পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফজাল বারী : বিএনপির সিনিয়র ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের তিন নেতার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও তাদের কড়া নজরদারিতে রেখেছে দলটির হাইকমান্ড। ওই তিন নেতার বিরুদ্ধে বিএনপি ভাঙার রূপরেখা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। তারা অপেক্ষা করছেন শীর্ষ নেতার মামলার রায়ের জন্য। ইতোমধ্যে তারা এক নেতার বাসায় বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। তাতে কী আলোচনা হয়েছে, সে অডিও দলের শীর্ষ নেতার হাতে এসেছে। তিন প্রভাবশালী সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে দল ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে চলমান দুটি মামলায় রায় ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে এখন দলে ভাঙন এবং আন্দোলন-সংগ্রামবিমুখ করে দলকে অস্তিত্বসার করে রাখার জন্য দলের একটি শক্তিশালী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই কর্মে যেসব নেতা আছেন দলের হাইকমান্ড ইতোমধ্যে তাদেরকে চিহ্নিত করে কড়া নজরদারিতে রেখেছেন। তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
গতকাল দলের হাইকমান্ডের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, দলের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ‘তিন-ম’ আদ্যক্ষরের তিন নেতার দিকেই মূলত সন্দেহের তীর। তারা অন্দরমহলে এখন সক্রিয় হয়ে শক্তি সঞ্চায় করছেন। তারা মাঝে মধ্যে গুলশানের একটি বাসায় বৈঠক করছেন। এই চক্রটি বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে গেলে তারা তাদের অনুসারী নেতাদের নিয়ে দলের নেতৃত্ব নিতে চান। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্বল্প সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের ধারণা, এই মামলায় খালেদা জিয়া জেল ও অর্থদ-ে দ-িত হতে পারেন। আর দুর্নীতি মামলায় দ-িত হলে খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন তাহলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জেলজীবন আসন্ন? সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপির নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও এমনটি আশঙ্কা করছেন। বেগম খালেদা জিয়া জেলে গেলে দলের হাল ধরবেন কেÑএ নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতি হলে সেখান থেকে তিনি দল পরিচালনা করবেন।
এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মূলত দলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য তিন জনের চক্রটি নিজেদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে তারা নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখতে প্রায় অভিন্ন কণ্ঠে কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়া কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তাদের প্রবল প্রতিকূল মতামতের মুখে সিদ্ধান্তে টিকে থাকতে পারেন না। আর দলের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তগুলো বাইরে এবং সরকারের কাছে ফাঁস করে দেন তারা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে নামার জন্য কয়েকবার কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নিলেও এই তিনজনের বাধার মুখে তা কার্যকর করতে পারেননি চেয়ারপার্সন। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলেন তাতে এই নেতারা বিভিন্ন প্রকাশ্য আলোচনা সভায় ইশারা-ইঙ্গিতে সমালোচনা করেন। এই তিন নেতা ঘরোয়া আড্ডা-আলাপচারিতায় বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান সম্পর্কে কটূক্তি এবং সমালোচনা করেন, যা হাইকমান্ডের কানে যাচ্ছে নিয়মিত। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ রহস্যজনক বলে মনে করে হাইকমান্ড।
এই তিনজনের দুজনের নামে একাধিক মামলা আছে। আছে চার্জশিটও। একজনের নামে কোনো মামলা নেই। একজন শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে ক্ষমতার সঙ্গে আছেন। জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপির মন্ত্রী ছিলেন। পরে দল ভেঙে যান এরশাদের মন্ত্রিসভায়। তারপর আবোরো আসেন বিএনপিতে। হন মন্ত্রী। এবারই প্রথম সরকারের বাইরে। তিনি দল ভাঙায় আলোচিত। তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন যেখানে জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়াকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। গুলশানের বাড়ির মামলায় বিপর্যস্ত তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি হাতছাড়া হওয়ার পেছনে এই নেতার কুপরামর্শ ছিল বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।
আলোচনা আছেÑখালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেনÑভবিষ্যৎ কী হবে? ওই সময় তিনি বলেছেন, ‘ম্যাডাম অল সিচুয়েশন আন্ডার কন্ট্রোল’ যে কাগজপত্র আছে তাতে রায় আমাদের পক্ষে যাবে শতভাগ নিশ্চিত, কিন্তু যা হওয়ার তা ঘটে গেছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য এখন দল থেকে যোজন যোজন দূরে।
অন্যজন শিক্ষকতা থেকে রাজনীতিতে এসে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন যাতে দলের নেতাকর্মীরা বিস্মিত। তিনি বিগত সময়ে বিএনপি সরকারের মন্ত্রী থেকে যেসব দুর্নীতি করেছেন তার মামলা চলছে। ১২টি মামলা চলছে তার নামে। মানি লন্ডরিং করে লন্ডনে বাড়িও কিনেছেন। সেই মামলা এখন শেষ পর্যায়ে। দীর্ঘদিন জেল খেটে তিনি কারামুক্ত হওয়ার পর দলে এমন কথা প্রচলিত আছে যে, দল ভাঙার মুচলেকা দিয়ে বের হয়েছেন তিনি। তিনি এখন অতিসক্রিয় দল ভাঙতে। গণমাধ্যমে প্রকাশও পেয়েছিল। মূলত মামলা থেকে বাঁচার জন্য তিনি সরকারের হয়ে কাজ করছেন এমন আলোচনা দলের ভেতরে-বাইরে।
অতীতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সভাপতিত্বে গুলশানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিজের মোবাইল চালু রেখে অপরপ্রান্তে আলোচনা পাচার করার অভিযোগ উঠে ওই নেতার বিরুদ্ধে। পরে তাকে শাসিয়ে বৈঠকের সময় সকলের মোবাইল ফোন অন্যত্র জমা রাখার নির্দেশনা দেন। সম্পদ এবং বয়স সব মিলে তিনি সরকারের হয়ে কাজ করা ছাড়া বিকল্প দেখছেন না বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে।
দলের নেতারা মুক্তির পর শীর্ষ নেতা বা চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করতে যান। কেউ কেউ দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজার জিয়ারত করেন। কিন্তু কয় মাস আগে সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে কারামুক্তি পাওয়া ওই নেতা ছুটে যান গুলশানের অপর নেতার বাসায়। দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি। আলোচনা করেন সরকারের তরফ থেকে কি এজেন্ডা দেওয়া হয়েছে। সলাপরামর্শের পর গভীর রাতে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে যান।
অপর নেতা সাবেক সেনাপ্রধান। তার বক্তব্য নিয়ে দল মাঝে মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। একটি ইংরেজি পত্রিকায় তারেক রহমানকে নিয়ে বিরূপ বক্তব্য দেয়ার পর তিনি নিজেই তা অস্বীকার করেন। তিনি বিএনপির আন্দোলনের সময় বার্ন ইউনিটে গিয়ে সমবেদনা জানান। গত ২২ মে ঢাকা মেডিকেলে কান ধরে উঠ-বস করা নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে দেখতে যান, যা বিএনপির কেউ জানে না। আল্লাহকে কটাক্ষ করায় যে সময় মুসলমানরা আন্দোলনরত, সে সময় তিনি বিএনপির বাইরে অবস্থান নিচ্ছেন বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। গণমাধ্যমে দেওয়ার তার মন্তব্য-বক্তব্য দলের শীর্ষ নেতাকেই কটাক্ষ বা খাটো করা হয়। এ নিয়ে একাধিকবার চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাকে শাসন-বারণও করেছেন। কিন্তু বদলাননি তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ছিলেন কট্টর সংস্কারপন্থী। সেই সময় শেরেবাংলা নগরে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হন তিনি। তার কণ্ঠসম্বলিত দলের শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্যও ইউটিউবে ওডিও প্রকাশ হয়।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নজরদারির মধ্যে রয়েছেন-ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান। সামনের সারিতে এই তিনজন কাজ করলেও তাদের ঘিরে আছে আরো বেশ কিছু প্রভাবশালী, মামলার জালে আটকা পড়া বেশ কিছু নেতা। তাদের কেউ দেশে কেউ বিদেশে অবস্থান করছেন। অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশের চোখে পলাতক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।