Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগে ভাটা

বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিনিয়োগের প্রস্তাব কমেছে ২৫%

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১:৩৪ এএম, ৯ মে, ২০১৯

দেশে নিবন্ধিত বিনিয়োগের হার কমেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে নিবন্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) নিবন্ধিত স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ প্রকল্পের নিবন্ধন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিডার পরিসংখ্যান বলছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের (স্থানীয় ও বিদেশী) সংখ্যা ৩২৮। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছিল ৪০৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে নিবন্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে গত প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) চেয়ে বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিনিয়োগের হার বেড়েছে।
সম্প্রতি কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাবের ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভ্যারওয়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতারণা এবং দুর্নীতিকে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশের চেষ্টার সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ের কথা বলেছেন।
এদিকে, বিনিয়োগের জন্য সারাদেশে কমপক্ষে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করা হয়েছে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক এ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও টেকসই করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে পণ্য রফতানি বাবদ অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
বেজার হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে- বাগেরহাটে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মৌলভীবাজারে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, নারায়ণগঞ্জে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন, আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সীগঞ্জে আব্দুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরে বে অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী ড্রাই ডক ইকোনমিক জোন এবং কিশোরগঞ্জে কিশোরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, বেজার হালনাগাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেশির ভাগই বেসরকারি খাতের। এগুলো বাদে মোংলায় শিল্প হচ্ছে, মিরসরাইতে শিল্প হচ্ছে। বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত আছে মৌলভীবাজার এবং ফেনীও। সব মিলিয়ে ১৪টি অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। বেজা এ মুহূর্তে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কাজ করছে।
যদিও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের (২০১৮ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় নিবন্ধিত বিনিয়োগ বেড়েছে বলে বিডার পরিসংখ্যানে উঠে আসে। ওই সময়ে নিবন্ধিত ৪০৩টি শিল্প ইউনিটের প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় নিবন্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বিডা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ২৮৫টি। এসব ইউনিটের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১৪ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে নিবন্ধিত ৩৪৮টি স্থানীয় শিল্প ইউনিটের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিবন্ধিত স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবনা বেড়েছে আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকের বিপরীতে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাবনা কমেছে বলে পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশে স্থানীয় পর্যায়ের নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবনার পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ের বিনিয়োগ প্রস্তাবনার অর্থের পরিমাণ কমেছে ৪৬ শতাংশেরও বেশি।
বিডার তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৮টি শতভাগ বিদেশী ও ২৫টি যৌথ বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত শিল্পে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৮ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় এ সময় বিদেশী ও যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাবনা বেড়েছে ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।
গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনার ক্ষেত্রেও এ বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বিদেশী ও যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাবনায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে শতভাগ ও যৌথ মিলিয়ে মোট প্রস্তাবিত বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিবন্ধিত বিদেশী বিনিয়োগ প্রস্তাবনার পরিমাণ বেড়েছে ১১০ শতাংশ।
বিডার তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্থানীয় ও বিদেশী মিলিয়ে মোট বিনিয়োগ প্রস্তাবের ১৭ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রকৌশল শিল্প খাতের। এছাড়া মোট বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে সার্ভিস বা সেবা শিল্প খাতে রয়েছে ১৭ দশমিক ১৩ শতাংশ, কেমিক্যাল শিল্প খাতে ১৭ দশমিক শূন্য ৬ ও টেক্সটাইল শিল্প খাতে রয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে বিবিধ শিল্প খাতে, যা মোট বিনিয়োগ প্রস্তাবনার ৩৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেছেন, আগের প্রান্তিকের চেয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রবণতা ইতিবাচক। তবে এটা উৎপাদনশীল খাতে আসছে কি না, কর্মসংস্থান বাড়ছে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৮০০-৯০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। সে তুলনায় বিনিয়োগ এখনো কম।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও এ দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এত দিন বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল না। এখন সেটা নানাভাবে বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো খুব ভালো ব্যবসা করছে, উচ্চ হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। জাপানের বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা জেট্রোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মুনাফার সম্ভাবনা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। ব্যবসা সহজ করতে বিডা কাজ করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াবে।#



 

Show all comments
  • Mohammad ৯ মে, ২০১৯, ১:০০ এএম says : 0
    জাপানী কোম্পানি আকিজ বিড়ি কিনে নিল। এগুলোকে বিনিয়োগ বলে?
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan ৯ মে, ২০১৯, ১:০০ এএম says : 0
    কর্মসংস্থান তৈরী করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করা জরুরী। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু প্রতি বছর লাখ লাখ গ্রাজুয়েট তৈরী করছে কিন্তু দক্ষ জনশক্তি তৈরী করতে পারছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী কোর্স চালু করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে তাদের বেশীর ভাগই অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স করা। অনেকেই ইংরেজীতে একটা দরখাস্তও লিখতে পারে না। এইজন্য এইসব সস্তা অনার্স মাস্টার্স কমিয়ে বেশী করে পলিটেকনিক বা টেকনোলোজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। যেখান থেকে ছাত্ররা সার্টিফিকেটের পাশাপাশি যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। ফলে তারা সহজে চাকুরী পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ মাহাদী ৯ মে, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    বিনিয়োগের জন্য সারাদেশে কমপক্ষে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করা হয়েছে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • জয়নাল হাজারি ৯ মে, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    সমস্যা নেই। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রায় সম্পন্নের দিকে। আশা করা যায় বিনিয়োগ বাড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাঞ্চন দে ৯ মে, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    আমার মনে হয় দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিনিয়োগ প্রস্তাব বাড়বে। কারণ এখন অনেক উদ্যোগ সম্পন্নের দিকে।
    Total Reply(0) Reply
  • গালিব রহমান ৯ মে, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    দেশে তো কোনো অস্থিতিশীলতা নেই তবুও বিনিয়োগে ভাটা পড়বে কেন? সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সিরিয়াসলি কাজ করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগে ভাটা

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ