পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : পরীক্ষা হলো ফেল করানোর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে অযোগ্য, চিটাগুলো ঝেড়ে ফেলা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে সবাই পাস করছে। সবাই পাস করলে পরীক্ষা নেয়ার কী দরকার?’ এত পাস সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থায় সন্দেহ তৈরি করছে। মানুষের আস্থা কমে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদেরা। এজন্য দেশের পরীক্ষা থেকে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) উঠিয়ে দেয়া, নোট, গাইডবই বন্ধ, বই সহজভাবে তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এ পরামর্শ তুলে ধরেন।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, এমসিকিউ প্রশ্ন শূন্যে নামিয়ে আনা উচিত। এখন কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের রমরমা ব্যবসা হচ্ছে। যদি গাইড বই পড়তে হয়, তাহলে পাঠ্যবই দরকার কী? তিনি পাবলিক পরীক্ষা ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শেষ করার পরামর্শও দেন।
প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, এমসিকিউ প্রশ্নের কারণে নকলের প্রবণতা বাড়ছে। প্রয়োজনে এমসিকিউ প্রশ্নের নম্বর ১৫-তে নামিয়ে আনতে হবে। নকল ঠেকাতে বহুনির্বাচনী প্রশ্নও দুই বা তিন বাক্যে করতে হবে। এমসিকিউ বাদ দেয়া গেলে আরো ভালো হয়।’ পরীক্ষাকে ‘ফেল’ করানোর পদ্ধতি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেল করানোর এ পদ্ধতির মাধ্যমে অযোগ্য, চিটাগুলো ঝেড়ে ফেলা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে সবাই পাস করছে। সবাই পাস করলে পরীক্ষা নেয়ার কী দরকার?’ বিপুল পরিমাণ পাসের সমালোচনা করে বলেন, এত পাস সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থায় সন্দেহ তৈরি করছে। মানুষের আস্থা কমে গেছে। বইমুখী জাতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নিতে আরো বলেন, ‘লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ লাইব্রেরিই নেই। প্রতিটি স্কুলে লাইব্রেরি তৈরি করতে হবে। পরিপূর্ণ সৃজনশীল জাতি গঠন করতে হলে আগে বইমুখী জাতি তৈরি করতে হবে।’
প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার তিনটি ভিত্তি হলো: শিক্ষক, বই এবং পরীক্ষা। শিক্ষকের বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলবো না। কারণ এ দিক দিয়ে আমরা খুবই দুর্বল। জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় হলে ভালো শিক্ষক পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এমনভাবে বই লেখা উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের বাইরের বই পড়তে না হয়। শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে না হয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এখন প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হলো। তাহলে এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করতে হবে। তিনিও এমসিকিউ তুলে দেয়ার পক্ষে মত দেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, চমৎকার পাঠ্যবই তৈরি করতে হবে। ভালো প্রশ্ন করতে হবে। মূল্যায়ন ব্যবস্থা ভালো করতে হবে।
এসময় শিক্ষাবিদরা পাঠ্যবই সহজ করা, এমসিকিউ প্রশ্নে নম্বর বরাদ্দ কমানো, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, গাইড বইয়ের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, কোচিং সেন্টারের উপর নির্ভরশীলতা দূর করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ক্লাসরুম শিক্ষাদান পদ্ধতি আকর্ষণীয় করা, সৃজনশীল প্রশ্ন ব্যাংক প্রণয়ন, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন, শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন, শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকর্ষণ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
শিক্ষাবিদদের পরামর্শের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষাবিদদের এই পরামর্শ অনুযায়ী তাঁরা এখন কর্মপন্থা ঠিক করবেন। তবে এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে তাঁরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিক্ষাবিদদের পরামর্শ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সাহস জোগাবে।
বর্তমানে পরীক্ষার প্রশ্ন দুই ভাগে করা হয়। এর মধ্যে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৪০ নম্বর এমসিকিউ এবং ৬০ নম্বর সৃজনশীল পরীক্ষা হয়। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী বছর থেকে এমসিকিউ ১০ নম্বর কমানো হবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আখতারুজ্জামান ও প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, মানবাধিকার নেত্রী এডভোকেট সুলতানা কামাল, বুয়েটের প্রফেসর আলী আজগর, শিক্ষক সমিতির নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস প্রফেসর মঞ্জুর আহমেদ এবং অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান, শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।