Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে মডেলের আত্মহত্যা দায়ী প্রেমিক আটক

প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪০ এএম, ২৫ মে, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার
আত্মহত্যার চেষ্টার দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ নিজের ফেইসবুক আইডিতে আপলোড করেন মডেল সাবিরা হোসাইন (২১)। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ছুরি দিয়ে গলা ও পেট কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্ত গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রূপনগর থানা পুলিশ একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে। বিয়ে করতে অস্বীকার করায় প্রেমিকের সঙ্গে অভিমান করে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এ ঘটনায় নিহতের প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে গ্রেফতার করা হয়েছে।  

রূপনগর থানার ওসি শহীদ আলম বলেন, মৃত্যুর কারণটি রহস্যজনক। ময়না তদন্তের রিপোর্টের পর জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে সাবিরার ফেইসবুক আইডিতে এই ভিডিও ফুটেজ আপলোড করা হয়। সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে নির্ঝর রূপনগর থানায় এসে জানায় যে তার বান্ধবী আত্মহত্যা করেছেন। পরে পুলিশ রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির ছয় তলার একটি ফ্ল্যাটে যায়। যেখানে সাবিরা সাবলেট থাকতেন। ঐ ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা দরজা ভেঙ্গে দেখতে পায় যায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে সাবিরা ঝুলছে। তারাই ওড়না কেটে তাকে উদ্ধার করে মেঝেতে শুইয়ে দেয়। ওসি আরো জানান, বিষয়টি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার ঘটনা মনে হলেও এর পেছনে তার প্রেমিক নির্ঝরের প্ররোচনা রয়েছে। সাবিরা আত্মহত্যা করার আগে ফেইসবুকে একটি ভিডিও ফুটেজ আপলোড করেন। ভিডিও ফুটেজে তার মৃত্যুর জন্য নির্ঝরকে দায়ী করেছেন।

বিভিন্ন পণ্যের স্থির চিত্র এবং ফ্যাশন হাউজের এ মডেলের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা উপজেলার হাজীগঞ্জে। বাবার নাম মনির হোসেন। ঢাকার উক্ত ভাড়া ফ্ল্যাটে তিনি সাবলেটে একাই বসবাস করতেন। ময়না তদন্তের জন্য নিহতের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।  

আত্মহত্যার আগে নির্ঝর সিনহা রওনক নামে তার প্রেমিকের উদ্দেশে সাবিরা নিজের ফেইসবুকে স্ট্যাটাস লেখেন, আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। এটা তোমার ছোট ভাইকে বলছি। সে আমাকে যা ইচ্ছে বলেছে। আর বেস্ট পার্ট হলো, সে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আর আমার প্রশ্ন হলো, তোমার কি একটুও ফিল হয়নি? সাবিরা আরও লেখেন, আমাকে ব্যবহার করবে, শারীরিক সম্পর্ক করবে আর আমি সরে যাব, এটা তো হতে পারে না। বিয়ের কথা বললে তোমার পরিবার অসুস্থ হয়ে যায়। আর শারীরিক সম্পর্কের কথা বললে সব ঠিক হয়ে যায়। ভালো আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করছি। নির্ঝরকে ট্যাগ করে সবশেষে তিনি লেখেন, আমার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী। যদি আমি মারা যাই, তাহলে এর দায় তার।
আত্মহত্যার আগে সাবিরা তার ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস ও ভিডিও পোস্ট করেন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে একটি ছুরি হাতে নিয়ে নিজের পেট ও গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন সাবিরা। তাকে মানসিকভাবে অনেক অস্থির বলে মনে হচ্ছিল। শুরুতে বলতে শোনা যায় আমি কিচ্ছু করতে পারব না। তারপর হাতে একটি ছুরি নিয়ে বারবার পেটে ও গলায় চাপ  দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু কিছু করতে পারেন না। বারবার বলতে শোনা যায়, কাটেও না। আমি ব্যর্থ। ওকে নেক্সট এটেম্পট নেব।
এ ব্যাপারে সাবিরার মা দিলশাদ কাদির বলেন, তার স্বামী মনির হোসেন দুবাই প্রবাসী। তিনি মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের ৯ নম্বর রোডের ১২/১৩ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। মেয়ে সাবিরা মিরপুর রূপনগরে সাবলেট থাকত। তার একমাত্র এই মেয়ের সঙ্গে সাঁতারকুলের লিংকরোডের ৭/১ নম্বর বাড়ির মোহন সিনহার ছেলে নির্ঝর সিনহা রওনকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন হলো ওদের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। তাদের মধ্যে বিয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্ঝরের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার অমত পোষণ করা হয়েছে। গতকাল সকালে পুলিশের কাছ থেকে খবর পান যে তার মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সাবিরা বেশ কিছু পণ্যের স্থিরচিত্রে ও ফ্যাশন হাউসের মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। শুধু মডেলিং নয়, উপস্থাপনাও করতেন তিনি। তার ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায়, গানবাংলা টিভিতে কাজ করতেন এই মডেল। পুলিশ বলছে, ধারণা করা হচ্ছে বেশ কয়েক দিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন সাবিরা। পারিবারিক ও প্রেমঘটিত কারণে সাবিরা আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার মামা হুমায়ুন কবির দাফনের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় সাবিরার মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। মামলায় নির্ঝরকে একমাত্র আসামী করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে মডেলের আত্মহত্যা দায়ী প্রেমিক আটক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ