Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একনেকে সাত প্রকল্প অনুমোদন, মুন্সিগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৯, ৯:৫৫ পিএম

ঘিঞ্জি অলিগলির পুরান ঢাকা থেকে সরিয়ে রাজধানীর কেরানিগঞ্জে ক্যামিকেল পল্লী নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হয় গত বছর। ঘনবসতি পূর্ণ কেরানীগঞ্জের স্থানীয় লোকজনের বাধায় সেখান থেকে কেমিক্যাল পল্লী মুন্সিগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিসিক কেমিক্যাল পল্লী ঢাকা শীর্ষক প্রকল্পটির নাম সংশোধন করে রাখা হয়েছে বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ। অনুমোদনের এক বছরের কম সময়ের মধ্যে সংশোধন করা প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে আট গুন। ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ ব্রিফিংয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলির বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এম এ মান্নান জানান, কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লী নির্মান প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধিত প্রকল্পের এক বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে পুরান ঢাকাকে মুক্তি দিতে রাজধানীর শ্যামপুরে অস্থায়ীভাবে ৫৪ কেমিকেল গুদাম নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। একনেকে অনুমোদন পাওয়া কেমিক্যাল সংক্রান্ত দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, গতকালের বৈঠকে মোট সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে চারটি প্রকল্পই পুরাতন। সাত প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে আসবে ৫ হাজার ২২০ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে ৪৯০ কোটি টাকা।

এম এ মান্নান জানান, পুরান ঢাকা থেকে দ্রুত কেমিক্যাল গুদাম সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেমিক্যাল পল্লিতে জমি বরাদ্দ পেয়ে কেউ যেন অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে না পরে এ বিষয়ে সচেতন থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কেমিকেল পল্লী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনের এক ইঞ্চিও বেশি জমি ব্যবহার না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী।

সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন থেকে প্রকল্প তৈরির সময়ই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জনবলের বিষয়টি উল্লেখ থাকতে হবে। যারা প্রকল্পের জন্য অপরিহার্য জনবল তারা প্রকল্প শেষে রাজস্ব খাতে যাবে। তাহলে প্রকল্প শেষে চাকরি রাজস্ব খাতে নিতে যারা কান্নাকাটি করেন,তাদেরকে আর সেটি করতে হবে না।

গ্যাসপাইপ লাইন সম্পর্কি একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছন, গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পর যেদিক দিয়ে পাইপ যাবে সেদিক চিহ্নিত করতে রাখতে হবে। হাল চাষ করার সময় পাইপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মারাত্বক দুঘর্টনা ঘটতে পারে। সার্বিক ভাবে প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, এখন থেকে ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষায় যেন যে কোন বিষয় থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে পারে সেই উদ্যোগ নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

২০০৯ সালে অনুমোদন পাওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মান প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। ২০১১ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে প্রনয়ন করা প্রকল্পটির মেয়াদ এ দফায় বাড়ানো হয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে। চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বরে উন্নীত করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী সভায় অনুমোদন পেয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১০ সালে নেয়া প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের জুনে। এ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সমাজকল্যাণ ভবন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীলফামারী জেলার চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ এবং বুড়িতিস্তা নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, জনবসতি কম থাকায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে তৈরি হচ্ছে কেমিক্যাল পল্লি। সম্প্রতি পুুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর নতুন করে এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর আগে ৫০ একর জমিতে এটি গড়ে তোলার কথা থাকলেও এখন জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ৩১০ একর করা হয়েছে। এজন্য ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পুরানো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এসব কেমিক্যাল বিস্ফোরক জাতীয় এবং অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ হওয়ায় এসব গোডাউন কারখানা সংলগ্ন এলাকায় আবাসিক বসবাসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরানো ঢাকার নিমতলিতে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের পর এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধসহ আবাসিক এলাকা হতে কেমিক্যাল কারখানা গোডাউন অপসারণের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ৩০ অক্টোবর এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরানো ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জন্য আবাসিক এলাকায় অবস্থিত সব ধরণের রাসায়নিক কারখানা গোডাউন স্থানান্তরের জন্য স্থাপনাধীন বিসিক কেমিক্যাল পল্লিটি আরাও বড় পরিসরে এবং তুলনামূলক কম জনবহুল এলাকায় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সে জন্য অনুমোদিত বিসিক কেমিক্যাল পল্লিটি ঢাকার কেরানীগঞ্জে স্থাপনের পরিবর্তে ঢাকা-দোহার সড়ক বরাবর মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার তুলশিখালী ব্রিজ সংলগ্ন গোয়ালিয়া, চিত্রকোট ও কামারকান্দা নামক তিনটি মৌজায় মোট ৩১০ একর জমিতে স্থাপনের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একনেক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ