Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইলার সাত বছর পরও নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ

প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে ঃ সর্বনাশা আইলা’র ৭ বছর পূর্তি আজ ২৫ মে। ২০০৯ সালের এই দিনে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। ওই মহা দুর্যোগের দীর্ঘ সাত বছর পার হয়ে গেলেও খুলনার দাকোপ ও কয়রার সাড়ে ৩ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ আজও কাটে নি। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে ঘর-বাড়ি-জমিজমা বিলীন হয়ে যাবার পর বাধ্য হয়ে এসব পরিবার বাস করছে বেড়িবাঁধের উপর। আবার সেই বেড়িবাঁধ কেটে ও ফুটো করে আবারও নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে চিংড়ি চাষের জন্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় কিছুই করা যাচ্ছে না। আটকে আছে কয়েকটি বিধিমালা তৈরিতে। তাই এ আইনটি কার্যকর করার জন্য বিধিমালা তৈরির দাবি উঠলো গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) ও সহযোগী পাঁচটিসংগঠন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।
গতকাল মঙ্গলবার উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), অ্যাওসেড, জেজেএস, রূপায়ন ও এসপিএস আইলার সাত বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা নামক ঘূর্ণিঝড়ে খুলনার অন্তত ৪৫টি ইউনিয়ন এবং চালনা ও পাইকগাছা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইলায় ৫৭জনের প্রাণহানী, আর ৫ লাখ ৪৬ হাজার মানুষ সম্পদ হারায়, ৬৮ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪৪ হাজার আংশিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫৯৭ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে ৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর নিহত হন ১৮জন। সিডরের আঘাতে ৪৩ দশমিক ৩০ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ গত ২১ মে রোয়ানু’র বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়ায় ১২০টি বাড়ি আংশিক এবং ৪০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চারটি উপজেলার এক হাজার একশ’ পরিবারের ৪ হাজার ৫৫৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি, দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ও তিলডাঙ্গা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উপকূলবাসীদের নিয়ে কাজ করা ক্লিন’র প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, আইলার পর সাত বছর পার হয়ে গেলেও বেড়ি বাঁধ সংস্কার না করায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কোনো ভাবেই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যাবে না। ২০১২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে বেড়িবাঁধের ক্ষতি করার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও আইনটি কার্যকর না হওয়ায় যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে বা ফুটো করে নোনাপানি ঢোকানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধিমালাও দাপ্তরিক আদেশজারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন কার্যকর করা, আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোকে খাসজমি বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা, উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো পরিবেশসম্মত উপায়ে আরো শক্তিশালী করা, কৃষিজমিতে নোনাপানির চিংড়ি ঘের বন্ধ করা ও সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা নীতি (আইসিজেডএমপি) অনুসরণ বাধ্যতামলূক করাসহ ছয় দফা দাবিনামা উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সংগঠক মনিরুলহক বাচ্চু, জিল্লুর রহমান, ক্লিন’র চেয়ারপারসন সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, অ্যাওসেড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন, বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, পরিবর্তন খুলনা’র নির্বাহী পরিচালক নাজমুল আযম ডেভিড, ক্লিন’র সুবর্ণা ইসলাম দিশা ও নাসিম রহমান কিরণ প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইলার সাত বছর পরও নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ