পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে প্রায় দশ বছর নিজের শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোতে শেরিং। সেই সুবাদে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অনেক কিছুই তার চেনাজানা। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের সঙ্গেও পরিচিত তখন থেকেই। তবে শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার পর অনেক জল গড়িয়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়ালেখা করলেও এখন রাজনীতিবিদই কেবল নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষাজীবনের সেই পহেলা বৈশাখ পালনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের স্বাদও নিতে যাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের এই সাবেক শিক্ষার্থী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। আজ সকাল ৮টা ৮মিনিটে রয়্যাল ভুটান এয়ারলাইন্সের (ড্রুক এয়ার) একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিন দিনের সফরে স্ত্রী ও সফরসঙ্গীদের নিয়ে অবতরণ করেছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শুধু তাই নয়, মূলত পহেলা বৈশাখের আয়োজনে অংশ নিতেই তিনি রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহকে বেছে নিয়েছেন। এর ফলে তিনিই প্রথম কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পহেলা বৈশাখ উৎসবে অংশ নিতে যাচ্ছেন। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর সিদ্ধান্ত হয় লোতে শেরিংকে।
জানা গেছে, ডা. লোতে শেরিং পহেলা বৈশাখ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে উদযাপন করবেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচালনাধীন ‘সুরের ধারা’র আয়োজনে ‘লিভার আয়ুশ হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ ১৪২৬’ অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন। তার নতুন বঙ্গাব্দকে বরণের জন্য তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও থাকবে উপহার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বৈশাখের উপহার হিসেবে শেরিংয়ের জন্য সিল্কের পাঞ্জাবি এবং তার স্ত্রীর জন্য থাকবে বেনারসি শাড়ি।
দেশে এসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। সভার থেকে ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১ টা ১০ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। পরে বাংলাদেশে স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকসদল তাকে অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। সেখানে তিনি একটি ‘বিচিত্রা বকুল’ গাছের চারা রোপন করেন এবং সৌধের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।
এসময় তার সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ন ও গণপ‚র্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, ত্রান ও দ‚র্যোগ প্রতিমন্ত্র ডা. এনামুর রহমার, ৯ পদাতিক ডিবিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আকবর, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দুপুরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার এবং অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারপার্সনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন জাদুঘর চত্বরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন জাতির পিতার ইতিহাস সম্পর্কে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং জাদুঘর ঘুরে ঘুরে দেখান। পরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে পড়াশোনার কারণে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোতে শেরিংয়ের কাছে এই দেশ তার নিজের দেশের মতোই। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনারেল সার্জারিতে এফসিপিএস-ও করেন। পরে দেশে ফিরে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। ২০১৩ সালে সিভিল সার্ভিস থেকে অব্যাহতি নিয়ে রাজনীতির মাঠে নামেন। তিনি বাংলাদেশে ১০ বছর কাটিয়েছেন। তাই এই দেশটি প্রধানমন্ত্রী লোতে শেরিংয়ের কাছে খুবই পরিচিত।
দীর্ঘ শিক্ষাজীবনে বাঙালি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে কাছ থেকে দেখেছেন শেরিং। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের স্মৃতিও তার রয়েছে। তবে এবারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অভিজ্ঞতা নিশ্চয় ভিন্নতর হবে তার।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান। সেই সুবাদে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া, লোতে শেরিং বাংলাদেশে পড়ালেখা করলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবার প্রথম বাংলাদেশে আসছেন। আবার একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুর পর এই প্রথম কোনো সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফরে এলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।