পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে এমপিরা ভোগ করেন বেশি সুযোগ-সুবিধা। প্রতিমাসে কমবেশি প্রায় ৮ লাখ টাকার সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এমপিরা নিজ নির্বাচনী এলাকায় সর্বসর্বা। উন্নয়নমূলক কাজ, থানা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ এবং স্কুল-মারদাসা-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে পিয়ন নিয়োগ বাণিজ্যসহ যাবতীয় কর্মকান্ড তারাই করেন। এই বিপুল পরিমান ‘অর্থ এবং ক্ষমতার’ লোভ সংবরণ করতে পারছেন না বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুলতান মুহম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানের শপথ নেয়ার পর ধানের শীষের এই এমপিদের লোভ আরো বেড়ে যায়। তারা নানান প্রক্রিয়ায় শপথ নেয়ার চেষ্টায় মরিয়া। অন্যদিকে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সর্বস্তরের নেতারা শপথ নেয়ার বিপক্ষে। হঠাৎ করে কৌশল করে শপথের সঙ্গে যুক্ত করা হয় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গ। এনিয়ে বিএনপিতে চলছে তোলপাড়। ৬ এমপির ওপর ক্ষুব্ধ দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেখড় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এখন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি ও বিএনপির ৬ এমপির শপথ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছে। যদিও বেগম খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেতে চান। আর যে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে সেই সংসদে যোগ দেয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কারাবন্দী বেগম জিয়া। দলীয় প্রধানের নেতিবাচক অবস্থানের পরও সংসদে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন নির্বাচিত এমপিরা। তাদের সংসদে যোগ দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে বর্তমানে বিপরীতমুখী অবস্থানে ৬ এমপি ও কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ভোট ডাকাতির অভিযোগে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেও শপথ নিতে আগ্রহী নির্বাচিত এমপিরা। অন্যদিকে দলের শীর্ষ (খালেদা জিয়া-তারেক রহমান) থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন বিপক্ষে। নেতাকর্মীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে কিংবা অন্য যেকোন অজুহাতে এই সংসদে যোগ দিলে সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে। এছাড়া এর আগে ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের দুই এমপি শপথ নিলে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের বেঈমান হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল। এবার নিজেরা শপথ নিলে তারা মুখ দেখাবেন কি করে?
কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিনিময়ে বিএনপির নির্বাচিতরা শপথগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এটি নিয়ে যে প্রচারণা আছে তা অসত্য ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন তিনি।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে সেই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। নির্বাচিত হওয়ার পর ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের দুই এমপি শপথ নেয়ায় দলটির পক্ষ থেকে তাদের বেঈমান হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এখন সেই সংসদেই শপথ নিতে আগ্রহী বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, শপথ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছিল। প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিলে বিএনপির নির্বাচিত ৬ এমপি সংসদে শপথ নিয়ে এই সরকারকে বৈধতা দেবেন। তবে এ বিষয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সুস্পষ্ট কোন বার্তা ছিল না। দলের নেতারাও এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। কিন্তু গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করেন। এসময় বেগম জিয়া তিন নেতাকে জানিয়ে দেন তিনি প্যারোলে নয়, আইনি প্রক্রিয়াতেই মুক্ত হতে চান। আর যে সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অবৈধ ঘোষণা করেছে সেই সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়েও নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এজন্য খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলার পরের দিনই নির্বাচিত এমপিদের গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ডেকে সতর্ক করে দেয়া হয়। জানিয়ে দেয়া হয় দল শপথ গ্রহণের বিপক্ষে। যদিও সেই বৈঠকেই শপথের পক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন ঠাকুরগাঁও ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই এমপি। তাদের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক এমপি শপথের জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাপের কথা জানান।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মোঃ জাহিদুর রহমান, বগুড়া-৪ আসনে মোঃ মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চাপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোঃ আমিনুল ইসলাম, চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মোঃ হারুনুর রশিদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উকিল আব্দুস সাত্তার নির্বাচিত হন।
মো. হারুনুর রশীদ বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে আমরা একটা রিস্ক নিয়ে সংসদে যেতে পারতাম। কিন্তু তাঁকে মুক্তি না দিলে কিভাবে যাই!’ তিনি আরো বলেন, নেত্রী প্যারোল নেবেন না। আবার সরকার আদালতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করছে না। এখন জামিন হলে একটা সমাধান বেরিয়ে আসত। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিতরা সংসদে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু নেত্রীর সম্মতি লাগবে।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত এমপি মো. জাহিদুর রহমান বলেন, এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে সংসদে যাওয়ার চাপ রয়েছে বলেই আমরা সংসদে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু এখন কী করা যাবে! দলের সবাই চাচ্ছে না। সিনিয়রদের বড় অংশও বিপক্ষে বলেই মনে হয়।
জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এড. রফিকুল ইসলাম টিপু বলেন, নেতাকর্মী তো আমরাই। এখানে শপথের পক্ষে চাপ থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। কারণ সকলেই জানে ৩০ ডিসেম্বর কি নির্বাচন হয়েছে। ভোট ডাকাতি হয়েছে দেখে দল সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সংসদে না যাওয়ার। এখন কেউ যদি মনগড়া কথা বলে, নেতাকর্মীদের অজুহাত দিয়ে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায় তাহলে তারা বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। একইসাথে বেগম খালেদা জিয়ার এতোদিনের যে অর্জন আপোষহীন নেত্রী সেটা ধুলিস্যাৎ করার চেষ্টা করবেন।
জাহিদুর রহমানের সাথে সার্বক্ষণিক থাকা পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক নেতা জানান, দল কি সিদ্ধান্ত নিলো সেটি জাহিদুর রহমানের কাছে কোন বিষয় না। তিনি শপথ নেয়ার জন্য প্রস্তুত। কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাহিদুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় ধার-দেনার মধ্যে ডুবে গেছেন। এজন্য তিনি শপথ নিতে চান।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন বলেন, দল যেটা সিদ্ধান্ত নেবে আমরা মনে করি সকলকেই সেটা মেনে নিতে হবে। এর বাইরে যদি কেউ যায় তাহলে দল তাদের বিষয়ে যেটা সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তা মেনে নিবো।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, দলের চেয়ারপারসন শপথের বিষয়ে নেতিবাচক বার্তা দেয়ার পরও কয়েকজন দলীয় কার্যালয়ে এসে শপথের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তারা শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ইতিবাচক করার আহ্বান জানান। তাদের এই তৎপরতা জানতে পেরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনিও বেগম জিয়ার বার্তা পুনরায় উল্লেখ করে বলেন, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে শপথ নেয়া যাবে না। সেটিতেই সকলকে অটল থাকতে হবে।
এদিকে আগে থেকেই দলের একটি বড় অংশ এই সংসদে না যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। তারা বলছিলেন, বর্তমান সংসদ অবৈধ। তাই এই সংসদে বিএনপি যাগদান করলে বৈধতা দেয়া হবে। এজন্য তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমপি সুলতান মোঃ মনসুর ও গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খানের শপথের বিরোধিতা করেছিলেন। এখন বিএনপির এমপিরা শপথের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে আমরা মুক্ত করবো। কিন্তু সরকার তার মুক্তি নিয়ে ধু্ম্রজাল সৃষ্টি করছে। বিএনপি শপথও নেবেনা প্যারোলও নেবেনা। আমারা জনগণকে সাথে নিয়েই বিজয়ী হতে চাই।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের দলের সিদ্ধান্ত সংসদে না যাওয়া। এখন পর্যন্ত যাওয়ার পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ আমরা এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। এনিয়ে নানা কথা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তাদেরকে (নির্বাচিত ৬ জন) বলে দেওয়া হয়েছে যে, দলের সিদ্ধান্ত আপনারা মানবেন, মানতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আপনারা সংসদে যাবেন না এবং কোনো ব্যাপারে কোনো কথাও বলবেন না। তারা রাজি হয়েছেন।
বিএনপির নির্বাচিতদের মধ্যে কারও সংসদে যাওয়ার আগ্রহ থেকে থাকলে তাদের উদ্দেশ্যে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা শুনি, নির্বাচিতরা বলেন, জনগণের ইচ্ছ। কিন্তু তাদের মধ্যে শুনলাম না এই কথা যে অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিতে আমরা পার্লামেন্টে যাব না। উঁকি-ঝুঁকি মারছে নানা চোরাগলি পথ দিয়ে নানা কথা। কোন কথা সত্য কোন কথা মিথ্যা জানি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিতে কারা জড়িত জানি না। তবে যারা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছে তারা এখন উভয় সংকটে পড়বে। সরকারকে তারা কী বলবে? আবার সংসদে গেলেই কোন মুখে যাবে?
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যত গুঞ্জনই থাক, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকবে। আমাদের ৬ জন সংসদে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের নির্বাচিত সদস্যরা শপথ নেবেন না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বসে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের স্থায়ী কমিটি নিয়েছে। এখান থেকে ফিরে যাওয়ার বা কেনো পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।