Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় হাতি বনাম চাঁদাবাজ হাতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ খবরের ডামাডোলের পাশে ৪ মে পত্রিকাগুলোয় ‘চাঁদাবাজ হাতি’ শিরোনামে ছোট্ট একটি খবর ছাপা হয়েছে। খবর ছোট হলেও অধিকাংশ পত্রিকায় হাতির ছবি ছাপানোয় খবরটি পাঠকের দৃষ্টি এড়ায়নি। খবর হলো ‘রাজধানীর কাওরান বাজারে হাতি নিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার সময় দুটি হাতিকে আটক করা হয়। এ সময় চাঁদাবাজির অভিযোগে হাতি দুটির দুই মাহুতকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।’ র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। তিনি সাংবাদিকদের জানান, মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগে দুটি হাতিকে আটক করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী হাতি দুটিকে উদ্ধার করে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো- হাতি কি সত্যিই চাঁদাবাজ! নাকি হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি! আর বর্তমানে দেশে যে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে, প্রকৃত অর্থে সেই চাঁদাবাজির সংজ্ঞায় কি হাতির অর্থ আদায় পড়ে?
রাজধানীতে হাতি দিয়ে টাকা উঠানোর ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রায়ই বিভিন্ন স্পটে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। সে দৃশের সঙ্গে দেখা যায় ছেলে-ছোকরাদের হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ-ফুর্তি, দৌড়ঝাঁপ। হাতি দিয়ে এভাবে টাকা উঠানো হয়; আর সে দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশুরা আনন্দ করে। ‘রথ দেখে কলা বেচা’ প্রবাদের মতো অনেকেই টাকা দিয়ে নিজের এলাকায় হাতি দেখার তৃষ্ণা মেটান। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগ্রহ নিয়ে হাতিকে টাকা দিচ্ছেন। দেখা যায়, হাতি দিয়ে মাহুত ৫ টাকা ১০ টাকা তুলছেন, সেই অর্থদাতা হাতির শুঁড়ের মুখে টাকা গুঁজে দিয়ে আনন্দ পাচ্ছেন। মহল্লার শিশুরা হাতির পিছে পিছে হাঁটছে এবং টাকা তোলার দৃশ্য উপভোগ করছে। অতীতে এমন চিত্র ঢাকায় কম দেখা গেলেও সারা দেশে পুরনো দৃশ্য। বানর খেলা দেখিয়ে পয়সা আদায়, সাপ খেলা দেখিয়ে বেঁদেদের সংসার চালানো নতুন কোনো ঘটনা নয়। চিড়িয়াখানায় পশুপাখি দেখতে দর্শককে টিকিট ক্রয় করে প্রবেশ করতে হয়। চিড়িয়াখানায় টিকিট বিক্রি কোন সংজ্ঞায় ফেলবেন?
২০১৬ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি হঠাৎ বন্যার বানের পানিতে উজান থেকে হাতি ভেসে আসার খবর মনে পড়ে? ১৫ আগস্ট ভারতের আসাম থেকে একটি হাতি বানের পানিতে পড়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসতে ভাসতে যমুনায় আসে। অতঃপর কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার যমুনার বিভিন্ন স্পটে কয়েক দিন হাতিটি বানের পানিতে ভাসতে থাকে। নিরীহ হাতিটির ভেসে বেড়ানোর অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দেখে কোটি কোটি মানুষ আহাজারি করেছে। দলবেঁধে মানুষ সারা দিন নদীপাড়ে বসে হাতির কীর্তিকলাপ উপভোগ করেছে। বাংলাদেশ সরকার সে সময় ভারত সরকারকে এ নিয়ে বার্তা পাঠায়। ভারত সরকার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বাংলাদেশে পাঠায় হাতির অবস্থা দেখার জন্য। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো ভারতীয় হাতির খবর নিয়ে রঙ-বেরঙের খবর প্রচার করে। একটি হাতিকে বাঁচাতে ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বানের পানিতে ভেসে আসা হাতিটিকে বাঁচানো যায়নি। মৃত হাতিকে মাটিতে পুঁতে রাখার দৃশ্য দেখে সেদিন অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সেই নিরীহ হাতি কি চাঁদাবাজি করতে পারে? প্রাণী কি চাঁদাবাজ হয়? দেশে অনেক মানুষ গ্রাম থেকে গ্রামান্তর ও শহর-বন্দরে ঘুরে বানরের খেলা দেখিয়ে পয়সা রোজগার করেন। সেই পয়সায় সংসার চালায়। ঢাকার আশপাশে মুন্সীগঞ্জ, ডেমরা, সাভার, মানিকগঞ্জসহ অনেক এলাকায় বেঁদেরা অস্থায়ীভাবে নদীপাড়ে বসবাস করেন। তারা সাপের খেলা দেখিয়ে, শিঙ্গা ফুঁ দিয়ে, দাঁতের ভেতর থেকে পোকা বের করে অর্থ নিয়ে সংসার পরিচালনা করে থাকেন। তাদেরকে চাঁদাবাজ বলা সম্ভব? চাঁদাবাজির সংজ্ঞা রয়েছে। তারপরও বলা যায়, কেউ হাতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সেটার জন্য হাতির মাহুতকে দায়ী করা উচিত। আর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানুষ ইচ্ছা করেই হাতিকে ৫ টাকা ১০ টাকা দিয়ে থাকেন। যারা অর্থ দেন তারা এবং আশপাশের ছেলেমেয়েরা হাতির টাকা আদায়কে শ্রেফ বিনোদন হিসেবে উপভোগ করেন। সেই হাতিকে ‘চাঁদাবাজ’ অভিহিত করা কতটুকু যুক্তযুক্ত? ‘চাঁদাবাজ হাতি’ শিরোনামের খবর দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাজনে নানান মন্তব্য করেছেন। একজন লিখেছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিদিন পরিচালনা করা ভোক্তাদের জন্য সুখবর। কিন্তু কার কাজ কি সেটা বুঝতে হবে। ভেজাল খাদ্য অভিযান সাধুবাদ। কিন্তু সব কিছুতেই ‘হিরো বনেগা’, এটা উচিত নয়।



 

Show all comments
  • ismail hossain ৫ মে, ২০১৯, ১০:২০ এএম says : 0
    হাতি দিয়ে ব্যস্ত জনসমাগম স্থানে চাঁদা আদায় অবশ্যই গর্হিত কাজ, এটি একটি হিংস্র প্রাণী, যেকোন সময় বড়ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর সপক্ষে সাফাই কেন গাওয়া হলো? আপনি বাঘ পালন করতে চাইলেই কি পারবেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Ivan ৫ মে, ২০১৯, ১:০৬ পিএম says : 0
    নেই কাজ তো খঁই ভাঁজ। গুরুত্বপূর্ণ খবর বাদ দিয়ে এসব কি? আর পোষ মানানো হাতি সভ্য হলেও অনেক সময় মানুষের উৎপাতে হিংস্র হয়ে উঠে এবং তখন জান মালের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি করে। পোষ মানানো হাতি উত্তেজিত হয়ে ব্যাপক ধ্বংস চালিয়েছে এরকম ভিডিও ইউটিউবেই অনেক আছে। বিশেষ করে ভারতে এবং শ্রীলংকায় এধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি অবশ্যই গর্হিত কাজ। তাই অংকুরেই এ ধরনের অবৈধ কাজকে উৎপাটন করা উচিত; বন্য হাতি ধরে ধরে এ ধরনের অনৈতিক কাজকে নিরুৎসাহিত করা উচিত; আর ভবিষ্যৎ দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ