পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিনাজপুর সদর উপজেলায় একটি ইজিবাইকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় গতকাল বৃহস্পতিবার একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও চার জন। দিনাজপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ জানায়, সকাল ১০টার দিকে যাত্রীবাহী বাসটি দিনাজপুর থেকে বগুড়া যাচ্ছিল। পথে সদর উপজেলার চুনিয়াপাড়া মোড়ে শহরমুখী একটি অটোরিকশাকে ওই বাসটি ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। বাকিদের হাসপাতালে নেওয়ার পর আশরাফুল আলম খলিফা ও তার মেয়ে আইভি আক্তারের মৃত্যু হয়। নিয়ম অনুযায়ী কোনো মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল করতে পারবে না। কিন্তু বেপরোয়া ইজিবাইক রুখবে কে? দীর্ঘদিন থেকেই ইজিবাইক নিষিদ্ধের দাবিতে সারাদেশেই আন্দোলন কর্মসূচী চলছিল। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে এই দাবি আরও জোড়ালো হলে নির্বাচনের পরে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু নির্বাচন শেষে নতুন সরকার ইতোমধ্যে একশ’দিন পার করেছে। ইজিবাইক নিয়ে আর কোনো কথা নেই। অথচ সারাদেশে জেলা ও থানা শহরগুলোতে ইজিবাইক এখন যানজট ও ভোগান্তির প্রধান কারণ। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ ইজিবাইকের যন্ত্রণায়।
সারাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১২ লাখেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। নিষিদ্ধ সত্তে¡ও সড়ক-মহাসড়ক ধরে এগুলো ছুটে চলছে। কখনও সোজা, কখনও উল্টো পথে। বাড়ছে ঝুঁকি, বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত বছরের ঈদযাত্রায় ২৭৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১২৬৫ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে এসব দুর্ঘটনার প্রায় ২৬ শতাংশ ঘটেছে নছিমন, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার কারনে। এই ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা কমানোর জন্যই ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরণের থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এখন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার অবৈধ এ যানকে বৈধতা দেয়ার পায়তারা করছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো এর বিরোধীতা করে আসছে।
বেসরকারি হিসাবে সারাদেশে প্রায় ১১ লাখ ইজিবাইক ও ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এসব ব্যাটারি চার্জ করতে বিপুল পরিমান বিদ্যুত খরচ হচ্ছে-যার সিংহভাগই অবৈধ সংযোগের। বাড়তি এই বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। গরম আসতে না আসতে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। আবার ৪০ লাখ ব্যাটারি এক বছরের মাথায় ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পর সেগুলো ধ্বংস করতে গিয়ে পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। নিষিদ্ধ ইজিবাইক সড়কে সচল করার নেপথ্যে সারাদেশে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সাথে স্থানীয় রাজনীতিক থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত জড়িত। যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করতে দেশের সড়ক মহাসড়ক উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে ২৭ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি অর্থবছরে এর সাথে যোগ হয়েছে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় সড়কের দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চিও বাড়েনি। বাড়ানো যায় নি যানবাহনের গতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার বৈধতা দিলে সড়কে দুর্ঘটনার হার অনেক বেড়ে যাবে। কমবে যানবাহনের গতি, বাড়বে যানজট, ভোগান্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটারিচালিত এ যানবাহনগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরী নয় বলে একটু ধাক্কাতেই উল্টে যায়। এগুলোকে বৈধতা দিয়ে আন্ত:জেলা সড়ক বা মহাসড়কে উঠতে দিলে তা হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন বলেন, ধীর গতির এই যানগুলোর ব্রেকের সিস্টেম ভালো না। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া সড়কের বিশাল একটি অংশ দখল করে এই পরিবহনগুলো রাখা হয়। আমরা এগুলো নিষিদ্ধের জন্য বহুবার দাবি জানিয়েছি। সরকার আমাদেরকে আশস্ত করেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে করে দিন দিন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
ভুক্তভোগিদের মতে, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোরালো কোনো পদক্ষেপও নেই। এতে করে অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের কোনো সুবিধা মিলছে না। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ১৯২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট, ৩টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৪টি সড়ক বাইপাস, ২টি আন্ডারপাস, ৩৪টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ এবং ৬১টি বাস-বে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর অংশ ৮ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এই ৮ লেনের দুদিক দিয়েই সিএনজি অটোরিকশা রিকশা, ভ্যান চলে। উল্টো দিকে চলে রিকশা, ভ্যান এমনকি বাসও। পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে চললেও এসব যানবাহন চলাচলে পুলিশ বাধা দেয় না।
২০১৫ সালে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। এর কিছুদিনের মধ্যেই তা অনেকটাই কার্যকর করা হয়। তিন-চার মাস যেতে না যেতে আবার সেগুলো চালু হয়। গত বছর পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়। হাইকোর্টও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ইজিবাইকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় নি। এজন্য আন্দোলনকারীদের ধৈর্য্য ধরতে বলা হয়েছিল। নতুন সরকার ইতোমধ্যে একশ দিন অতিবাহিত করেছে। কিন্তু এই একশ’ দিনে রহস্যজন কারণে ইজিবাইক আলোচনায় আসেনি।
ভুক্তভোগিদের মতে, আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য মোটরচালিত রিকশা। এগুলোর আবার চলার কোনো গতিপথ নেই। কখনও সোজা পথে চলে কখনও চলে উল্টো। এতে করে ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনা দুটোই বাড়ছে।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির তথ্য মতে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও। এসব দুর্ঘটনার সিংহভাগ ঘটেছে মহাসড়কে এবং এর সাথে মহাসড়কে চলাচলকারি থ্রি-হুইলার দায়ী। ভুক্তভোগিদের মতে, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার শুধু যে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে তা নয়, এগুলোর কারণে কোনো যানবাহনই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। এতে করে জ্বালানী খরচ, সময় সবই বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। পরিবহন মালিকরা মহাসড়কে এসব অবৈধ যান চলাচলের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবকে দায়ি করেছেন। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, মহাসড়কের দুর্ঘটনার প্রধান কারণ এসব অবৈধ যানবাহন। এসবের কারণে যানজট হয়, বাস স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। সময় নষ্ট হয় বলে খরচও বাড়ে। তাই আমরা চাই এগুলো বন্ধ হোক। এজন্য সরকারের সাথে মালিক সমিতির বহুবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই এসব বন্ধ হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের এক বাস কোম্পানীর পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানগুলো বন্ধ করতে না পারাটা দুঃখজনক। এতো টাকা খরচ করে এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরও যদি এর সুফল পাওয়া না যায় তাহলে এটা করে লাভ কি হলো? আলাপকালে এনা বাস সার্ভিসের এক বাস চালক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক মানে একটা গাড়ি নির্বিঘেœ চলবে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যন সবই চলে। এগুলোর জন্য কোনো গাড়িই নির্ধারিত গতিতে চলতে পারে না। এতে সময় এবং টাকা দুটোরই অপচয় হয়। সাথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আরেক চালক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গৌরীপুর অংশে লোকাল বাস, থ্রি-হুইলার দাঁড়ানোর কারণে সৃষ্ট যানজট অনেকটা সময় নষ্ট করে। এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই অংশ আমাদের আওতাভুক্ত নয়। এটা জেলা পুলিশের দায়িত্ব। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের থ্রি-হুইলারগুলো সুযোগ পেলেই পৌরসভা এলাকার মহাসড়কে উঠে যায়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এগুলো বন্ধ করার জন্য। তবে পুরোপুরি বন্ধ করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ আরও জোরালো করতে হবে। আলাপকালে কয়েকজন অটোরিকশার চালক জানান, মহাসড়কে চলতে গেলে মাঝে মধ্যে পুলিশের অভিযানের মুখে পড়তে হয়। তবে অভিযান থেমে গেলে পরিস্থিতি ফিরে আসতে আর সময় লাগে না। অটোরিকশার চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধ যান মহাসড়কে চলাচলের নেপথ্যে সরকারদলীয় এক শ্রেণির নেতারা জড়িত। তারাই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসব চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। এজন্য মালিক অথবা চালকদের কাছে থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেন তারা। এই মাসোহারার ভাগ পায় সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশও। ঢাকা-মাওয়া সড়কের বেশ কয়েকজন চালক বলেছেন, টাকা না দিলে পুলিশ কখনওই মহাসড়কে উঠতে দেয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার ১০০ কিলোমিটার এলাকা, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কে কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড ও সুয়াগাজী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার, আদর্শ সদর উপজেলার নন্দনপুর, আলেখাঁরচর ও ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা এবং বুড়িচং উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁওয়ে হাজার হাজার সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে নির্বিঘেœ থ্রি হুইলার চলাচল করে। স্থানীয়রা জানান, মাঝে মাঝে পুলিশ এই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিএনজি অটোরিকশাসহ ইজিবাইক আটক করে। তখন সরকারদলীয় অনেক নেতাই তৎপর হয়ে ওঠেন সেগুলো থানা থেকে ছাড়াতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।