পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগে বন্দরথানাধীন পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবসের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সড়ক-মহাসড়কের পাশে চায়ের স্টল থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারেও চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। কেউ শিক্ষকের পক্ষে আবার কেউ শিক্ষকের বিপক্ষে কথা বলছেন। আর ইসলামী সংগঠনগুলো ৯০ ভাগ মুসলমানের দোহাই দিয়ে শিক্ষকের দিকে আঙ্গুল তুলছেন এবং সেলিম ওসমানের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। অপরদিকে গোটা জাতি শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার দাবি করে রাজপথে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। সব মিলিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ইস্যুতে দেশজুড়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। এর প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
একইসুর ওঠে এসেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কথায়। তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বসে বাধ্য করার ঘটনায় সরকার বিচলিত। সাংবাদিকদের একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষককেই অসম্মান করা উচিৎ নয়। এ ঘটনায় আমরা বিচলিত।
জানা গেছে, চলতি মাসের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যান্দি এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দিয়ে সবার সামনে কান ধরে উঠবস করিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো হয়। এঘটনায় দেশজুড়ে ফুঁসে ওঠে শিক্ষকসমাজসহ নানা পেশা শ্রেণীর মানুষ। নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রকাশ্যে অপমান ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতি তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানায়। পাশাপাশি এ ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে জবি শিক্ষক সমিতি। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সাংসদ সেলিম ওসমানের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের অপমান লাগামহীন ক্ষমতারই উলঙ্গ বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তিনি বলেন, কেবল মাত্র ক্ষমতা ও অর্থের জোরে গণ্য-মান্য লোকের সম্মান মর্যাদা ধুলায় মিলিয়ে দেয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের অপমান লাগামহীন ক্ষমতারই উলঙ্গ বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের এই বেপরোয়া ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশ আর বাসযোগ্য থাকবে না। তিনি বলেন, এই সমাজে নারী শিশুসহ কোন মানুষই আজ আর নিরাপদ নয়। শ্রমজীবী মেহনতী নারীদের জীবন আরও নিরাপত্তাহীন। এ সরকার একদিকে নারীর উন্নয়নের কথা বলছে আর অন্যদিকে নারীর উপর নির্যাতন, নিপীড়ন, অপহরণ, হত্যাসহ যাবতীয় সহিংসতা বেড়ে চলছে।
এদিকে, ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটাক্ষকারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচারের দাবিতে রাজধানীর ডেমরায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। শনিবার সকালে ডেমরার বড়ভাঙ্গা মোড়ে অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি বাংলাদেশ আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে এ দাবি জানান সংগঠনের আমীর মো. আতিকুর রহমান নান্নু। এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম বেলাল, আ হ ম আলাউদ্দীন, সিরাজুল ইসলাম, ওবায়দুল্লাহ বরকত, মফিজুল ইসলাম, জাফরুল্লাহ জিহাদী, হুসাইন আহমদ, নুর হোসাইন গাজী, জাহিদুল ইসলাম এবং সাংবাদিক রাজু আহমেদসহ আরও অনেকে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এদেশে ইসলামবিদ্বেষী কোন মোনাফেক বসবাস করতে পারবে না। তাই দেশের ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতা মনে করে, ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটাক্ষকারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের শাস্তি, তার পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তা-না হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে নাস্তিকদের প্রতিরোধে সারাদেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।
একই ঘোষণা দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন। ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে মিছিল ও মানববন্ধন করছে ইসলামী সংগঠন। গত বুধবার তাহরিকে খতমে নবুয়্যত বাংলাদেশ নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্যামল কান্তির ফাঁসির দাবি জানানো হয়। আর এ দাবি সপক্ষের মিছিলটি চাষাড়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে সমাবেশে বক্তারা ইসলাম রক্ষায় সকল মুমিন-মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। একইসঙ্গে এমপি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করা হয় সমাবেশ থেকে।
তাহরিকে খতমে নবুয়্যত সভাপতি এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী বলেন, এমপি সেলিম ওসমানের বিরোধীতায় যারা নেমেছে তারাও ধর্মদ্রোহী এবং রাষ্ট্রদ্রোহী। বামপন্থী নাস্তিকদেরকে আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, বর্তমান এমপির সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব সেটা সিটি করপোরেশনের কোনো দ্বন্দ্ব নয়। এটা হচ্ছে মুসলমানের সাথে নান্তিকের দ্বন্দ্ব। তবে আওয়ামী ওলামালীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোওয়ার হোসেনের মতে, শুধু ইসলাম নয়, কোনো ধর্ম নিয়েই বাড়াবাড়ি কিংবা বির্তকিত মন্তব্য করা ঠিক না। তিনি বলেন, হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলে গেছেন-কারো ধর্মে আঘাত না করার জন্য। তিনি বলেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের উচিত হয়নি এধরনের মন্তব্য করা।
এদিকে এমপি সেলিম উসমানের শাস্তিও দাবি জানিয়েছে সরকারের বেশ কয়েকজনমন্ত্রী ও দলের শীর্ষনেতারাও। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় সেলিম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, লজ্জা থাকলে উনার আর সংসদে বসা উচিত নয়। রোববার সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। একইসুরে কথা বলেছেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গত বুধবার সকালে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। নিজের হাতে আইন তোলার অধিকার কারও নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই অপকর্ম করেছে তাদেরকে সরকার এক চুলও ছাড় দেবে না। নারায়ণগঞ্জের ওই শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনার তিনি তীব্র নিন্দা জানান। আর শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। গত রোববার আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যত ক্ষমতাধরই হোক, শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি পেতেই হবে। গত ১৮ এপ্রিল সকালে ফেনী নদীর উপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ধুমঘাট ও মুহুরী সেতু উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।