পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ইসলাম ধর্মের নামে কটূক্তির ঘটনায় মিডিয়া সত্য প্রকাশ করছে না বলে অভিযোগ করেছে নির্যাতিত শিক্ষার্থী মো. রিফাত হাসান। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দি এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ইসলাম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগকারীদের মধ্যে অন্যতম রিফাত হাসান। রিফাত হাসান সেই স্কুলের দশম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র। গত রোববার (২২ মে) বিকেলে বন্দর উপজেলার কলাগাছি ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের বাসিন্দা রিফাত হাসান নিজের বাড়িতে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনা জানিয়েছে। রিফাতের দাবি অনুযায়ী ঘটনাস্থলে উপস্থিত তার দুই সহপাঠী মো. আসিফ এবং মো. রুপনের সঙ্গেও কথা হয়। এদের দু’জনও ধর্ম নিয়ে অবমাননার বিষয়ে রিফাতের আনা অভিযোগ সত্য বলে জানায়।
গণমাধ্যমে কল্যান্দি এলাকার মানুষের কথা ঠিকমতো তুলে ধরে হচ্ছে না বলে দাবি বিদ্যালয়ের পেছনের দিকে বসবাসকারী আবদুল হাইয়ের। স্কুলের সামনে থাকা একটি টং দোকানে কথা হয় আবদুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিডিয়া ছেলের (রিফাত হাসান) সঠিক বক্তব্য দেখায় নাই। আপনারা শুধু মাস্টারের (শ্যামল কান্তি) কথা প্রচার করেন।
রিফাত হাসানের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার তুলে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন: ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল?
রিফাত: গত ৮ তারিখ রোববার ছিল। (দশম শ্রেণির) চতুর্থ পিরিয়ডে (ইংরেজী শিক্ষক) উত্তম স্যারের ক্লাস চলছিল। অনেক ছাত্রছাত্রী থাকায় হইচই হচ্ছিল। এ সময় (আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টা) হেডস্যার (শ্যামল কান্তি ভক্ত) উত্তেজিত হয়ে রুমে ঢুকলেন। প্রথমে মেয়েদের পাশে গিয়ে বললেন তোরা অমানুষ, শিক্ষার যোগ্যতা অর্জন করবি কিভাবে? ছেলেদের পাশে গিয়ে বলেন, তোরা অমানুষ, মানুষ হবি কিভাবে? তোরা নাপাক তোদের আল্লাহও নাপাক।
প্রশ্ন: ক্লাসের ভেতরে গিয়ে একজন প্রধান শিক্ষক হঠাৎ এমন কথা বলবেন এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
রিফাত: এই সময় উত্তম স্যার ক্লাসে ছিলেন। হেড স্যার আমাদের ধর্মের বিষয়ে এইভাবে কথা বলেন কেন? ছাত্ররা এমন প্রশ্ন করলে উত্তম স্যার (হেডস্যারকে) বলেছেন- স্যার, ওদের ধর্ম ওরা পালন করবে, আমাদের ধর্ম আমরা পালন করব। এ সময় সামনের বেঞ্চে রুপন্তি নামের একটি মেয়েও (উত্তম) স্যারকে প্রশ্ন করে বলে, স্যার আমাদের ধর্মের বিষয়ে (হেডস্যার) এই রকম কথা কিভাবে বললেন?
প্রশ্ন: রুপন্তির প্রশ্নের উত্তরে উত্তম স্যার কী বললেন?
রিফাত: তখন স্যার বললেন, উনি হেড স্যার (শ্যামল কান্তি) যা ভাল মনে করছেন, বলছেন।
প্রশ্ন: এরপর ...
রিফাত: এই দিন পঞ্চম পিরিয়ডে আবার হেড স্যার আমাদের রুমে আসেন। ক্যারিয়ার শিক্ষার ক্লাস চলছিল। শিক্ষক ছিলেন মোশারফ স্যার। তাকে বিদায় দিয়ে হেড স্যার নিজেই ক্লাস নিচ্ছিলেন। তখন আমার পেছনের একজন শব্দ করে হাসছিল। আমি লিখতে ছিলাম। স্যার ডাক দিয়েছেন, বুঝতে পারি নি। আমার কাছে এসে শার্টের কলারে ধরে বললেন, তোমাকে ডাকতেছি শুনছ না? আমাকে কি হেড মাস্টার মনে হয় না? এরপর আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তলপেটে একটি ঘুষি লাগলে আমি বসে পড়ি। মা-বাবা এবং আল্লাহর নাম নিয়ে কাঁদছিলাম। তখন স্যার বলেন, কিসের আল্লা? আল্লা বলতে কিছু নাই, তোরা নাপাক, তোদের আল্লাহও নাপাক।
প্রশ্ন: মোশাররফ স্যার কিছু বলেন নাই?
রিফাত: ওই স্যারকে আগেই বের করে দিয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। ক্লাসের ক্যাপ্টেন রাহিম রমজানকে দিয়ে হেড স্যার আমার জন্য ট্যাবলেট নিয়ে আসে। খালি পেটে আমি ওষুধ খেতে চাই নি। প্যারাসিটামল আর এন্টাসিড ট্যাবলেট জোর করেই খাওয়ালেন। আমি বলেছি শরীর খারাপ লাগছে বাড়ি চলে যাব। স্যার বিকেল চারটার আগে ছুটি দিবেন না। তিনি বলেন, প্রয়োজনে তোর পেছনে এক হাজার টাকা খরচ করব। বাধ্য হয়ে চারটায় ছুটি হওয়ার পর বন্ধুদের সাহায্যে বাড়ি ফিরি। এরপরের দিন স্যার আমাদের বাড়িতে যান। আম্মাকে বলেন ধর্মের বিষয়টা, যেটা রিফাতকে ক্লাসে বলছি, দয়া করে কমিটির লোকদেরকে বলবেন না। আমার মনে হয় কি স্যারের মাথায় কিছু সমস্যা আছে।
প্রশ্ন: এরপর কি হলো?
রিফাত: এ ঘটনায় আম্মা কমিটির লোকজনের কাছে দরখাস্ত দেন। তারা ১৩ তারিখ (১৩ মে) বিচারের কথা জানান। এদিন শুক্রবার ছিল। আম্মাসহ স্কুলে যাই সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। (দশটার দিকে) মিটিং শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে লোকজন স্কুলের দরজা-জানালায় আক্রমণ করে ভেঙ্গে ফেলার অবস্থা করে।
প্রশ্ন: আপনার আম্মাসহ যখন মিটিংয়ে যান তখন স্কুলে মানুষ জড়ো হয়েছিল?
রিফাত: না, তখন কমিটির লোকজন ছাড়া কেউ ছিল না।
প্রশ্ন: হঠাৎ এমন হলো কেন?
রিফাত: ধর্মের কটূক্তির কথাটা সবাই জেনে গিয়েছিল। একারণে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত ছিল।
প্রশ্ন: কিভাবে জানলো?
রিফাত: ক্লাসে আমি ছাড়াও তো অনেক ছাত্র ছিল। তারা সবাইকে বলছে।
প্রশ্ন: ক্লাসে সহপাঠীদের মধ্যে কারা ছিলেন?
রিফাত: আসিফ, মৃদুল, আকিব, মাকসুদ, রুপন্তি এরা ছিল।
প্রশ্ন: মিটিংয়ের পরিস্থিতি কেমন ছিল?
রিফাত : মিটিং প্রথমে ভালই ছিল।
প্রশ্ন: পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলো কিভাবে?
রিফাত: বাইরে চার-পাঁচ হাজার লোক জড়ো হয়। কেউ কন্ট্রোল করতে পারছিল না।
প্রশ্ন: মিটিংয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির কেউ কি প্রধান শিক্ষককে ধমক বা আক্রমণ করেছিল?
রিফাত: না।
প্রশ্ন: তাহলে?
রিফাত: বাইরে থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক এবং এলাকাবাসী আক্রমণ করে। অনেক মহিলাও ছিলেন।
প্রশ্ন: উত্তেজিত মানুষেরা কী করলো?
রিফাত: প্রথমে (হেড স্যারকে) হালকা চড়-থাপ্পড় দিয়ে শার্টের কলার ছিঁড়ে ফেলে কয়েকজন। স্যার ভয়ে টেবিলের নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর (সংসদ সদস্য) সেলিম ওসমান স্যার আইসা তারে নিয়া যান।
প্রশ্ন: সেলিম ওসমান তো অনেক পরে আসেন। এর আগে আর কী হয়েছিল?
রিফাত: হ্যাঁ, এমপি স্যার পরে আসছেন। এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতারা আসছেন। তবে পুলিশ না আসলে স্যারের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেত।
প্রশ্ন: আপনি তো স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রুমে শুরু হওয়া বৈঠকে পুরো সময়টা রুমের মধ্যে ছিলেন?
রিফাত: হ্যাঁ, ছিলাম।
প্রশ্ন: এমপি সাহেব আসার পরে কী হলো?
রিফাত: এমপি সাহেব (স্যারকে) বললেন, ছেলেটাকে তুমি শুধু শুধু মারছ কেন? ধর্মের ব্যাপারে এই ধরনের মন্তব্য করছ কেন?
প্রশ্ন: আর কী করলেন?
রিফাত: এমপি স্যার কয়েকটা চটকনা দিলেন। কিন্তু এলাকাবাসী দাবি জানাচ্ছিল যে, মাস্টারকে আমাদের হাতে তুলে দেন। ওরে ফাঁসি দিতে হবে না হয় জুতার মালা গলায় দিয়ে গ্রাম ঘুরাতে হবে।
প্রশ্ন: এমপি সাহেবের চটকনা দেওয়ার পরে কি হলো?
রিফাত: চটকনা দিয়ে এমপি স্যার তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে কান ধরে উঠবস করিয়ে পুলিশের কাছে দিয়ে দিলেন। রুম থেকে বের হওয়ার আগে হেড স্যার এমপি সাহেবকে বলছিলেন, আপনি যে বিচার করবেন আমি সেটা মেনে নেব।
প্রশ্ন: শ্যামল কান্তির সঙ্গে কমিটির লোকদের কোনো সমস্যা ছিল?
রিফাত: কমিটির লোকদের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখি নাই। স্যারের একটু মেন্টাল সমস্যা আছে মনে হয়। অনেক ছাত্রছাত্রীকে স্যার বেত দিয়া পিটাইছেন। মাথায় মনে হয় একটু সমস্যা আছে। আমার জ্যেঠাতো বোন রুপালির হাতে বেতের বাড়ি দিয়ে চামড়ার ছাল তুলে ফেলছিলেন একবার।
প্রশ্ন: এ ঘটনা এখন কত বড় হয়েছে আপনি বুঝতে পারছেন?
রিফাত: বুঝতেছি।
প্রশ্ন: এখন কী চান আপনি ?
রিফাত: ধর্মের কটূক্তির বিচার চাই। আমাকে মারার বিচারও চাই।
প্রশ্ন: কিন্তু, ম্যানেজিং কমিটির কাছে করা আবেদনে তো ধর্মের অবমাননার বিষয়ে আপনারা অভিযোগ করেননি। এখন করছেন কেন?
রিফাত: স্যার আমাদের বাড়িতে আইসা আম্মার কাছে মাফ চাইছিলেন। এই কারণে দরখাস্তে সেইটা লিখি নাই। আমার সামনে এসএসসি পরীক্ষা, স্যারের হাতে অনেক ক্ষমতা, এইটা ভেবে আমার দুলাভাই (সাদেক) ধর্মের বিষয়টা উল্লেখ করতে না করছিলেন। এছাড়া সহপাঠীরাও বলছিল যে, তুমি মারের বিচার চাও, আমরা ধর্মের বিষয়ে একসাথে বলব।
প্রশ্ন: এর আগে নাকি আপনি অস্বীকার করেছেন যে, হেড স্যার ধর্ম কটূক্তির কথা বলেন নি?
রিফাত: প্রথম দিকে মিডিয়ার বিভিন্ন লোকজন দশ-বিশবার আমাদের বাড়িতে আসত। ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কথাটা আমি তাদেরকে বলি কিন্তু তারা (মিডিয়া) তুলে ধরে না। একাত্তর টিভি আমাকে জিজ্ঞেস করছিল তুমি কি মাইকিং করছিলা? আমি বলি, না। তুমি কি লোকজন নিয়ে গিয়েছিলে? বললাম, না। এই কথাটাই ওই কথাটার(ধর্মের অবমাননা) সঙ্গে ভাঁজ খাওয়ায়ে ওই ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। আমি যখন কথা বলছিলাম তখন এলাকার অনেক লোক ছিল। তারা শুনছে। আর যত মিডিয়া আসছে তাদের কেউ সত্যটা প্রকাশ করছে না। যে ব্যাপারটা আমি বলি সেটা প্রকাশই করে না। টিভিতেই দেখায় না। খাইতে-ঘুমাইতে পর্যন্ত পারতাম না। মিডিয়া এত জ্বালাইছে। এমপি ও হেডস্যারের ঘটনায় মিডিয়া সত্য প্রকাশ করছে না।
প্রশ্ন: সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলেছেন?
রিফাত: হ্যাঁ। সরকারি লোকজনও আসছিলেন। তাদের কাছে রুপন্তি, মাকসুদ, আসিফ, রাহিম রমজান এবং আমি সব বলেছি। এটা পরে কি হলো বুঝতে পারলাম না।
প্রশ্ন: হেফাজতের সমাবেশে কিভাবে গেলেন?
রিফাত: নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি মসজিদের খতিব আওয়াল সাব যোগাযোগ করে নিয়েছেন।
প্রশ্ন: সেলিম ওসমান সাহেবের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করে আপনাদের সঙ্গে?
রিফাত: না, তাদের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করে নাই।
সূত্র- দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।