Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘রোয়ানু’র আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূল

নিহত ২২ : ঘণ্টায় ১২৭ কি.মি. গতির ঘূর্ণিঝড়ের সাথে প্রবল জলোচ্ছ্বাস

প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ২১ মে, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে চট্টগ্রামে ১২, ভোলায় ৩, পটুয়াখালী ১, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৩, ১, কক্সবাজার ২ জনসহ মোট ১৯ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশস্থানে প্রবলঝড়ে গাছ পড়ে ও ভারী বর্ষণে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার দুপুরে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২৭ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে এ ঘূর্ণিঝড়। বিকেলে এটি বাংলাদেশ অতিক্রম করে। পূর্ণিমার ভরাকাটালে ভর করে আসা ঘূর্ণিঝড়ের তা-বের সাথে অন্তত ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ‘সিডর’ এবং ‘আইলার’ পর সাম্প্রতিককালে রোয়ানুই হচ্ছে বড় ঘূর্ণিঝড়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা: বন্দরে অচলাবস্থা
রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে বন্ধ রয়েছে দেশের অর্থনীতির মূলচালিকাশক্তি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। মংলা সমুদ্রবন্দরসহ দেশের সবকটি বন্দরে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ। গতকাল সকাল থেকেই চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান উঠা-নামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ২, মহানগরীর ষোলশহর ৩ ও বাঁশখালীতে ৭ সহ ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পানিতে ভেসে নৌযান ডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া আরো ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে গত রাতে জেলা প্রশাসক জানান। জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলার বিস্তীর্ণ চর ও দ্বীপাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল, খামারের মাছ ও বসতবাড়ি। হাঁটু থেকে কোমর পানিতে প্লাবিত হয় দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামের অন্যতম সওদাগরী পাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। এসব বাণিজ্যকেন্দ্রের প্রায় সবকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গুদাম এবং আড়ত কয়েক ফুট তলিয়ে যাওয়ায় হাজার কোটি টাকার সম্পদ ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।
মহানগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, মাঝিরঘাট, সদরঘাট, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকার দোকান-পাট, গুদাম, আড়ত পানিতে তলিয়ে গেছে। আবহওয়া বিভাগ ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা দেয়ার পর থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়। উপকূলীয় অঞ্চলের ৩ হাজার ৪৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র এবং সেইসাথে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় কয়েক লাখ উপকূলবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় প্রশাসন। চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর এলাকার লোকজনকেও নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। এতে করে প্রাণহানীর ঘটনা তেমন না ঘটলেও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সহায়-সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জোয়ারের পানি সরে যাওয়ার পর ধ্বংসলীলার চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম উপকূলে ছোবল মারে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়, প্রচ- শক্তিমত্তা নিয়ে দেশের উপকূলে আঘাত হানে এ ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের শুরুতে বেলা সোয়া ১২টায় এসব সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ১২৭ কিলোমিটার রেকর্ড হয়। এ হিসেবে সিডর ও আইলার পর এটিই হচ্ছে সাম্প্রতিককালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রচ- ছোবলের সাথে ল-ভ- হতে শুরু করে উপকূলীয় জনপদ। গাছপালা, বসতবাড়ি উপড়ে পড়ে টিনের চাল উড়ে যায়। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তা এবং বিদ্যুতের তারে। তার আগেই বেলা ১১টা থেকে মহানগরীর সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রবলবেগে জলোচ্ছ্বাস একের পর এলাকা গ্রাস করতে শুরু করে। চট্টগ্রাম মহানগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ বিশাল এলাকা কয়েক ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়।
শুক্রবার থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে সরিয়ে নেয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বহির্নোঙরে ১৭২টি জাহাজ নোঙর করা ছিল। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কবলে পড়ে উত্তাল সাগরে বিকল হয়ে যায় জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজ ‘বাংলার শিখা’। নোঙ্গর ছেড়া বিকল জাহাজটিকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে চট্টগ্রাম বন্দর ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে উত্তাল সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ বাংলার শিখার দুটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। দুপুরের কিছু আগে বহির্নোঙরের আলফা অ্যাংকরেজে এমভি বাংলার শিখা অবস্থান করছিল বলে জানান বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর এইচ আর ভুইয়া। তিনি বলেন, জাহাজটি বহির্নোঙরে নোঙরের করার সময় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। সমুদ্রে অতিরিক্ত ঢেউয়ের কারণে জাহাজটির নোঙর মাটি আঁকড়ে রাখতে পারছিল না। পরে ওই জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এমটি গাগাসন জহর জাহাজকে ধাক্কা দেয়। পরে নৌবাহিনী ও বন্দরের টাকবোটের মাধ্যমে জাহাজ দুটিকে সৈকতের কাছাকাছি নিরাপদে রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতের অগ্রিম প্রস্তুতি হিসেবে বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে অবস্থানরত বড় জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের সময় বড় জাহাজগুলো গভীর সমুদ্রে নিরাপদ স্থানে নিয়ে ইঞ্জিন চালু রেখে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। বাংলার শিখা নোঙর করার সময় তার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। গতকাল সকাল থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ ছিল দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের সব কারখানা।
রোয়ানুর প্রভাবে কয়েকটি উপজেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে ফসলের জমি, ক্ষেত-খামার ও বসতবাড়ি। জেলার সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সীতাকুন্ডের কয়েকটি ইউনিয়নে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। উপকূলীয় উপজেলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। সন্দ্বীপে সওদাগর হাট এলাকার কাছে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়েছে। ঝড়ে কিছু কাঁচা ঘর বাড়ি ভেঙে পড়েছে। সব দোকানপাট বন্ধ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বালির বস্তা দিয়ে সেসব মেরামতের চেষ্টা চলছে। সাগর তীরের সব এলাকা থেকে স্থানীয়রা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গেছে। স্থানীয়রা জানান, জোয়ারে অনেক এলাকা কোমর থেকে বুক সমান পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন দুটির সিংহভাগ এলাকার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে। আনোয়ারার ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বেলা ১২টার পর থেকে চারটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। ইউনিয়ন দুটির বেশিরভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। আনোয়ারার স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, রায়পুরা ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের মূল সড়কে বেলা দুইটায় প্রায় দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার পানি ছিল। শুরুতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকলেও পরে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়েই পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আনোয়ারার এই দুই ইউনিয়নের সবগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে উপকূলীয় এলাকার মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে শুকনো খাবারও বিতরণ করা হচ্ছে। বাঁশখালীর স্থানীয় সাংবাদিক ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উপজেলার খানখানা বাদ এলাকায় সাগর থেকে জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে। সীতাকুন্ডের ইউএনও নাজমুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, উপজেলার কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ অতিক্রম করে পানি প্রবেশ করেছে। উপকূলীয় এলাকা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে সকাল ১১টা থেকে নগরীতে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টিও হয়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়ায় কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে প্রচ- ঝড়ো হাওয়ায় টিন ও ইট মাথায় পড়ে মো. রকিব (১১) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। দুপুর পৌনে ১টায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় ছেলেটি গাছের নিচে আম কুড়াতে গিয়েছিল। এ সময় তিনতলা একটি ভবনের উপর থেকে ঝড়ো হাওয়ায় ইটএসে তার মাথার উপর পড়ে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম জানান, গুরুতর আহত রাকিবকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
তলিয়ে যায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। ঘূর্ণিঝড়ের শুরুতে প্রবলবেগে ধেয়ে আসা জলোচ্ছ্বাস পুরো এলাকা গ্রাস করে নেয়। কোমর থেকে বুক সমান পানিতে প্লাবিত হয় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জসহ মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে করে এসব এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আড়ত এবং গুদামে পানি ঢুকে যায়। রোজার আগে আমদানিকৃত বিভিন্ন রকমের ভোগ্যপণ্যে ঠাসা গুদাম ও আড়তে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় এ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে এবারের জোয়ার ছিল স্মরণকালের মধ্যে বেশি। পূর্ণিমার ভরাকাটাল এবং সেইসাথে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অঘাতে জোয়ারের তীব্রতা ও পানির উচ্চতা দুটোই বেড়েছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ জানান, জলোচ্ছ্বাসে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদাম প্লাবিত হয়েছে। এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে পানি ঢুকেনি। এতে করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করেন তিনি। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা দু’একদিনের মধ্যে জানা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব হবে না। বিকেলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ছাড়াও অন্যান্য এলাকার দোকানপাট, মিল-কারখানা ও গুদাম ঘর পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে কোটি টাকার মালামাল। এর ফলে আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে মজুদ পণ্য ভিজে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জানিয়ে সাবেক কাউন্সিলর খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এই পাইকারি বাজারটি প্রায় ৭-৮ বছর ধরে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। অর্থনৈতিক ক্ষতির সাথে লড়াই করে কোনো মতো টিকে আছেন চাকতাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে বাজারের মজুদকৃত কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের সর্ববৃহৎ এই পাইকারি বাজার কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। কয়েক হাজার দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ছোট-বড় সাত হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতকোটি টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। যা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে কিছু সংরক্ষণ আবার কিছু ফেলে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি বন্ধের দিন থাকায় বেশকিছু দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মিল, গুদাম বন্ধ ছিল। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়। মহানগরীর জীবনযাত্রা দিনভর কার্যত অচল থাকে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। কিছু এলাকায় সীমিত আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হলেও মহানগরী ও জেলার বেশিরভাগ এলাকা ছিল বিদ্যুৎহীন।
কক্সবাজার অফিস জানায়, কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুতুবদিয়ায় ২জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জেলায় আহত হয়েছে অন্তত ২৫জন। জলোচ্ছ্বাসে ২০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৩০ হাজার বাড়ি-ঘর। ভেঙ্গে গেছে উপকূলের ১০০ কি.মি. বেড়িবাঁধ।
সকাল থেকে রোয়ানুর প্রভাবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্ট হয়। এসময় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের আলী আকবর ডেইল, লেমশীখালী, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়ন, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, কুতুবজোম ও মাতারবাড়ি ইউনিয়ন, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন ও কক্সবাজার সদরের পোকখালী, গোমাতলী ও চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন এবং কক্সবাজার পৌরসভার বিমানবন্দর সংলগ্ন ১নং ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার শতাধিক গ্রাম ৩-৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়।
বিকাল সাড়ে ৩টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন। প্রেসব্রিফিং-এ তিনি জানান, জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়া দ্বীপের ২জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাস্টার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫) দুই নৌকার মাঝখানে চাপা পড়ে প্রাণ হারায় আর উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের আব্দুর রহিমের ছেলে মোঃ ইকবাল (২৫) বসতবাড়ির মাটির দেয়াল চাপা পড়ে প্রাণ হারায়।
ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকায় বেশ কিছু গাছ-পালা ও কাঁচা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবদিয়া ও শাহপরীর দ্বীপের অনেক অংশে বেড়িবাঁধ না থাকায় সাগরের পানি প্রবেশ করে ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে।
কক্সবাজারের নুনিয়ার ছড়া এলাকা দিয়ে সাগরের পানি প্রবেশ করে কক্সবাজার বিমান বন্দরের বর্ধিত অংশ ডুবে গেছে।
প্রেস ব্রিফিং-এ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজার উপকূলের বেড়িবাধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৪ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার উপকূলের অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূল দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে সারাদিন। এতে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকায় গাছ-পালা ও কাঁচা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবদিয়া ও শাহপরীর দ্বীপের অনেক অংশে বেড়িবাঁধ না থাকায় সাগরের পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। এ ছাড়া কক্সবাজারের নুনিয়ার ছড়া এলাকা দিয়ে সাগরের পানি প্রবেশ করে কক্সবাজার বিমানবন্দরের বর্ধিতাংশ প্লাবিত হয়েছে।
আপাতত ঘূণিঝড় রোয়ানোর বিপদ কেটে গেছেবলেই জানাগেছে। তবে জেলার উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষের দর্ভোগ বেড়েছে। ল-ভ- করেগেছে প্রায় এক শত কিমি বেড়িবাঁধ। শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো বসবাস করছেন অর্ধলক্ষ নারী-পুরুষ।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে আগে থেকেই কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আগের দিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় জেলা প্রশাসক আলী হোসেন কক্সবাজার জেলায় ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে নি¤œাঞ্চলের লোকজনকে আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছিলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর সাথে ৬ হাজার ২১০ জন স্বেচ্ছা সেবক কাজ করছেন। রামু সেনানিবাসের সৈনিকদের ও জরুরী মূহুর্তে উদ্ধার অভিযানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। আগেভাগেই মহেশখালী, সোনাদিয়া ও ধলঘাটাসহ জেলার নি¤œাঞ্চলের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক জানান, উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি ধরনের ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজারে গতকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নিচু এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করছে ৬হাজার সেচ্ছাসেবক। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মহেশখালী, ধলঘাটা, কুতুবদিয়া, মাতারবাড়ি ও সোনাদিয়া দ্বীপের নিচু এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, জেলার ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উঁচু ভবনগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ১০টি মেডিকেল টিম। বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
নাছিম উল আলম জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মাঝারী মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ গতকাল শেষ রাতে পশ্চিম উপকূলের সুন্দরবন এলাকায় প্রথম আঘাত হেনে গোটা উপকূলভাগকে অনেকটাই তছনছ করে দেয়। ঝড়টি দুপুরের পরে ভোলার দক্ষিণভাগ অতিক্রম করে সন্ধার দিকে সবলেই হাতিয়া-সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করে ভূভাগে আঘাত হেনে কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। রেডক্রিসেন্ট-এর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর প্রায় ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল দিনভরই উপকূলবাসীকে সতর্ক করা সহ উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। গতকাল সকাল থেকে প্রায় ৫লাখ নারী-পুরুষ ও শিশুকে উপকূলের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করা হয়। সন্ধার আগেই দক্ষিণ উপকূলের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে আশ্রিতরা ঘরে ফিরে গেলেও ভোলা উপকূলের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু অবস্থান করছিল। এ ঝড়ের ছোবলে উপকূলের বিপুল সংখ্যক গাছপালা ও কাঁচা ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিস্তারিত পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে রাত ৩টার আগেই বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হয়ে গেছে। যা গতকাল সন্ধা পর্যন্ত পুনর্বহাল করা সম্ভব হয়নি। গোটা উপকূলের হাজার হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ও পরিপক্ব আউশ ধানসহ বিপুল পরিমান আগাম আমন বীজতলাও বিনষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন সবজির প্রায় পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে এ ঝড়ে। উপকূলের কলাপাড়াতে গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় ২শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এসময় বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে দেড়শ’ মিলিমিটারেরও বেশী। গোটা বরিশাল মহানগরী পানির তলায় চলে যায় গতকাল সকালের আগেই। নগরীর অনেক রস্তায় জাল ফেলে মাছ ধরতেও দেখা যায় এসময়। শিশুরা সাতার কেটে আনন্দ ফ’র্তিও করেছে নগরীর নবগ্রাম রোড সহ কয়েকটি সড়কের ওপর। দুপুর ৩টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্তই ঝড়ো হাওয়া বইছিল। তবে বিকেল ৪টা দিকে কয়েকবারই মেঘের আড়াল থেকে সূর্য কয়েক মিনিটের জন্য বেরিয়ে এসে রোদ ছড়ায়।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু গতকাল শেষ রাতে খুলনা-বাগেরহাট উপকূলের সুন্দরবনে প্রথম আঘাত হানার পরে ক্রমে তা পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সকাল ১০টা মধ্যে কুয়াকাটাÑকলাপাড়া উপকূল অতিক্রম করে ঝড়টি আরো পূবে এগুতে থাকে। কলাপাড়া রাডার স্টেশন দমকার আকারে ঝড়ের তীব্রতা ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার রেকর্ড করলে গড়ে তা ছিল ৬০-৬৫কিলোমিটার পর্যন্ত। এর পরে ঝড়টি খুবই ধীরে দেশের পূব উপকূলে এগুতে থাকে।
রোয়ানু’র কারণে শুক্রবার বিকেল থেকে বরিশাল নদী বন্দর সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়। ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল ফেরি সার্ভিসটিও শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্ধ করে দেয় হয়। অপরদিকে রাজধানীর সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া-কাওড়াকান্দী সেক্টরে ফেরি সার্ভিস রাতভর চালু থাকলেও প্রচ- ঝড়ো হওয়ার কারণে গতকাল সকাল ৭টার পরে ঐ ফেরি সার্ভিসটিও বন্ধ করে দিতে হয়। পাটুরিয়াÑদৌলতদিয়া সেক্টরে রো-রো ফেরিগুলো দিন-রাতই যানবাহন পারাপার করছিল। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও রাজধানীমুখী নৌপথে নৌযোগাযোগ পুনর্বহাল হয়নি।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৩জন নিহত
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় ও সমুদ্রের জোয়ারে হাতিয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চানন্দী ইউনিয়নে প্রবল জোয়ারের তোড়ে কয়েকজন ভেসে গেছে। এদের মধ্যে তিন জনের লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে সমুদ্রের জোয়ারে তমরদ্দি ইউনিয়ন, সোনাদিয়া ইউনিয়ন, সুখচর ইউনিয়ন, নলচিরা ইউনিয়ন, চরঈশ^র ইউনিয়ন, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন ও চানন্দী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে কমপক্ষে দুই লক্ষাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে সহস্রাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট জোয়ারে ঘরবাড়ী নিমজ্জিত হয়েছে। সোনাদিয়া ইউনিয়নের প্লাবিত গ্রামগুলো হলো, সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রাম, পশ্চিম মাইজচরা, পশ্চিম সোনাদিয়া গ্রাম,পন্ডিত গ্রাম, নাছিম গ্রাম, মিদ্যাগ্রাম, সুইজ এলাকা, সেকান্তর গ্রাম, জেলেপাড়া ও তেমুহনি এলাকা। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের চরচেঙ্গাবাজার সহ কয়েকটি বাজারে জোয়ারের পানি ডুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চানন্দী ইউনয়িনের নলেরচর ও নঙ্গলিয়া চরে জোয়ারের পানিতে চার হাজার ঘরবাড়ী ডুবে গেছে।
সকালে, হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের চর আমানউলা গ্রাম, রামচরন বাজার, কামাল বাজার, চেয়ারম্যান বাজার, বৌ-বাজার, দাসপাড়া, কাহার গ্রাম, দরগা গ্রাম, বাদশা মিয়াগো গ্রাম, কাদির সর্দার গ্রাম ও মালিশাগো গ্রাম। চরঈশ্বর ইউনিয়নের তালুকদার গ্রাম, কালুহাজির গ্রাম, আফাজিয়া। তমরদ্দি ইউনিয়নের আঠারবেকী, জোবায়েরা, বেজুগালিয়া, জোড়খালী, কোরালিয়া, মদনখালী। সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রাম, পশ্চিম মাইজচরা, পশ্চিম সোনাদিয়া গ্রাম, পন্ডিত গ্রাম, নাছিম গ্রামসহ ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। নিঝুমদ্বীপের নি¤œাঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাতিয়া আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে জানায়, জোয়ারে চানন্দী ইউনিয়নে তিনজনের লাশ উদ্বার করা হয়েছে। অবশিষ্ট নিখোঁজদের সন্ধানে জোর তল্লাশী চলছে। তিনি আরো বলেন, ঝড় ও জোয়ারে দুই লক্ষাধিক অধিবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সহস্রাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার একর ফসলী জমি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি পরিমান নিরূপণ করা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। হাতিয়া আসনের এমপি আয়েশা ফেরদৌস জানান, ঝড় ও জোয়ারে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটারিং করা হচ্ছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, জোয়ারে বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে হাতিয়াবাসীর দুর্ভোগ আরো বৃদ্বি পাবে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসান মোহাম্মদ মহি উদ্দিন জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় অনেকগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
তজুমদ্দিনে ২জন নিহত
চরফ্যাশন (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু‘র আঘাতে বিছিন্ন দ্বীপাঞ্চলসহ অধিকাংশ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আহত হয়েছে অন্তঃত ২০জন। ৫ শতাধিক ঘর বাড়ী-দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তজুমদ্দিন উপজেলায় ২জন নিহত হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার মেঘনা বেড়ীঁবাধ ভেঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের জিও ব্যাগ, বালি পানিতে ভেসে গেছে এবং বিছিন্ন দ্বীপ কুকরী-মুকরী, ঢালচর ও মজিব নগর এলাকায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবারে ভোর রাতে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু‘র আঘাত হানে চরফ্যাশন ও তজুমদ্দিন এলাকায়। তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউপি‘র চেয়ারম্যান রিয়াদ হোসেন হান্নান জানান, তার এলাকায় শতাধিক বসতঘর বাড়ী, ৩০টি দোকানপাট, চাচড়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা ও চাচড়া দাখিল মাদ্রাসা বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রবল বর্ষনে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মেঘনার বেড়িবাঁধ খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে যে কোন সময় ভেঙ্গে তলিয়ে যেতে পারে তজুমদ্দিন এলাকা।
চরফ্যাশন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন আখন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আমরা কন্ট্রোল রূম খুলে সার্বক্ষণিক পৌর সভাসহ ২১টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর নিয়েছেন। এবং মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্যে আহবান জানিয়েছেন।
তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, জেলা প্রশাসক ত্রাণ তহবিল থেকে নিহত পরিবারকে ২০হাজার টাকা প্রদান করেছেন। এ ছাড়াও নিরাপদ আশ্রয়নকৃত সাধারণ মানুষের জন্যে চিড়া-মুড়ি ও গুড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা সন্তষ কুমার সর্দার জানান, এই পর্যন্ত হাসপাতালে নিহত ২জন এবং আহত অবস্থায় ২০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। এদিকে মেঘনা পাড়ের মোশারেফ হোসেন জানান, মেঘনার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অতিজোয়ারে অধিকাংশ এলাকায় ২/৩ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ভোলার চরফ্যাশনের বিছিন্ন দ্বীপ ঢালচর, কুকরী-মুকরী ও মজিব নগর ইউনিয়নের প্রায় ৩ শতাধিক কাচা ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ঢালচর সাবেক ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কালাম পাটওয়ারী জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, শতাধিক গবাদিপশু পাখি পানিতে ও পুকুরের ডোবার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
তজমুদ্দিনের শশীগঞ্জ গ্রামের ঘরের নিচে চাপা পড়ে নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) একই এলাকার মফিজুল ইসলামের ছেলে আকরাম (১২) নিহত হয়। আহত হয়েছে প্রায় ২০জন। তারা হলেন, চাদঁপুরের হাজীগ্রামের রুমা (২০), আঃ নোমান (২৭), ভূইয়া কান্দির ইয়ানুর বেগম (২৫), তানহা (৬), দালাল কান্দির সোহাগ (১৬), শশীগঞ্জের জাহিদুর রহমান মিলল (৩২), আঃ রহিম (৩৫), আবুল কালাম (৪০)। স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা সন্তষ কুমার সর্দার জানান, তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে চলে গেছেন।
পটুয়াখালীতে নিহত ১
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের সুন্দর আলীর স্ত্রী নয়া বিবি (৫২) শনিবার ভোররাতের দিকে প্রচ- বাতাসের বেগে ঘর চাপা পড়ে মারা যান। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশত লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও উচ্চ জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন উপজেলায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে ও ভিতরে জলাবদ্ধতার ফলে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে উপড়ে গেছে হাজার হাজার গাছপালা। চরাঞ্চলসহ জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৩ লাখ মানুষ। সাগর রয়েছে উত্তাল। নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার নি¤œাঞ্চল। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, রবি ফসলের মাঠ। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই জেলার সাথে উপজেলাগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গ্রামে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যাওয়ায় বসতিরা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
এ সময় চর আন্ডার বেড়িবাঁধহীন আলেকান্দা চরে পানি প্রবেশ করে দেড়শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়, পরবর্তীতে পানি বন্দী মানুষকে ট্রলার, নৌকায় করে স্থানীয় সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে আসা হয় বলে জানিয়েছেন চরআন্ডার সিপিপি টিম লিডার চান মিয়া। পানিবন্দী লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার সময় বেশ কিছু লোকজন আহত হয়। এ ছাড়া রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজের বউবাজার, শিকদার বাড়ীর পাশে ৫৪/৪ পেল্ডারের বেড়ীবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় সেখানে প্রায় ১০ সহ¯্রাধিক লোক পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের ৫৪ নং বন্যানিয়ন্ত্রন বাধের দেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে ৭০ থেকে ৮০ ফিট ভেড়ীবাঁধ ভেঙে সেখানে প্রায় আড়াইহাজার মানুষ বন্দী হয়ে পড়েছে, মহিপুর ৪৭/১ পোল্ডারের নিয়ন্ত্রণ বাঁধের রিং বাঁধ দুই স্থানে প্রায় ৩০ ফিট ভেঙে প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে কলাপাড়াবাসী
কলাপাড়া উপজেলা সংবাদদাতা : ডুবে গেছে উপজেলার চম্পাপুর, মহিপুর ও লালুয়া ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম। উপকূল জুড়ে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাতের ফলে গাছপালা, কাঁচা ঘরবাড়ি ও ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরর মাছ। রোয়ানু’র আতংকে আশ্রয়কেন্দ্র ও পাকা ভবন গুলোতে সহায়-সম্বল নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে উপকূলীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। শনিবার সকাল থেকেই অনেকের বাড়িতে উনুনে হাঁড়ি উঠেনি। সারাদিনেও দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। এদিকে অশ্রয়হীন অভুক্ত লোকজনদের মাঝে স্থানীয়রা শুকনো খাবার বিতরণ করেছে। ঝড়ের আশংকা কেটে গেলেও নি¤œাঞ্চল ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগে কমেনি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুরের বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে জোঁয়ারের পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে গেছে। একই অবস্থা লালুয়ার ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের বেড়ি বাঁধের। দুই ইউনিয়নের বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শরণখোলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন
বাগেরহাট জেলা ও শরণখোলা উপজেলা সংবাদদাতা : শুক্রবার থেকে শনিবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ফলে নি¤œাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া এর প্রভাবে বৃষ্টিপাতে জেলার শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর তীরবর্তী বেড়িবাঁধের তাফালবাড়ি পয়েন্টের কয়েকটি স্থানে ফাটল ও ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী পরিদর্শন করেন।
এদিকে শনিবার বিকেলে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া ১৫ হাজার মানুষ নিজ নিজ বসত বাড়ি ফিরে গেছে। বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় আশংকায় সাইক্লোন শেল্টার সহ বসতবাড়িতে লক্ষাধিক মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। তারা এবার বড় ধরনের কোন দুর্যোগের মুখে পড়েনি।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে জেলার বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি এলাকায় বেড়িবাঁধের কিছু এলাকা ভেঙে পড়েছে। তবে লোকালয় এখনও প্লবিত হয়নি।
শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা : শরণখোলার নদরদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বলেশ্বরের প্রবল ঢেউ এবং জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়ি বাধের সাউথখালী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি লঞ্চ চলাচল বন্ধ
মাদারীপুর জেলা ও শিবচর উপজেলা সংবাদদাতা : মাদারীপুরে ২ দিন ধরে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বেশকিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। পদ্মা নদীতে অব্যাহত পানি বৃ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘রোয়ানু’র আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ