Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দাও’

খুলনায় গুম হওয়া তিন পরিবারের আর্তনাদ

প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা : খুলনা মহানগরী এলাকা থেকে গত ১২ মে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তিন যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে তাদের কোন সন্ধান মেলেনি। এ অবস্থায় অসহায় পিতারা গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা সন্তানদের গুম করার বিশদ বর্ণনা দেন এবং পুলিশ প্রশাসনে ধর্ণা দিয়ে কোন ফল না পাওয়ার অভিযোগ করে সন্তানদের খোঁজ পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসময় সন্তানহারা পিতারা ‘আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দাও’ বলে আর্তনাৎ করতে থাকেন। গত ১৯ মে দৈনিক ইনকিলাব’র ১৬ পাতায় প্রথমবারের মতো ছবিসহ “খুলনায় পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ/মাদরাসার দু’শিক্ষকসহ তিনজনের সপ্তাহ ধরে সন্ধান নেই” শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ডিবি পরিচয়ে গুম আব্দুল্লাহ আল সাঈম তূর্য, শোয়াইব বিশ্বাস ও মোঃ মনিরুল ইসলাম বাবু’র সন্ধান দাবিতে পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আব্দুল্লাহ আল সাঈম তূর্যের পিতা বীর  মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। এ সময় শোয়াইব বিশ্বাসের পিতা মাওলানা আব্দুস সাত্তার এবং মোঃ মনিরুল ইসলাম বাবুর পিতা মাসুদুর রহমানসহ তাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুল ইসলামের একমাত্র সন্তান মোঃ আব্দুল্লাহ আল সাঈম তূর্য খুলনার হরিণটানার বিসমিল্লাহ নগর কওমী মাদ্রাসা ও ইয়াতিম খানার বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে দু’ বছর কর্মরত ছিল। এমতাবস্থায় গত ১২ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টারদিকে মাদরাসা থেকে নগরীর বয়রাস্থ বাসায় যাওয়ার পথে তাকে সাদা মাইক্রোবাসে করে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পরদিন ১৩ মে সন্তানের সন্ধান চেয়ে পিতা শহিদুল ইসলাম হরিণটানা থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ আজও তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি। একই দিন রাত পৌণে ১০টার দিকে নগরীর বয়রা সিএসডি গোডাউনের নিরাপত্তা প্রহরী মাসুদুর রহমানের ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলাম বাবুকে তাদের বয়রাস্থ সিএসডি কলোনির বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে পিতা-মাতার কাছ থেকে জোরপূর্বক টেনে-হিচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে দু’জনের হাতে ওয়্যারলেস ও দু’জনের কোমরে পিস্তল ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরাই ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন পিতা মাসুদুর রহমান । এ ঘটনার পরই খালিশপুর থানা ভবনে ডিবি অফিসসহ নগরীর বিভিন্ন থানায় তাকে খোঁজাখুজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ১৩ মে তিনি খালিশপুর থানায় জিডি করেন। একই দিন সকাল সোয়া ১০ টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে নগরীর বৈকালী বাজারের বায়তুন নাজাত জামে মসজিদ কোয়াটারের বাসা থেকে ওই সমজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুস সাত্তারের ছেলে হরিণটানার বিসমিল্লাহ নগর কওমিয়া মাদরাসা ও ইয়াতিম খানার আরবি বিভাগের শিক্ষক মো. শোয়াইব বিশ্বাস নিখোঁজ হয়। মোবাইলে রিং হলেও কেউ রিসিভ করেনি। এরপর থেকে সেও নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায়ও মাওলানা আব্দুস সাত্তার ১৩ মে খালিশপুর থানায় জিডি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ সন্তানদের পিতা-মাতারা বলেন, মনিরুল ইসলাম বাবুকে যেভাবে ডিবি পরিচয়ে জোরপূর্বক তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তেমনি তূর্য ও শোয়াইব বিশ্বাস অপহরণের বিষয়গুলোও একই সূত্রে গাঁথা। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা যারাই অপহরণ বা গুম করুক না কেন, অবিলম্বে তারা তাদের সন্তানদের সন্ধান দাবি করেন। একই সঙ্গে কোন অভিযোগ থাকলে গুম না রেখে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। নিখোঁজ সন্তানদের ফিরে পেতে তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দাও’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ