Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষক ছাড়াই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে আইসিটি পাঠদান

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষক ছাড়াই অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক রয়েছে এমপিওভুক্তি না থাকায় তাদেরও ঠিকমত পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। পাঠ্যসূচীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে আবশ্যিক বিষয় এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও এর উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হলেও এই বিষয়ের শিক্ষকদের অবেহেলায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষক সঙ্কটের কারণে ভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপিওভুক্ত বেসরকারি ১৬ হাজার স্কুলের মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার স্কুলেই নেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক। ৬ হাজার ৪৭১টি মাদরাসার মধ্যে এই বিষয়ের শিক্ষক নেই ৫ হাজার মাদরাসায়। আর বেসরকারি অর্ধেকের বেশি কলেজেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির শিক্ষক নেই। শুধু বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাই নয়, সরকারি স্কুল-কলেজেও আইসিটি শিক্ষা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। দেশে প্রায় তিনশ’ সরকারি কলেজ আছে। এসব কলেজে একজনও আইসিটির শিক্ষক নেই। অন্য বিষয়ের শিক্ষকদের সংক্ষিপ্ত একটি প্রশিক্ষণ দিয়েই ‘আইসিটি’ বিষয়ে পড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারি হাইস্কুলের অবস্থাও একই। ৩৩৫ স্কুলে আইসিটির শিক্ষক নেই। গত ৩০ এপ্রিল কলেজের অধ্যক্ষ সম্মেলন এবং গত বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক সম্মেলনে আইসিটি শিক্ষকের সংকটের কথা তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং শিক্ষার্থীদের আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কিন্তু এর আগেই ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর এক পরিপত্রের মাধ্যমে অনুমোদন প্রাপ্ত প্যার্টানভুক্ত বিষয় আইসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি স্থগিত করা হয়। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় আইসিটিতে শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম। আর এর আগে যেসব শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বন্ধ হয়ে যায় তাদেরও এমপিওভুক্তি। ভুক্তভোগি শিক্ষকরা জানান, এমপিও দেয়া হবে এই আশায় প্রায় ১৮শ’ বেসরকারি স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসা এই বিষয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তারা অনেকটা বিনাবেতনে পড়াচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে এমপিওর দাবিতে গত ১৫ মে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকরা। এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বাধ্যমূলক বিষয়ের শিক্ষকদের এমপিও দেয়ার যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এরই মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এমপিও দেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা আছে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটিকে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হলেও সরকার বেতন না দেয়ায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়নি। ফলে অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকদের দিয়ে কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান চলছে। এতে সার্বিক পাঠদানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এক কোটির বেশি শিক্ষার্থী ভোগান্তি পোহাচ্ছে। তারা আরও বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই কেবল পাঠ্যবই ছেপেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেছে। এদিকে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে তাদের এমপিওভুক্তি না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনরত এমপিও বঞ্চিত আইসিটি শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি মোঃ আশিকুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম শামীমুর রহমান বলেন, আইসিটি শিক্ষকরা প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রতিনিয়ত মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করে আসছে। গত ২৫ অক্টোবর এক পরিপত্রের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের তথ্য মাউশি সংগ্রহ করেন এবং এমপিও দেয়ার লক্ষ্যে তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর ১৫ ডিসেম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক হাজার ৩৫২ জন শিক্ষকের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এছাড়া মাদরাসায় ৫০০ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ১০০ জন শিক্ষক আছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত ২৮ এপ্রিল এক পরিপত্রের মাধ্যমে সকল মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি/কম্পিউটার) বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা হলেও শিক্ষকদের বেতন ভাতা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান বহন করবে করবে বলে ওই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়। পরিপত্র প্রকাশের পর থেকে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ এবং হতাশ হয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১৫ মে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসছে। সংগঠনটির নেতৃদ্বয় নিয়োগকৃত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (কম্পিউটার/আইসিটি) শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি, যোগদানের তারিখ হতে এমপিওভুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (কম্পিউটার/আইসিটি) বিষয়ে যাদের কাগজ মাউশিতে জমা আছে তাদের মাউশি থেকে এমপিওভুক্তি এবং চলতি মে মাস থেকেই এমপিও বিলে এমপিওভুক্তির দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষক ছাড়াই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে আইসিটি পাঠদান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ