পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারাবন্দি অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল (সোমবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। সেখানে তাকে কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য নতুন করে মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডের প্রতি খালেদা জিয়ার আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক। তিনি বলেন, আমরা এখনো এমন কিছু পাইনি যার জন্য তাঁর বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। এখানেই সব চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, শংকিত তাই দাবি করছি তাকে অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হোক। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে তার চিকিৎসা কীভাবে হচ্ছে।
এর আগে সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র কারাগারের একটি ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে আনা হবে এজন্য সকাল ১০টা থেকেই কেবিন ব্লকের কাছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টায় কালো রঙের একটি গাড়িতে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বেগম জিয়াকে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। গোলাপী শাড়ি ও স্কার্ফ পরিহিত খালেদা জিয়াকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে বসানো হয়। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম। গাড়ির দরজা খোলার সময় দেখা যায় বেগম খালেদা জিয়া ফাতেমার পাশে হেলান দিয়ে আছেন। গাড়ি থেকে নামিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নেওয়া হয় কেবিন ব্লকের ছয় তলায়। এ সময় খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখতে হাসপাতালের বি-ব্লকসহ পাশের বিল্ডিংগুলোর প্রতিটি ফ্লোরের বারান্দায় সাধারণ মানুষকে গভীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বেগম জিয়া হাসপাতালে প্রবেশের সময়, বি-ব্লকের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা থেকে মহিলা দলের কর্মীরা স্লোগান দেন। কেবিন ব্লকে ৬২১ নম্বর কেবিনে রাখা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। পাশের ৬২২ নম্বর কেবিনটিও তার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
দলীয় প্রধানকে হাসপাতালে নেওয়ার খবরে কেবিন ব্লকের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার। কেবিন ব্লকের পাশে ছিলেন মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান।
খালেদা জিয়াকে কেবিনে নেয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত এবং আমরা সেজন্যই বার বার বলছি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হোক। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে তার ট্রিটমেন্টটা কীভাবে হবে। আমরা আশা করব সরকার চেষ্টা করবেন এখানে যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা তাকে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার চিকিৎসার জন্য ভাল একটি পরিবেশ যেন তৈরি করা হয়। আমরা আগেও বলেছি, এখানে তাকে যেন এমনভাবে রাখা না হয় যাতে তিনি আবারও মনে করেন যে বন্দি অবস্থায় তার চিকিৎসা হচ্ছে। এ কথাটাই আমরা বার বার বলেছি, তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া হোক।
বেগম জিয়াকে ভর্তির পর গতকাল দুপুরে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফিং করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন যেসব রোগ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন তা তুলে ধরে বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে দেখেছি। তার সঙ্গে কথা বলে তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে বসে থেকে কথা বলেছেন। চিকিৎসকদের মতে তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়া) পায়ে ও জয়েন্টে ব্যথা আছে। তার ডায়াবেটিস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শরীর দুর্বল। তার ঘুম কম হয়, খাবারের রুচি কমে গেছে। তিনি একা হাঁটাচলা করতে পারছেন না, হাঁটার সময় আরেকজনের সাহায্য নিচ্ছেন।
পরিচালক বলেন, নতুন করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা তা দেখেছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। খালেদা জিয়ার কাছে রোগের বিস্তারিত শুনেছেন। তারা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। তাঁর ডায়াবেটিস আগেই ছিল। এটি বেড়েছে। আজকে খাবার পর র্যানডম ১৪ এসেছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসায় একজন চিকিৎসক প্রতিদিন নিয়োজিত থাকবেন। তিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দেবেন। খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ড সদস্যদের সামনে বসে কথা বলেছেন। খুব ভালোভাবে কথা বলেছেন। মেডিকেল বোর্ডের কাছ থেকে সুন্দরভাবে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন। বোর্ডের প্রতি ওনার আস্থা আছে। তাঁকে দেখেছি, উনি হ্যাপি।
খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন, পরিচালকের এমন বক্তব্যে সাংবাদিকরা জানতে চান, তাহলে তো খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু তাকে তো ভর্তি করা হয়েছে। জবাবে ব্রিগেডিয়ার আলম বলেন, খালেদা জিয়া যদি মনে করেন তিনি চলে যাবেন, কমফোর্ট ফিল করছেন না, তাহলে তিনি চলে যেতে পারেন। তিনি যদি থাকেন (হাসপাতালে) তাহলে প্রতিদিন একজন চিকিৎসক তাকে ভিজিট করবেন। উনি এখন ৬২১ নম্বর কেবিনে আছেন। আর তার সঙ্গে যারা রয়েছেন, তাদেরকে ৬২২ নম্বর কেবিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউ’তে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হবে কিনা এমন প্রশ্নে পরিচালক বলেন, উনার এখন যে সমস্যা, তা কোনও জটিল সমস্যা না। বিএসএমএমইউ’তে চিকিৎসা সম্ভব না এমন কিছু আমরা পাইনি। আমাদের বিশেষায়িত হাসপাতাল। খালেদা জিয়ার যা সমস্যা রয়েছে, তার চিকিৎসা করা এখানে সম্ভব।
নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠন:
অসুস্থ অবস্থায় কারাবন্দি থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. জিলন মিঞা সরকারকে। মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- রিউমাটোলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিমা পারভিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইকবাল মাহমুদ। এছাড়া মেডিকেল বোর্ডে দুজন সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা হলেন- রিউমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন। বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আগের বোর্ড থাকতে নতুন করে কেন মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল হক বলেন, আগের বোর্ডের সভাপতি আবদুল জলিল অবসরে যাওয়ায় নতুন বোর্ড করা হয়েছে। নতুন বোর্ডের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো আপত্তি জানাননি। তিনি এ বোর্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে কারা কর্তৃপক্ষ সোমবার তাকে আদালতে হাজির না করায় তার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল নতুন তারিখ ঠিক করে দিয়েছেন বলে খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানিয়েছেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।