমাদের দেখতে হবে।
এর আগে গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা শুধু বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীরই নয়। তার সঙ্গে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বড় নেতারাও জড়িত। একের পর এক চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মানুষ মারার যে ঘটনা তা কনট্যাক্ট কিলিং। এই হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে একটি চিহ্নিত মহল। আর এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য একই সূত্রে গাঁথা। সূত্র : আমাদের সময় ডটকম



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জয়ের সাথে এন সাফাদির বৈঠকের খবর জানা নেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ