Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যখনই বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে তখনই গুপ্তহত্যা : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৩০ এএম, ২১ মে, ২০১৬

বুলগেরিয়ার সাথে ৪টি চুক্তি স্বাক্ষর
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ‘পরিকল্পিতভাবে’ দেশের সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। তবে সরকার অপরাধীদের ধরে তাদের বিচারও শুরু করেছে বলে বুলগেরিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ার হোটেল ম্যারেনিলাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে  সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন। পরে তার উপ-প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান।
নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যখনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে যায় তখনই একটি গোষ্ঠী এ ধরনের পরিকল্পিত বিচ্ছিন্ন হত্যাকা- ঘটায়।” প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের কাজও সরকার শুরু করেছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ২০১৩-১৪ সালে এবং সেই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরুতে দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের সময় পেট্রোল  বোমা ও নাশকতার ঘটনাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। “তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) দেশব্যাপী মানুষ পুড়িয়ে এ ধরনের নাশকতা চালিয়েছিল শুধু যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য, পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য,” বলেন উপ-প্রেস সচিব।
সরকার যে কঠোর হাতে সেসব নাশকতামূলক কর্মকা- দমন করেছে, সে কথাও প্রবাসী বাংলাদেশিদের জানান সরকারপ্রধান। নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
 শেখ হাসিনা তাদের বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির জনককে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা সেই বিচার বন্ধ করে দেয়। যুদ্ধাপরাধীদের কারগার থেকে মুক্তি দিয়ে পুনর্বাসন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে খুনিরা পালিয়ে আছে, তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে শাসকদলের হাত দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির কথাও প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন বলে তার প্রেস সচিব জানান। “প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস জানতে দেয়নি। নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন।”
সাক্ষাতে বুলগেরিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বুলগেরিয়ার রাজধানীতে বাংলাদেশের কনস্যুলার সেবা চালুর কথা বলেন। বুলগেরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকী এ সময় জানান, ভিসা ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে আগামী জুন থেকেই একটি কনস্যুলার টিম সোফিয়ায় কাজ শুরু করবে।
অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসীদের সঙ্গে এই সৌজন্য সাক্ষাতের আগে প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে সোফিয়ায় বুলগেরিয়া হিস্ট্রি মিউজিয়াম পরিদর্শনে যান। সফরসঙ্গীদের নিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বোইদার ডিমিত্রভ। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ঘুরে ঘুরে দেখেন। রাতে হোটেল ম্যারেনিলাতে ফিরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। গ্লোবাল উইমেন লিডারস  ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে বুধবার লন্ডন থেকে বুলগেরিয়ায় যান শেখ হাসিনা
৪ চুক্তি স্বাক্ষরিত
বাংলাদেশ ও বুলগেরিয়ার মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি কাঠামো চুক্তিতে সই করেছে দুই দেশ। গতকাল (শুক্রবার) সোফিয়ায় বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হয়। বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের চুক্তির বিভিন্ন বিষয় জানান।
দুই দেশের সরকারের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও বুলগেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোম্যাটিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন ও বুলগেরিয়ার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এন্টারপ্রাইজ করপোরেশনের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক তিনটি স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এবং বুলগেরিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে হয় পারস্পরিক সহযোগিতার চুক্তি। অর্থনৈতিক সহযোগিতার সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক ও বুলগেরিয়ার পক্ষে দেশটির অর্থনৈতিক উপমন্ত্রী দানিয়েলা ভেজিয়েভা স্বাক্ষর করেন।

আজ ফিরছেন
বুলগেরিয়া সফর শেষে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ১০৪০ ফ্লাইটে সোফিয়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। আজ শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যখনই বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে তখনই গুপ্তহত্যা : প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ