পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, গুণগতমানের প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কার দরকার। এগুলো হচ্ছে- কর নীতি, বাণিজ্য নীতি, মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, রফতানি খাত, ভালোভাবে বড় প্রকল্প পরিচালনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির নীতি এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাত। ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, এ প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার ওপর ভর করে এই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অপরদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রধান চালক রফতানি ও রেমিটেন্স। কিন্তু এ দুটি খাতের প্রবৃদ্ধি কমছে। কোনো কারণে রফতানি ও রেমিটেন্সে আঘাত এলে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। সরকারি বিনিয়োগে সেভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, যা বেসরকারি বিনিয়োগে হয়ে থাকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যক্তি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যক্তি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। অর্থনৈতিক সূচক বিশ্লেষণ করে ড. সেলিম রায়হান বলেন, তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, দেশে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু রফতানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগ কমছে। একই সঙ্গে দ্বৈত বাণিজ্য সূচক খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাহলে শিল্পায়নে প্রবৃদ্ধি কীভাবে হয়- প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের তথ্য-উপাত্তে কোথাও ঘাটতি রয়েছে।
বৃহষ্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সানেমের ‘ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তথ্য পর্যালোচনা করে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সানেমের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রফেসর ফজলুল হক খন্দকার, প্রফেসর সায়মা হক প্রমুখ।
প্রফেসর ড. সেলিম রায়হান বলেন, নানা সমস্যা বিদ্যমান ব্যাংকিং খাতে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত কমিশন গঠনসহ শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে সংস্কারের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিত হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। যেখানে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না। একই সঙ্গে ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিলে এবং খেলাপির সংজ্ঞা পরিবর্তন করলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা আরও বাড়বে। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে বিদ্যমান সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না। এছাড়াও অর্থনীতিতে বড় ধরনের লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রফেসর ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যাংকিং খাতে অনেক সমস্যা আছে। এর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। যেসব পদক্ষেপ নেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে এ খাত নিয়ে বড় ধরনের অর্জন সম্ভব নয়। এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম রায়হান বলেন, আন্তর্জাতিক মানদন্ড থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ খাতের জন্য অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে পাশ কাটিয়ে। এসব কর্মকান্ডে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। তবে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। পেশাধার (অভিজ্ঞ ব্যাংকার) লোকজন নিয়ে কাজ করতে হবে।
সংস্কারের কথা উল্লেখ করে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ট্যাক্স পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশ নেই জিডিপিতে ট্যাক্স অনুপাত এত কম। এতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
বাণিজ্যনীতি সংস্কারের কথা উল্লেখ করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, অর্থনীতির জন্য এটি দ্রুত সংস্কার করতে হবে। ট্রেড পলিসিতে নন ট্যারিফ সমস্যাগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকতে হবে। এছাড়া একটি ভালো মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না।
সানেমের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, রফতানি খাতে পণ্যের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যেসব পণ্য রফতানিতে ভালো করছে, সে খাতে ফাস্ট ট্র্যাক পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এজন্য একটি আলাদা রফতানি খাতে ফাস্ট ট্র্যাক পলিসি নেয়া দরকার। মেগা প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়, ১০টির মধ্যে ৮টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ৭০ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ দিয়ে।
এসব ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে পরিচালনা করা দরকার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আসন্ন বাজেটে কর্মসংস্থানের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। কারণ একদিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অন্যদিকে কাঙ্খিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। এজন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।