পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস ঃ বিদ্রোহী কবির স্পর্শে ভরা স্মৃতিতে চির ভাস্বর ময়মনসিংহের ত্রিশাল। এ উপজেলাতেই শৈশবের দুরন্ত সময় কাটিয়েছেন নজরুল। বছরের এ সময়টায় কবির শৈশবের বিদ্যাপীঠ স্থানীয় দরিরামপুর নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান।
কয়েক যুগ যাবত এটাই রেওয়াজ হয়ে উঠেছে নজরুলময় ত্রিশালবাসীর জন্য। কিন্তু এবারের অনুষ্ঠান যেন রংহীন, বিবর্ণ। অগোছালো আর দায়সারা গোছের এমন অনুষ্ঠানে মোটেও সন্তুষ্ট নয় নজরুল স্মৃতিবিজড়িত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবারের দ্বিতীয় দিনের জয়ন্তী অনুষ্ঠান যেন ছিল আরো ম্যাড়ম্যাড়ে।
অসুস্থতার জন্য এদিন আসতে পারেননি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মন্ত্রীর অপেক্ষায় থেকে নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা পর শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান। দাওয়াতপত্রে দেয়া সময় থেকে আরো প্রায় ২ ঘন্টা ২০ মিনিট পর এসেছেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন।
প্রধান অতিথি আর সভাপতিকে ছাড়াই চলেছে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানের প্রায় পুরোটা সময়। শেষতক ‘হায়ার’ করে আনা হয়েছে ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানকে। স্থানীয় দরিরামপুর নজরুল একাডেমি মঞ্চে বৃহস্পতিবারের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াতপত্রে কোথাও তার নাম না থাকলেও আয়োজক জেলা প্রশাসনের ‘মান’ রক্ষায় তাকেই হতে হয়েছে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি!
নজরুল স্মৃতিধন্য ত্রিশালে প্রাণহীন এ অনুষ্ঠানে বিরক্ত ও হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেক দর্শক ও শ্রোতারা। ফলে অনুষ্ঠানের সময়কাল মাত্র দেড় ঘন্টা স্পর্শ করতেই অর্ডিয়্যান্সের অনেক চেয়ার ছিল ফাঁকা। পর পর দু’দিনের এমন ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ দিনের অনুষ্ঠানেও দর্শক শুন্যতার আগাম হাহাকারের আশঙ্কায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
নজরুল জন্মজয়ন্তীর উদ্বোধনী দিনে বুধবার সভাপতির বক্তব্য রেখে অনুষ্ঠানে দাঁড়ি টেনেছিলেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তিনিই আবার শুরু করলেন। তার স্বাগত বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠান মঞ্চে তখন প্রধান অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আর সভাপতি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জি.এম.সালেহ উদ্দিনকে ছাড়াই বসে আছেন বিশেষ অতিথি ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আলী ও ত্রিশাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিনসহ অন্য অতিথিরা।
অনুষ্ঠান শুরুর খানিক সময় পরই মাইকে ঘোষণা করা হলো ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন। মঞ্চে উপস্থিত বিশেষ অতিথি ও অর্ডিয়্যান্সদের চোখ যেন তখন রীতিমতো কপালে!
অতঃপর নিজের স্বাগত বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকি বিষয়টি খোলাসা করলেন। বললেন, ‘সংস্কৃতিমন্ত্রী অসুস্থ। তার আসা না আসার দোদুল্যমানতার কারণে অনুষ্ঠান শুরুতে বিলম্ব হয়েছে।’ জেলা প্রশাসক এসব কারণে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তার বক্তৃতার পর একে একে বিভিন্ন অতিথিরা বক্তৃতা করেন। নজরুল স্মারক বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আকতার কামাল।
কিন্তু নিস্তরঙ্গ অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাসের ঢেউ নেই। মাইকে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার নাম বিশেষ অতিথি হিসেবে ঘোষণার পর ভরাট কন্ঠে প্রাঞ্জলভাবে বিদ্রোহী কবিকে উপস্থাপন করলেন তিনি।
বললেন, ‘দুঃখের ভেতর নজরুলের ভিত্তি ও বিকাশ। এরই ভেতরেই কবির জীবনযাপন ও জীবনাবসান। নজরুলের গান ও কবিতা থেকে আমরা এখনো পাই অসীম সাহস ও প্রেরণা।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বলেন, বাঙালির জাতীয় জীবনের দিশারী ছিলেন নজরুল।
সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের স্থলাভিষিক্ত প্রধান অতিথি ধর্মমন্ত্রী ও জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান বলেন, ‘নজরুল গণমানুষের কবি ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, সত্য, ন্যায়ের প্রতীক। তাঁর নাম আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে।’
অতিথিদের বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে চলে কবিতা পাঠ। শেষে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে এসব নিয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিল না নজরুল ভক্ত-অনুরক্তদের। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সোলায়মান কবির ও জহুরা পারভীন নামের দু’তরুণ-তরুণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দায়সারা গোছের অগোছালো অনুষ্ঠানের কারণে কারো তেমন আগ্রহ নেই।
অথচ প্রতি বছর এ অনুষ্ঠানে এখানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। অনুষ্ঠানস্থল ছাড়িয়ে মাঠেও চেয়ার দিয়ে দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করতে হয় আয়োজকদের। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।