Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাগমারায় নীতিমালা লঙ্ঘন করে কৃষি জমিতে দীঘি খননের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলতাফ হোসেন রাজশাহী (বাগমারা) থেকে : রাজশাহীর বাগমারায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়। কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ছে।
উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের পার মচমইল বিলে বিভিন্ন এলাকার কিছু অসাধু, কুচক্রী মহলের লোকজন একত্রিত হয়ে আবাদি জমিতে মৎস্য চাষের জন্য দীঘি খনন করছে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি।
আবাদি জমি নষ্ট করে দিঘী খনন বন্ধ করতে গত ২৫ জানুয়ারি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পার মচমইল গ্রামবাসীর পক্ষে জোনাব আলী একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করে। জমির প্রকৃতি পরিবর্তনে মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানা হচ্ছে না সেই আদেশ।
পার মচমইল আবুল কাসেম, মহসিন, আয়ুব আলী, আবুল কালাম আজাদ, রফাতুল্লাহ, মহরমসহ অনেকে জানান তাদের জমিতে জোরপূর্বক দীঘি খনন করছে। কৃষিজমিতে দীঘি খননের ফলে হুমকির মুখে পড়ে বিলে থাকা অন্যান্য জমি। দীঘি খননের কারণে ওই বিলে থাকা কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কৃষদের স্থাপন করা একটি গভীর নলক‚প বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। কৃষকরা জানান গভীর নলকূপের আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকা প্রায় ১২শ ফুট পানি চলাচলের ড্রেনটি তুলে ফেলা হচ্ছে। এ জন্য দীঘি খননের কারণে গভীর নলকূপের আওতায় থাকা কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে যাবে।
পাশাপাশি খাদ্য সংকটে পড়বে এলাকার কৃষরা।
তারা দীঘি খনন কাজে বাধা দিলেও হয়নি কোন কাজ। অভিযোগকারীরা আরো জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের লোকজনকে দেখাতে অন্য স্থান থেকে সেচ মেশিনের সাহায্যে পানি এনে কৃত্রিমভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সেই জমিতে কৃষকরা গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেই স্থানে ধান চাষ করে আসছিল। নাম প্রকাশ না করা শর্তে দীঘি খননকারীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই তারা দীঘি খনন করছে বলে জানান তারা।
সরেজমিন উপজেলার ঝিকরা, গোয়ালকান্দি, বাসুপাড়া, মাড়িয়া, নরদাশ, বড়বিহানালী, মচমইল, গণিপুর ও দ্বীপপুর ইউনিয়ন এলাকায় জমির প্রকৃতি পরিবর্তনের দৃশ্য দেখা যায়। কৃষিজমিগুলোর প্রকৃতি পরিবর্তন করে এখন জলাশয় করা হয়েছে। জলাশয়ের চারপাশে রয়েছে উঁচু পাড়।
এছাড়াও ওইসব এলাকার কৃষিজমিগুলোতে ড্রেজার মেশিন (খননযন্ত্র) বসিয়ে এখনো পুকুর খনন করা হচ্ছে। অথচ মন্ত্রণালয় নির্দেশ রয়েছে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। নীতিমালা জারির পর থেকে কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে ৪২টি পুকুর খনন করা হয়েছে এবং আরও ২২টির কাজ চলছে বলে জানা যায়। গত বছরের ১১ জুন ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এটিএম আজাহারুল ইসলামের স্বাক্ষর করা নীতিমালা সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, কৃষিজমি যতটুকু সম্ভব রক্ষা করতে হবে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জমির প্রকৃতিগত কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।
এই চিঠির অনুলিপি ওই বছরের ২২ জুলাই রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছেছে।
একই সময়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ওই নীতিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠির একটি কপিও পাঠানো হয়েছে বলে উভয় দপ্তরের দায়িত্বশীল দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
গত ডিসেম্বর ও চলতি মাসে ওইসব এলাকার পাঁচ শতাধিক কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, এলাকার প্রভাবশালীরা কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করছেন। অভিযোগে তারা বলেছেন, প্রথমে প্রভাবশালীরা স্থানীয় কিছু লোকজনের কাছ থেকে কৃষিজমি তিন বা ১০ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে সেখানে পুকুর খনন শুরু করেন। পরে কৌশলে ওই পুকুরের আশপাশের অন্য জমির মালিককেও তাদের জমি ইজারা দিতে বাধ্য করাচ্ছেন।
গোয়ালকান্দির রামরামা এলাকার এবাদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ও রমজান আলীর বিরুদ্ধে কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রকৃতি পরিবর্তনের অভিযোগ রয়েছে।
তবে এই বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। প্রতি বছর বিঘাপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয় ইজারা মূল্য হিসেবে। ঝিকরার আবদুল মানিক, বাসুপাড়ার জেকের আলী, গোয়ালকান্দির আবদুল মজিদ, লতিফ নামের কৃষক অভিযোগ করে বলেন, তাদের পুকুর খননের জন্য কৃষিজমি দিতে না চাইলে ইজারা নেয়া আশপাশের জমিতে ড্রেজার দিয়ে খনন শুরু করে তাদের জমি পরিত্যক্ত করা হয়।
একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাদের জমিও প্রভাবশালীদের পুকুর খননের জন্য দেয়া হয়েছে। উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের রামরামা এলাকায় কৃষিজমিতে এবাদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, রমজান আলী, সুজন সরকার, ফজলুর রহমান, লতিফ সরকার, বাসুপাড়ায় আবদুল জববার, মোশারফ হোসেন, বাবুল হোসেন, কামাল, ইউনুস আলী, আবদুস সালামসহ কমপক্ষে ৫৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ৪২টি পুকুর খনন করেছেন। কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খননকারী মোশারফ হোসেন, বাবুল হোসেন, জমির মালিকের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করেছেন। তবে তারা জমির প্রকৃতি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদন করেননি বলে জানিয়েছেন।
গত বুধবার সরেজমিন বাগমারার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষিজমিতে পুকুর খননের দৃশ্য দেখা যায়। ওই এলাকার প্রভাবশালী ড্রেজার বসিয়ে পুকুর খনন করছেন।
এদিকে কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তন করার কারণে আবাদি জমির পরিমানও কমে যাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাগমারায় নীতিমালা লঙ্ঘন করে কৃষি জমিতে দীঘি খননের অভিযোগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ