পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফণা তুলেছে ঘূর্ণিঝড় ফণি : কাল আঘাতের আশঙ্কা ভারত-বাংলাদেশে : ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক উপকূলে প্রস্তুত : চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পূর্ণ সতর্কতা ও প্রস্তুতি : ৩০ মে ২০১৭ সালের ‘মোরা’র মতো হবেনা তো?
‘ফণি’ মানে বিষধর কালনাগিন সাপের ফণা। অবশেষে ফণা তুলেছে ঘূর্ণিঝড় ফণি। ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। ৪ নম্বর সঙ্কেতের পরিবর্তে আজ বৃহস্পতিবার এক লাফে বিপদ সঙ্কেত উঠে গেছে ৭-এ। আবহাওয়া বিভাগ আগামীকাল শুক্রবার ফণির আঘাতের আশঙ্কা ভারত-বাংলাদেশে। রেডক্রিসেন্ট ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আওতায় ১৯টি উপকূলীয় জেলায় ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে সমগ্র উপকূল চর ও দ্বীপাঞ্চলে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে পূর্ণ সতর্কতা ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের উপকূলজুড়ে জনমনে অজানা ভীতি-আতঙ্ক ও শঙ্কা দানা বেঁধে উঠেছে।
আবহাওয়া বিভাগ ৪ নম্বর সতর্কতা থেকে এক লাফে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত ঘোষণা করার পর সর্বত্র সাধারণ সচেতন মানুষের মাঝে যে প্রশ্নটি ঘোরপাক খাচ্ছে তা হলো- ফণির অবস্থা ‘মোরা’র মতো হবে নাতো? বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রচ- শক্তি এবং বাংলাদেশে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে আবহাওয়া দপ্তর ২০১৭ সালের ২৯ মে রাতে হঠাৎ করে দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করেছিল। শেষ পর্যন্ত ৩০ মে’১৭ইং সকালে ‘মোরা’র আঘাতটি ছিল খুবই মামুলি ধরনের। তাও কক্সবাজারের কিছু জায়গায় সীমিত থাকে।
অতিমাত্রায় তোড়জোড়ের মধ্যদিয়ে এহেন সস্তা ক্রেটিট নেয়ার চেষ্টার বিষয়টি তখন জনমনে সমালোচিত হয়। তাছাড়া সত্যিকারের ‘দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতে’র বিশ^াসযোগ্যতা ও এর গুরুত্বও হালকা করা হয়। অবশ্য ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সংঘটিত প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর আরো কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সঙ্কেত বাস্তবসম্মত প্রমাণিত হয়নি। তবে সিডর, আইলাসহ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।
এদিকে সর্বশেষ আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে আজ সকালে জানা গেছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণি সামান্য উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৯ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯২৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ফণি আরও ঘনীভূত ও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল ৩ মে বিকাল নাগাদ ভারতের উডিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে হয়ে ৩ মে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৩ মে সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ দেলোয়ার হোসেন। উপকূলীয় উপজেলাগুলোর ইউএনওকে আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার, স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য আঘাতের আশঙ্কায় পূর্ব-প্রস্তুতি ও সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে বন্দর চ্যানেল (কর্ণফুলী) থেকে সব নৌযান শাহ আমানত সেতুর পূর্বপাশে বা নিরাপদ পোতাশ্রয়ে পাঠানো হচ্ছে। বন্দর স্থাপনাসমূহ, কন্টেইনার স্টেকিং, জেটি-বার্থগুলোর এবং জাহাজের নিরাপত্তার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।