পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে ল-ভ- উপকূলীয় জনপদে হাহাকার চলছেই। ঝড়ের তা-বে ও জোয়ারের প্লাবনে আশ্রয়হীন পরিবার শূন্যভিটায়, খোলা আকাশের নিচে কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। তাদের জীবন কাটছে এখন অনাহারে-অর্ধাহারে। সংকটে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র ৫ম দিন অতিবাহিত হলেও তেমন কোন সরকারি ত্রাণ পৌঁছেনি। ফলে হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। জোয়ারে মৎস্য খামার তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খামারীদের। নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা করছে উপকূলীয় মানুষ।
রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে ল-ভ- চট্টগ্রামের উপকূলীয় জনপদে দুর্গত মানুষের হাহাকার চলছে। ত্রাণ নেই, মাথার উপর চাল নেই, শূন্য ভিটায় খোলা আকাশের দিন কাটছে তাদের। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে যারা বাড়ি ফিরে গেছেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের কারণে স্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এতে করে দুর্গতদের ঘুরে দাঁড়ানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। আর যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন তাদেরও দুর্ভোগের অন্ত নেই। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দাদের। দুর্গতদের অভিযোগ দুর্যোগের ৫ দিন পরও তারা সরকারি সাহায্য পাননি। বেসরকারি সাহায্যও উল্লেখ করার মতো কিছু মিলেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও দুর্গতদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না। এতে করে চরম অসহায় অবস্থায় রয়েছে দুর্গত লাখো মানুষ। সরকারি হিসাবে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলার উপকূলীয় এলাকার ১০৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে এখন কেউ নেই।
শনিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১২৭ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র তা-বের সাথে প্রায় দশ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মহানগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা, কাঁচা বসতঘর, শিল্প-কারখানা ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রবল জোয়ারের পানিতে ডুবে গিয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আছাদগঞ্জসহ মহানগরীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। শুধু চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ১২শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী। বাঁশখালীর তিনটি ইউনিয়ন খানখানাবাদ, ছনুয়া ও গন্ডামারার প্রায় প্রতিটি গ্রাম বিরানভূমিতে পরিণত হয়। বাড়িঘর, ক্ষেতের ফসল, গোয়ালের গরু-ছাগল, পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে যায়। ১০ হাজার মানুষ এখনও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই তাদের। বিধ্বস্ত বাড়িঘরের উপর দিয়ে কয়েক ফুট স্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা জানান, তারা সরকারি সাহায্য পাচ্ছে না। ধনাঢ্য ব্যক্তি, বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাঁশখালীর দুর্গত মানুষের জন্য নগদ ২ লাখ টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছে। তালিকা ধরে তাদের সাহায্য দেয়া হবে। তবে দুর্গত মানুষের দাবি এ মুহূর্তে জরুরী সাহায্য। বিশেষ করে খাবার ও পানির অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। দীর্ঘদিন থেকে বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় এবারের জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও এবার ধসে গেছে। এতে করে জোয়ারের কারণে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না দুর্গতরা। নোনা পানির কারণে ফসলের পাশাপাশি গাছপালাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে উপকূলীয় জনপদ।
একই অবস্থা আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের। পর্যাপ্ত ত্রাণ নেই, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে দুর্গতদের। সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হলেও এখনও পর্যন্ত জরুরী ত্রাণ সামগ্রী পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ে আনোয়ারার উপকূলীয় কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় স্বাভাবিক জোয়ারে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। একই অবস্থা দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপেও। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হয় সাগর কূলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। সেখানেও বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সন্দ্বীপের দুর্গত মানুষেরাও সরকারি ত্রাণ সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার উপকূলীয় এলাকার ১০৪টি ইউনিয়নের ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬ জন লোক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৪১১ জন মানুষ। আর আংশিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন ৪ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ জন মানুষ। সরকারি হিসাবে, চট্টগ্রামে রোয়ানু’র আঘাতে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৯ হাজার ৪৩৭টি পরিবার সম্পূর্ণরূপে এবং ৮৩ হাজার ৬৬০টি পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের হিসাব দিয়ে জানানো হয়, ১৫৪ একর ফসল সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার ৫৪১ একর ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রাথমিক হিসাবে, চট্টগ্রাম জেলায় ২০ হাজার ৮৯২টি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ও ২৫ হাজার ৭৬৬টি ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং ৪৭ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ এবং ১৪৪ একর সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ে ২৭ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ও ৬৬ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদি পশুর মধ্যে ৮০টি গরু ও ৪০ হাজার ৫৫০টি হাঁস-মুরগি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন মায়াসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী দুর্গত এলাকা সফর করে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী দেয়ার আশ্বাস দিয়ে গেছেন।
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতেও
মিলছে না সাহায্য!
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, মেঘনা নদীর বাঁধের কোল ঘেঁষে খোলা আকাশের নিচে চটের ওপর ভেজা চাল শুকাচ্ছেন মফিজ নাজির। জ্যৈষ্ঠের রোদ-তাপ আর ঠিকমতো না খেতে পেয়ে মুখটা যেন শুকনো কাঠ হয়ে গেছে তার। পাশেই পড়ে আছে রোয়ানু’র তা-বে ভেঙে যাওয়া ঘরের টিন ও অন্যান্য উপকরণ। নতুন করে ঘর গড়ার সামর্থ্য না থাকায় পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের মধ্য দিনরাত পার করছেন তিনি।
এ বয়সে এমন পরিস্থিতির শিকার হওয়াটাকে কেবলই ভাগ্যের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে সান্ত¦না দিচ্ছেন মফিজ নাজির। মলিন মুখে তিনি জানালেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে বড় শিকার তারা। কিন্তু এখনো পায়নি কোনো ধরনের সহায়তা। মুখটি ফিরিয়ে নিয়ে ফের চলে যান ভাঙা ঘরটির কাছে।
মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে সরেজমিনে ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ভুলাইকান্দি নামের এ এলাকায় মফিজ নাজিরের মতো প্রায় ৪০টি পরিবারেও একই চিত্র দেখা গেছে।
তিনদিন ধরে তিন বছর বয়সি শিশু অসুস্থ। এখনো ওষুধ তো দূরের কথা, ঠিকমতো খাবারই দিতে পারছেন না জসিম উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া।
ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাগো এলাকায় বেশি ঝড় আর ক্ষতি হয়েছে। কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমরা তো গরীব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। আমাগো তো আর জমানো টাকা নাই, ওষুধ, খাবার কিনে ছাওয়ালদের খাওয়াবো’।
কথাগুলো বলতেই কণ্ঠ বন্ধ হয়ে যায় রাবেয়ার। পাশেই থাকা বৃদ্ধা জাবেদা ভারী কণ্ঠে জানান, তাদের দেখার কেউ নেই। কয়েকদিন ধরে আকাশের নিচে থাকলেও কেউ তাকিয়ে দেখে না।
অভিযোগ করে মিজান জানান, মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ অনেকেই রাস্তা দিয়ে আসেন আর ওদিক দিয়ে চলে যায়। তাদের কাছে এসে কেউই খোঁজ-খবর নেন না। অসহায়দের পাশে কেউ দাঁড়ান না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙা ঘর-বাড়ির স্তুপ পড়ে আছে এলাকাটিতে। সবার চোখে-মুখে হতাশা আর উৎকণ্ঠা। কেউ কেউ কোনো রকমে ছাপড়া করে রান্নাসহ অন্যান্য কাজ সারছেন। শিশুরা এলোমেলোভাবে ঘোরাঘুরি করছে।
চাঁদপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড দেওয়ানপুর এলাকাতেও দেখা গেছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র তা-বের চিহ্ন। এ এলাকাতেও যায়নি কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা। জেলে নির্ভর এলাকাটিতে অসহায়ের মতো দিনযাপন করছেন তারা।
এলাকাবাসী জানান, এ গ্রামে সবচেয়ে বেশি কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে আর কতো সময় পার করতে হবে এমন জিজ্ঞাসা সবার মনে। নিজেদের গরীব বলে সান্ত¦না দিয়ে কতো দিন-রাত পার করতে হবে তাও তারা জানেন না।
শশীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দারাও একই তথ্য জানান। সবার দাবি, উপকূলের একেবারে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা প্রতি বছরই দুর্ভোগের শিকার হন। কিন্তু বরাবরই উপেক্ষিত থাকেন।
ভোলা জেলার রোয়ানু’র তা-বের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, গত শুক্রবার (২০ মে) ও শনিবারের (২১ মে) ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে তজুমুদ্দিন উপজেলায়। বিশেষ করে নদীর কোল ঘেঁষে থাকা বাসিন্দাদের। কিন্তু ওইসব এলাকার মানুষেরাই পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত পরিমাণের সহায়তা।
ত্রাণ বা সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বলেন, ভোলার জেলা প্রশাসকের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বলা হয়েছে, যদি দরকার হয়, তাহলে আরও দেওয়া হবে। ভোলা জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে নদীর কোল ঘেঁষে বসবাসকারী তৃণমূল মানুষদের ওপরে। নদীর বাতাস আর জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে তাদের ঘর-বাড়ি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রতিটি এলাকা পরিদর্শনেরও দাবি জানান তারা।
হাতিয়ায় রোয়ানু ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ কাটেনি
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হাতিয়া উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক পরিবারের দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ী মেরামতে ব্যস্ত রয়েছে উপকূলীয় পরিবারগুলো। ইতিমধ্যে সরকারী উদ্যোগে কিছু ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হলেও সেটা নিতান্তই অপ্রতুল। সমুদ্রের জোয়ারে হাতিয়ার ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। জানা গেছে, জোয়ারে মাছের প্রজেক্ট ও পুকুর থেকে পাঁচ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধ ও রাস্তাঘাট মেরামত করা না হলে দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে জানায়, সরকারী উদ্যোগে যে পরিমাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে সেটা পর্যাপ্ত নয়। এখন প্রয়োজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন এবং বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধ পুনর্নির্মাণ। অন্যথায় আগামীতে যে কোন ঝড় জলোচ্ছ্বাসে এতদঞ্চলে ব্যাপক জানমালহানি ঘটবে। তিনি আরো বলেন, হাতিয়ার দুর্গত এলাকার অধিবাসীদের পুনর্বাসনে সরকার জরুরী ভিত্তিতে সহায়তা প্রদান করবে বলে আমার বিশ^াস।
সীতাকু-ে ৩০ হাজার মানুষ এখনো আতংকে
সীতাকু- সংবাদদাতা জানান, সীতাকু-ে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ হাজার উপকূলীয় মানুষ এখনো আতংকে ভুগছে। ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আবহাওয়া অফিস আরো নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা প্রকাশ করায় উপকূলবাসীর উদ্বেগ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঘর-বাড়ি ভেসে যাওয়া ২৫০টি পরিবারের। তারা মাথা গোঁজার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সরকারের কাছে বসত ঘরের জন্য আবেদন করেও এখনো তা পাননি। এর মধ্যেই ফের ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে কি ভয়ানক পরিণতি বয়ে আনতে পারে তা ভেবে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র তা-বে সারাদেশের মত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সীতাকু- উপজেলাও। এখানে ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকা ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের উপকূলীয় গ্রামগুলি। ক্ষতির হিসাবে এর পরেই রয়েছে কুমিরা, সোনাইছড়ি, বাড়বকু-, সৈয়দপুরসহ অন্যান্য এলাকা।
সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে পুরো উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপজেলার মোট ৬ হাজার পরিবারের ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ঝড়ে বসতভিটা হারিয়েছে অন্তত ২৫০টি পরিবার। আর বসতভিটা হারানো মানুষগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। এছাড়া জঙ্গল ছলিমপুরে গাছ পড়ে ২জন ও বাঁশবাড়ীয়ায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
সরেজমিনে বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাগর উপকূলবর্তী আকিলপুর, নতুনপাড়া, জমাদারপাড়া, বোয়ালিয়াকূলসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক জানমালহানি হবার পর সরকার উপকূলবাসীকে রক্ষায় দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিলো। কিন্তু বারবার ঝড়-বৃষ্টি-জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করতে করতে এই বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাবার পর গত এক দশকেও এটি পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র সময়েও। রোয়ানু’র সাথে ৭/৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে বেড়িবাঁধহীন অরক্ষিত গ্রামগুলিতে প্রবল বেগে সাগরের ¯্রােত প্রবেশ করে। পরে ভাটার সময় এ স্রোতের টানে ভেসে যায় দেড় শতাধিক কাঁচা ঘর। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, অধিকাংশ কাঁচা ঘরের স্থলে এখন শুধুমাত্র ভিটেটা পড়ে আছে। ঘরের আর কোন চিহ্নই সেখানে নেই। আকিলপুরের বাসিন্দা মোঃ আনেয়ার বলেন, এখানে ঝড়ের তা-বের দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে কত ভয়াবহ ছিলো। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সবক’টি কাঁচা ঘর সাগরে ভেসে গেছে। আর বহু-ঘর বাড়ি ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।