Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এসব সেমাই আমরা খাই

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ভেজাল খাদ্যপণ্যে ছেয়ে গেছে পুরোদেশ। বিশুদ্ধ খাবার খুঁজে পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য পানিও আজ দূষিত। জারের পানির প্রায় ৯৮ শতাংশতেই রয়েছে জীবাণু। এসব পানি পান করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে।
ইতোপূর্বে জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের (আইপিএইচ) এক রিপোর্টে জানা গেছে, বাজার থেকে সংগৃহীত খাদ্যপণ্যের শতকরা ৪০ ভাগে ভেজালের সন্ধান মিলেছে, যার মধ্যে ১৩টি পণ্যে ভেজালের হার প্রায় ১০০ ভাগ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত ৪৩ ধরনের খাদ্যপণ্যের মোট ৫ হাজার ৩৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ২ হাজার ১৪৭ টিতেই মাত্রাতিরিক্ত ভেজালের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত সয়াবিন তেলে ভেজালের হার শতকরা ৭৮ ভাগ, সরিষার তেলে ৫৬ ভাগ, পামঅয়েলে ৩২ ভাগ এবং নারিকেল তেলে ভেজালের পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ। এছাড়া আটায় শতকরা ভেজালের পরিমাণ ১১ ভাগ, ময়দায় ৯ ভাগ, সুজিতে ২৭ ভাগ, বেসনে ৫২ ভাগ এবং সেমাইয়ে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ ভেজালের উপস্থিতি মিলেছে।
সারাদেশে-ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের নানা পণ্যে ছেয়ে গেছে। শিশুর গুড়ো দুধ থেকে বৃদ্ধের ইনসুলিন, রুপচর্চার কসমেটিক থেকে শক্তি বর্ধক ভিটামিন এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত এখন ভেজালে ভরপুর। মাছ, দুধ, শাক সবজি ও ফলমূলে ফরমালিন, হলুদে সিসা, মরিচে ইটের গুঁড়া, সরষের তেলে কেমিক্যাল, মশার কয়েলে বিপজ্জনক উপাদান, গরুর গোশতে হরমোন, মুরগির খাবারে বিষাক্ত উপকরণ। টোকাই থেকে ধনীর সস্তান, ভেজালের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ নয় কেউ-যেন ভেজালেই জন্ম, ভেজালেই বেড়ে ওঠা, ভেজালের রাজ্যেই বসবাস।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো কুমিল্লার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা। বিএসটিআইর অনুমোদন ছাড়া গড়ে ওঠা এসব অস্থায়ী কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত তেল ও রং ছাড়াও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালেও প্রতিকার হচ্ছে না তাতে। বরং অভিযোগ রয়েছে, ভেজাল সেমাই প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে কিছু দিন যেতে না যেতে সেই জরিমানার অর্থ উসুল করতে আগের চেয়ে বেশি পরিসরে ভেজাল সেমাই তৈরি করে কারখানায়।
কুমিল্লা সদর উপজেলার চান্দিনা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচংসহ আশপাশের উপজেলায় যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব সেমাই তৈরির কারখানায় সেমাই উৎপাদনের নামে চলছে জনস্বাস্থ্য ধ্বংসের তৎপরতা। সেমাই তৈরিতে যে ময়দা, তেল, রং মেশানো হচ্ছে, তার সব কিছুতেই বিষাক্ত উপাদান। ময়দা মাখানো খামিরের কাজ চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পা দিয়ে চলে মাড়িয়ের কাজ। শ্রমিকদের হাতে-পায়ে কিংবা মাথায় নেই কোনো গøাবস। গা থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে খামিরের ওপর। স্যাঁতসেঁতে নোংরা এমন পরিবেশেই চলছে সেমাই তৈরির কাজ। এসব সেমাই আকর্ষণীয় মোড়কে মোড়ানো, দেখতে সুন্দর লাচ্ছা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, এসব সেমাইয়ে ব্যবহার হচ্ছে বিষাক্ত তেল, রং ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান। অধিকাংশ কারখানারই বিএসটিআইর অনুমোদন নেই। কারখানার বাইরে থেকে প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অথবা গেটে তালা ঝুলিয়ে গেট বন্ধ করে চলছে সেমাই তৈরির কাজ।
এ ব্যাপারে একাধিক কারখানা মালিক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে পা দিয়ে মাড়িয়ে লাচ্ছা তৈরি হয়ে আসছে। আমরা এসব বর্জন করতে চাই। তাই অনেকে এখন মেশিন দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে। অবৈধ কারখানার মালিকরা দাবি করেছেন, তারা বেকারি মালিক সমিতির সঙ্গে জড়িত। মালিক সমিতির কতিপয় নেতাকে তারা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসছেন।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে তৈরি এসব লাচ্ছা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, বিষাক্ত তেল, রং ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি এসব লাচ্ছা সেমাই খেয়ে মানুষ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব খেয়ে পেটের পীড়াসহ গেস্টিক, আলসার, ক্যানসার এমনকি কিডনী রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ফাঁকি দিতে রাতের আধারে ময়দা খামিরের কাজ চলে। আর সারাদিন চলছে লাচ্ছা তৈরি ও ভাজার কাজ।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ফজল মীর এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে আমরা বাঁচতে চাই। চাই, বিষমুক্ত খাবার। এ জন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। প্রতিরোধ গড়তে হবে বিষযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে। ঈদে মেহমানদারির প্রধান অনুসঙ্গ লাচ্ছা সেমাই। তাই শুধু লোক দেখানো ভেজাল বিরোধী অভিযান নয়, স্বাস্থ্যসম্মত লাচ্ছা সেমাই তৈরি ও বাজারজাতকরণে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর হস্তক্ষেপ নিবেন, এমনটাই প্রত্যাশা ভোক্তা ও সাধারণ মানুষের।



 

Show all comments
  • MAHMUD ১৪ মে, ২০১৯, ৫:২৭ এএম says : 0
    Situation of all side in our country no required any comments. Who will control? Hi ALLAH save us.
    Total Reply(0) Reply
  • ইলিয়াস ১৪ মে, ২০১৯, ১১:৩৩ এএম says : 0
    সর্ষের মাঝেই যদি ভুত থাকে তবে তাড়াবে কে? আপনি কার কাছে প্রতিকার চাইবেন? এসবের প্রতিকার হয়ে গেলে ঘুষখোরদের দিন চলবে কেমনে? ছিঁচকে ঘুষখোরকে বড় ঘুষখোর শেল্টার দেয়,আর বড় ঘুষখোরকে দেয় অতিবড় ঘুষখোর । সুতরাং কাঁদো পাবলিক কাঁদো .....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভেজাল

৩ নভেম্বর, ২০২২
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১১ জানুয়ারি, ২০২২
১১ জানুয়ারি, ২০২২
২৩ অক্টোবর, ২০২১
২২ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ