Inqilab Logo

রোববার, ০২ জুন ২০২৪, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

প্রথম রমজানেই রাজধানীতে জমজমাট ইফতার বাজার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

প্রতিবছরের মতো এবারের রমজানেও দুপুরের পর থেকেই ইফতারকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠে রাজধানী। মাথায় টুপি লাগিয়ে ইফতার বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা যতই গড়ায়, ততই বাড়ে ক্রেতার সমাগম। কি ফুটপাত, কি পাঁচতারা রেস্টুরেন্ট, পাড়া-মহল্লার গলিপথেও ইফতারির ছোট-বড় দোকান। কোথাও কোথাও রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে ইফতারির দোকান।
বিভিন্ন রঙের সামিয়ানা, বাঁশ আর টেবিল বসিয়ে পুরো ফুটপাত দখলে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। সর্বত্রই ক্রেতাদের আকর্ষণে চলছে বাহারি রঙ, আর স্বাদের ইফতারি আইটেম তৈরির প্রতিযোগিতা। দুপুর থেকে ইফতারির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পুরো রাজধানী এক ব্যস্ত ইফতারের নগরীতে পরিণত হয়। বেইলী রোড, চকবাজার ও হাতিরপুর এলাকায় নবাবী ঘিয়ে ভাজা বোম্বে জিলাপী, রেশমী জিলাপী, নবাবী স্পেশাল ফির্নি, নবাবী ক্ষিরসা, ফালুদা, নবাবী টানা পরোটা, কাশ্মিরী নবাবী পরোটা, চিকেন রেশমী কাবাবসহ চকবাজারের ‘বড় বাপের পোলাই খায়’ বেশ জনপ্রিয় ইফতারি। বেইলী রোডের ইফতার ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, আজকে রহমতের প্রথম দিন। আর এইদিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করবো। যার জন্য রেশমী জিলাপী, নবাবী স্পেশাল ফির্নি, নবাবী ক্ষিরসা ফালুদা, কাশ্মিরী নবাবী পরোটা কিনলাম। চকবাজারের ইফতারি ঐতিহ্যগতভাবেই বিখ্যাত। কিন্তু সেখানে পরিবার নিয়ে ইফতার করতে গেলে অনেক যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। তাই ৫-৭ রোজায় সেখান থেকে ইফতার কিনবো।
এদিকে ধানমন্ডি, পলাশী ও আজিমপুর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ইফতার সাজিয়ে দোকানিরা মেতে উঠেছেন। ধানমন্ডির ৯ নম্বর রোডের ইফতার বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, এবার আমরা যত রকমের ইফতারের আইটেম তুলে এনেছি, তাতে সাধারণ ক্রেতাসহ সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবো। যেমন- আমাদের কাছে বিশেষভাবে পাবেন মাটন লেগ রোস্ট, স্পেশাল গরুর তেহারি, স্পেশাল ফালুদা, নবাবী বোরহানীসহ বহু পদের খাবার।
বেলা ৩টা থেকেই জমে উঠে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারি বাজার। পুরান ঢাকার বাহারি ইফতারের গন্ধ যেন ক্রেতাদের আরও বেশি করে ইফতারের আইটেম কিনতে বাধ্য করছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে এসেছেন ভোজন রসিকরা। উত্তরা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অনেকেই ইফতারি কিনতে এখানে এসেছেন। তারা জানান, টানা কয়েক বছর ধরে প্রথম রোজাসহ প্রায় রোজাতে চকবাজার থেকে ইফতার কিনে নিয়ে যান। চকের ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’, দই বড়াসহ অনেক খাবারের লোভেই নতুন ঢাকার খাদ্য রসিকরাও ছুটে আসেন পুরান ঢাকার ইফতারি বাজারে।
গতকাল সরেজমিনে চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, দুপুর থেকেই দোকানিরা বৈচিত্র্যে ভরপুর লোভনীয় ইফতার সামগ্রী থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে টেবিলে। বাহারি সেই ইফতার কিনতে প্রথম দিনই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাহারি ইফতারের মধ্যে গরুর সুতি কাবাব কেজিপ্রতি ৬০০-৬৫০ টাকা, খাসির সুতি কাবাব ৮০০-৮৫০, সামি কাবাব ৪০-৫০, টিক্কা কাবাব ৩০-৪০, চাপালি কাবাব প্রতি পিস ৫০-৬০, মুরগির রোস্ট প্রতি পিস ১২০-২৫০, আস্ত মুরগি মোসাল্লাম’র পিস ৩৫০-৪০০ টাকা।
দুধ ও পেস্তা বাদামের শরবত লিটারপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা, লাবাং ২৫০-২৮০, ফালুদা বড় বক্স ১৫০-২০০ টাকা। জিলাপির কেজি ১৫০-২০০ এবং ঘিয়ে ভাজা জিলাপি ৪০০-৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টানা পরোটা ৩০-৪০ টাকা, খাসির গোশতের কিমা পরোটা ৬০-৭০ টাকা, গরুর গোশতের কিমা পরোটা ৪০-৫০ এবং ৫-১০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, সমুচা।
তারা আরও জানান, বাহারি ইফতারি তৈরিতে পুরান ঢাকার চকবাজারের রয়েছে কয়েকশ বছরের ঐতিহ্য। মোগল আমল থেকে চকবাজারের এই ইফতারি ঐতিহ্য গড়ে ওঠে। যারা এখন বাজারটিতে ইফতারি বিক্রি করছেন তাদের অধিকাংশই বংশ পরম্পরায় ব্যবসায় এসেছেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর বাব-দাদাও এখানে ইফতারি সামগ্রী বিক্রি করতেন।
চক বাজারের আসাদ বাবুর্চি জানান, এবার নতুন আইটেম হিসেবে তিনি এনেছেন বড় সাইজের আস্ত মুরগির রোস্ট। এর প্রতিটির দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া তার আরেকটি নতুন মুঘল আইটেম ‘আনাম খাসি’ ছোট আকারের আস্ত খাসির রোস্ট। দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য আইটেমের মধ্যে তিনি বিক্রি করছেন কোয়েল পাখির রোস্ট প্রতি পিস ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং চিংড়ি প্রতি পিস ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ