Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন অপারেটরকে জরিমানা

ফারুক হোসাইন : | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

একজনের নম্বর অন্য জনের কাছে দেয়া, তথ্য প্রদান না করেই সিমের মালিকানা পরিবর্তন, বায়োমেট্রিক্স ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে সিম নিবন্ধনের নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে তিন অপারেটরকে জরিমানা করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। থ্রিজি, ফোরজি লাইসেন্সিং গাইডলাইন এবং টেলিযোগাযোগ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ৬ মে বিটিআরসির ২২৬তম সভায় গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক এই তিন অপারেটরের প্রত্যেককে ৫ কোটি করে মোট ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। জরিমানা অর্থ আদায়ে অপারেটরগুলোকে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তিন অপারেটরের কোনটিই এখনো চিঠি হাতে পায়নি বলে জানা গেছে।
গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক এই তিন অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, তিনটি অপারেটরই থ্রিজি এবং ফোরজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের শর্ত ভঙ্গ করেছে। ল ঙ্ঘন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ৩ ফেব্রæয়ারি বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে ই-মেইলে মোবাইল স্টেশন ইন্টারন্যাশনাল সাবসক্রাইবার ডিকশনারি নাম্বার (এমএসআইএসডিএন) ০১৭৪৪৪৪৪৪৪৪ এর নিবন্ধন এবং বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়।এর প্রেক্ষিতে গ্রামীণফোন যে তথ্য প্রদান করে তা সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি) সর্ভারে সংরক্ষিত তথ্যের সাথে অসামঞ্জস্য ছিল। এজন্য ৬ ফেব্রæয়ারি অপারেটরটির প্রতিনিধির সাথে সভা করে কমিশন। সভায় সিবিভিএমপি সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্যের সাথে অসামঞ্জস্যতার কারণ জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। বিটিআরসি জানায়, এমএসআইএসডিএন ০১৭৪৪৪৪৪৪৪৪ এর ক্ষেত্রে সিবিভিএমপি সর্ভারে শুধুমাত্র অপারেটরের দেয়া ২০১৬ সালের বাল্ক মাইগ্রেশন তথ্য ছাড়া আর কোন তথ্য নেই। কিন্তু অপারেটরটির তথ্য অনুয়ায়ি ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর ওই নম্বরটির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। তবে মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে সিবিভিএমপি সার্ভার থেকে সতর্কতামূলক বার্তা পাওয়ার পরও গ্রামীণফোন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর বিটিআরসিকে না জানিয়ে গত বছর ১ জুলাই ও ৫ নভেম্বর ওই নম্বর বা সিমটির মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে। এই অপরাধের জন্য রাষ্ট্রীয় ও জননিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রবির বিষয়ে বলা হয়েছে- গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিটিআরসি গত ২৭ জানুয়ারি রবির কাছে ই-মেইলে তিনটি মোবাইল ফোন নম্বরের নিবন্ধন ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। রবি ওই দিনই বিটিআরসিকে ই-মেইলে এ বিষয়ে তথ্য জানালেও দুটি নম্বরের বিষয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। এই দুটি নম্বরের একটি বায়োমেট্রিক্স ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিবন্ধন না করার কারণে ২০১৬ সালে বিটিআরসি বন্ধ করে দেয়। সংশ্লিষ্ট গ্রাহক আবেদন করলে রবি তদন্ত না করেই নম্বরটি সচল করে দেয়। বিটিআরসির নির্দেশনা হচ্ছে, বায়োমেট্রিক্স ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিবন্ধন না হওয়া সিম বন্ধ হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক যদি ৫৪০ দিনের মধ্যে সঠিকভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন করেন তাঁকে ওই সিম সচল করে দেওয়া যাবে। কিন্তু রবি তাদের বন্ধ হওয়া যে নম্বরটি সচল করে দিয়েছে তা বিটিআরসির নির্দেশিত সময়ের প্রায় দ্বিগুণ পরে। গ্রাহক আবেদন করলে ৯৩২দিন পর রবি তাদের সিমটি সচল করে দেয়। কিন্তু ওই সিমের নিবন্ধনের তথ্য সিবিভিএমপি দেওয়া হয়নি। অন্য নম্বরটির বিষয়ে রবি জানায়, নম্বরটির নিবন্ধন নেই এবং সে কারণে সচল নয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের পাঠানো স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ২৭ জানুয়ারি নম্বরটি সচল ছিল। এই ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য কেন দেওয়া হলো তা জানতে চাইলে গত ৩১ জানুয়ারি রবি আবারও যে জবাব দেয় তাতে তাদের আগের জবাব ভুল প্রমাণিত হয়। আগের জবাবে সিমটি সচল নয় জানানো হলেও দ্বিতীয় জবাবে নিবন্ধন বিষয়ে কোনো তথ্য ছাড়াই জানানো হয় সিমটি সচল। এ বিষয়ে বিটিআরসি বলছে, ‘এই জবাবের মাধ্যমেও তারা পুনরায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
বাংলালিংকের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আরও গুরুতর- অপারেটরটি তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন গ্রাহকের প্রিমিয়াম নম্বর ‘ডুয়াল ক্লেইম’ পদ্ধতিতে তুলে নিয়ে গ্রামীণফোনে স্থানান্তর (এমএনপির মাধ্যমে পোটিং) করে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে ছয় মাস আগে বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করা হয়। বিটিআরসি তাৎক্ষণিক এর ব্যাখ্যা চাইলে বাংলালিংক প্রথমে জানায়, বিষয়টি সত্য এবং এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত হচ্ছে। এরপর এ বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও সর্বশেষ নির্ধারিত ২৯ জানুয়ারিও তারা জমা দেয়নি। এরপর ৩১ জানুয়ারি যে প্রতিবেদন জমা দেয় তা অসম্পূর্ণ এবং ওই ঘটনা সংঘটনে বাংলালিংক নিজেদের সম্পৃক্ততা এড়িয়ে বাইরের দুজন প্রতারককে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে।
রবির বিরুদ্ধে বায়োমেট্রিক্স ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে গ্রাহক নিবন্ধন নির্দেশনা লঙ্ঘন এবং বাংলালিংকের বিরুদ্ধে গ্রাহক নিবন্ধন বিষয়ে থ্রিজি ও ফোরজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের শর্ত লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করা হয়। বিটিআরসির কমিশন সভায় রবি আজিয়াটা লিমিটেড এবং বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড উভয় অপারেটরের প্রত্যেককে ৫ কোটি টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ####



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ