পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টিএসপি সারের সাথে ডালডা, রঙ আর ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘি। পরোটা-বেগুনি ফোলাতে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া। জিলাপি-পেঁয়াজুতে বিষাক্ত কাপড়ের রঙ, হাইড্রোজ। ভাজা মচমচে করতে পোড়া তেল-মবিল। পচা ডিমে কেক-পাউরুটি। তেলাপোকা আর মাছিতে ভর্তি বাসি সিরকায় মিষ্টি-রসগোল্লা। ফ্রিজে কাঁচা মাছ-গোশতের সাথে সংরক্ষণ করা হচ্ছে রান্না করা খাবার।
খাদ্যদ্রব্যের নামে বিষ খাচ্ছে মানুষ। যেখানে অভিযান সেখানে মিলছে ভেজাল। চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মধ্যেই চলছে ভেজালের হিড়িক। অভিযানেও দমেনা ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য। এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত যে কয়টি ভোগ্যপণ্যের কারখানা, রেস্টুরেন্ট ও দোকানে অভিযান চালিয়েছে সবখানেই পেয়েছে ভেজালের প্রমাণ।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা গুণতে হয়েছে নগরীর অভিজাত সুপার শপ খুলশী মার্ট, আগোরাকে। অভিজাত রেস্টুরেন্ট খুলশীর তাভা, জিইসি মোড়ের বাসমতি আর জামান হোটেলও রেহাই পায়নি। মিষ্টি ও বেকারি সামগ্রী তৈরি প্রতিষ্ঠান বনফুল ও মধুবনকেও অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হতে হয়েছে।
ঘি তৈরির একটি কারখানাও ভেজালমুক্ত পাওয়া যায়নি। ঘিয়ের প্রধান উপাদান দুধ। অথচ দুধ ছাড়াই তৈরি হচ্ছে ঘি। নামকরা ফ্লেভারস প্রিমিয়াম সুইটস, দি কিচেন রেস্টুরেন্টেও মিলেছে ভেজালের প্রমাণ। পুষ্টি সয়াবিন তেলকে ৭০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে। খাওয়ার অযোগ্য উপকরণে তৈরি লাচ্ছা সেমাই, নুডুলসসহ ১১৫ টন পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে বেশ কয়েকটি সেমাইয়ের কারখানা। মসলা আর হলুদ-মরিচের গুঁড়োতেও ভেজালের মিশ্রণ পাওয়া গেছে। ইটের গুঁড়ো, করাতের ভুসি আর গো-খাদ্য মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে গুঁড়ো মসলা, হলুদ-মরিচের গুঁড়ো।
মাহে রমজানে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি র্যাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ডিবি ও থানা-পুলিশ ভেজালবিরোধী অভিযানে নামে। এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত যেখানেই হাত দিচ্ছে সেখানেই মিলছে ভেজাল আর খাওয়ার অযোগ্য উপকরণের মিশ্রণ। অভিযানের খবরে জনমনে স্বস্তি আসলেও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোক্তারা। কারণ অভিযানে জেল-জরিমানা হলেও থামছে না ভেজালের কারবার। জরিমানা দিয়েই ফের অপরাধ করছে খাদ্য প্রস্তুতকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এক অপরাধে কোন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার পর অন্য প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের অপরাধের প্রমাণ মিলছে। গত বৃহস্পতিবার নগরীর জিইসি মোড়ে বাসমতি রেস্টুরেন্টে কাঁচা মাছ-গোশতের সাথে রান্না করা খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর একদিন পর শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর অভিজাত সুপার শপ খুলশী মার্টের ফ্রিজ থেকেও বিপুল পরিমাণ পচা মাছ-গোশত এবং রান্না করা খাবার জব্দ করে র্যাব। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। উল্লেখ্য বাসমতিকে এর আগেও একই অপরাধের জন্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। খুলশী মার্টের দ্বিতীয় তলায় তাভা রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় রেস্টেুরেন্টের ফ্রিজ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গোশত, মাশরুম, ডালডা, বেসন রাখার দায়ে রেস্টুরেন্ট মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হাইড্রোজ ব্যবহার করে জিলাপি তৈরির অপরাধে নগরীর চকবাজারের ফ্লেভারস প্রিমিয়াম সুইটস অ্যান্ড বেকার্সকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ অভিযানে কোতোয়ালী, চকবাজার, ডবলমুরিং ও পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ১৪টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ১০ প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর বিভিন্ন ধারায় এক লাখ ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চট্টেশ্বরী রোডের দি কিচেন রেস্টুরেন্টকে রান্না ঘরে খোলা ডাস্টবিন রাখা, ফ্রিজে কাঁচা গোশতের সঙ্গে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা এবং দৈনিক পত্রিকার কাগজে খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাত করায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পরোটা-বেগুনি ফোলাতে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া, জিলাপি-পেঁয়াজু তৈরিতে বিষাক্ত কাপড়ের রং এবং পোড়া তেল দিয়ে ইফতার সামগ্রী তৈরির দায়ে হাটহাজারীতে এক বিক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শনিবার এ অভিযান চালান হাটহাজারী ইউএনও মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, হোটেলে প্রবেশ করতেই কর্মচারীরা দ্রুত কিছু জিনিস বাইরে ডাস্টবিনে ফেলে দেন। পরে সেগুলো নিয়ে দেখি ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া, সোডা, কাপড়ের রঙ এবং পোড়া তেল। কর্মচারীরা জানায়, পরোটা-বেগুনি ফোলাতে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া, জিলাপি-পেঁয়াজু তৈরিতে কাপড়ের রঙ এবং পোড়া তেল দিয়ে ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হয়।
একইদিন নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি এবং পচা সিরকায় মিষ্টি সংরক্ষণের দায়ে বনফুলকে চার লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। নগরীর হামজারবাগ এলাকায় মধুবনের কেক-বিস্কুট তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে পচা ডিম ও বাসি পামওয়েল দিয়ে কেক ও বিস্কুট তৈরির প্রমাণ পাওয়ায় কারখানা মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে র্যাব।
হাটহাজারীর বুড়িশ্চরে তিন রুমের ছোট একটি কারখানায় টিএসপি সার, ডালডা, পামওয়েল, ফ্লেভার, ক্ষতিকর রঙসহ নানা উপকরণ দিয়ে ভেজাল ঘি তৈরি হচ্ছিল। এসব ঘি পাইকারি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বাঘা বাড়িসহ ১০টি ব্রান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বাজারে সরবরাহ করা হয়। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে তৈরি প্রায় দেড় হাজার লিটার ভেজাল ঘি জব্দ করে নালায় ফেলে দেয়া হয়। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি বাজারেও চলছে অভিযান। সেখানেও ভেজাল পণ্য আর ওজনে কম দেওয়ার প্রতিযোগিতা। প্রতিদিনই জরিমানা করছে ভ্রাম্যমান আদালত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।