Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘আমি কি নিয়া থাকমু আমারে কইয়া যা’

বনানী ট্র্যাজিডি

মো. হাবিবুর রহমান হাবীব, শরীয়তপুর | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাজধানীর বনানী এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত মির্জা আতিকুর রহমানের শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী এ্যানি আক্তার পলি চোখে অন্ধকার দেখছেন পরিবারের চাকা সচল রাখার একমাত্র অবলম্বন স্বামীকে হারিয়ে।
শাশুড়ি ও দুই সন্তান নিয়ে আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে সেই সংশয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন পলি। কেউই এ অবস্থায় তাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা কথা বলতে গেলেই পলি হাত তুলে শাশুড়ি ও দুই সন্তানকে দেখিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। তার বুক ভেসে যায় দুই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানিতে।
অপরদিকে বৃদ্ধা মা হাজেরা বেগম ছেলের শোকে হাউ মাউ করে বুক কেঁদে উঠেন। আর বলেন, ‘কথা ছিল বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে আতিক বৈশাখে মাসে আসবে। কিন্তু এত আগেই চলে আইলিরে বাপ? আমি কি নিয়া থাকমু তুই আমারে কইয়া যা’। গত ২৯ মার্চ শুক্রবার সকালে আতিকের লাশ শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব সারেঙ্গা গ্রামে নিজ বাড়িতে আনা হয়। লাশ আসার পর বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কান্নায় গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। লাশ দাফন করা হলেও ছেলের শোকে মা হাজেরা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন।
আতিকের স্ত্রীর বড় ভাই মুকুল খান জানান, শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব সারেঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদির মির্জার ছেলে মির্জা আতিকুর রহমান বনানীর স্ক্যান অয়েল কোম্পানিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী এ্যানি আক্তার পলি, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে তানহা (১০) ও ছেলে রাফিউর রহমানকে (৪) নিয়ে ঢাকার সেনানিবাস এলাকার মানিকদিতে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
প্রতিদিনের ন্যায় ২৮ মার্চ তিনি কর্মস্থল বনানীর ১৭ নম্বর সড়কে এফ আর টাওয়ারের ১৩ তলায় যান। আগুন লাগার পর বেলা আনুমানিক ১টার দিকে স্ত্রীকে ফোনে ঘটনার কথা জানান। একই সঙ্গে স্ত্রীকে দোয়া করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ভবনে আগুন লেগেছে। কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় নিশ^াস বন্ধ হয়ে আসছে। আমি শ^াস-প্রশ^াস নিতে পারছি না। হয়তো আমি আর বাঁচবো না। আমার জন্য দোয়া কর’।
মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে তার স্ত্রীর বড় ভাই মুকুল খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। এ সময় তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এখান থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী সন্তানদের দেখে রাখবেন’। এর কিছুক্ষণ পর আতিকের মোবাইল সংযোগ আর পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
আতিকের স্ত্রী এ্যানি আক্তার পলি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুন লাগার পর আমাকে ফোন দিয়ে বলে, পলি তুমি কি বাসায় এসেছো। আমার জন্য দোয়া করো। আমার পুরো ফ্লোর অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি নিঃশ^াস নিতে পারছি না। এই শেষ কথা। আর আমার সাথে কথা হয়নি। আমার সবই শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো। আমার শাশুড়ি ও দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ কি হবে এসব ভাবনায় চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বনানী ট্র্যাজিডি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ