পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন সমুদ্র বন্দরে ৭নং সংকেত জারি : ১৮ জেলায় ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে : প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি
ইনকিলাব ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ রোয়ানু ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে আরো শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এটি আজ বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে পূর্ণিমার ভরা কোটালে ভর করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে আঘাত হেনে মিয়ানমারের দিকে সরে যেতে পারে। দেশের তিন সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এছাড়া কক্সবাজারে ৬নং বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামাল গতরাতে সাংবাদিকদের জানান, উপকূলের ১৮ জেলায় ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ
রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় দেশের উপকূলীয় জনপদে আতঙ্কিত লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতরাত আটটার মধ্যে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৬০ কিঃমিঃ দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিঃমিঃ দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিঃমিঃ দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭০৫ কিঃমিঃ দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আর এসময় উপকূল এলাকা ও দ্বীপাঞ্চলগুলোতে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিঃমিঃ-এর মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিঃমিঃ যা দম্কা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কিঃমিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরসহ দেশের সকটি সমুদ্র বন্দরকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিপদ সংকেত জারির প্রেক্ষিতে উপকূলীয় জনপদে আতঙ্ক ভর করেছে। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে সবধরনের জাহাজ চলাচল ও মালামাল উঠানামার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত সব জাহাজকে শক্ত করে নোঙর করা হয়েছে। ছোটছোট নৌযানগুলোকে কর্ণফুলীর উজানে চলে যেতে বলা হয়েছে। সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোঘণা করা হয়েছে।
জান-মাল ও সহায় সম্পদ রক্ষা ও সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন জরুরী সভা করে সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলা সমূহের ৩ হাজার ৮৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। এই অঞ্চলের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে দেশজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উপকূলে ঝড়ে হাওয়া বইছে। ঘনঘোর মেঘ আর বৃষ্টির কারণে আবহাওয়ার গুমোটভাব কেটে গেছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ¥ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট,
খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ (ছয়) নম্বর নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
জেলা প্রশাসন ও বন্দরের প্রস্তুতি
‘রোয়ানু’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি। ঘূর্ণিঝড়টি বাঁশখালী-আনোয়ারা উপকূল দিয়ে আঘাত হানার সম্ভাবনা আছে। তাই সেখানকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। দুপুর দুইটা থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া বাঁশখালী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, মিরসরাই, সীতাকুন্ড, জেলার একমাত্র দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ উপজেলাক্রমেই উপকূলের আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকায় থাকা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। এই দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি তদারকি করছেন। নগরীতে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, নগরীতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে। এজন্য বাঁশখালী-আনোয়ারাকে ঘিরেই আমরা দুর্যোগ মোকাবেলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, বন্দরের জরুরী সভায় ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থানরত সকল লাইটারেজ জাহাজকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে অবস্থানরত সকল পণ্যবাহী জাহাজকে ২ ঘণ্টার নোটিশে বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙ্গরে নোঙ্গর করতে বলা হয়েছে। বন্দরে সকল ধরনের পণ্য উঠানামা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এছাড়া বন্দরের সকল ধরনের যন্ত্রপাতি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরবর্তী আদেশ না আসা পর্র্যন্ত চট্টগ্রামের সকল সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব রকমের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি সকল উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। জেলা কন্ট্রোলরুমের নম্বর হচ্ছে ৬১১৫৪৫।
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ক্রমেই উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ায় গভীর সাগরে থাকা অধিকাংশ ফিশিং ট্রলার ঘাটে ফিরেছে। ইতিমধ্যে ৯০-৯৫ শতাংশ ট্রলার ঘাটে ফিরেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পাওয়ার পর থেকে ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরতে শুরু করে। যে কয়েকটি ট্রলার ঘাটে ফেরেনি তাদের দ্রুত ফিরতে বলা হয়েছে।
অরক্ষিত উপকূলজুড়ে আতঙ্ক
ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ হুংকারে উপকূলীয় জনপদে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নেই, ভাঙা বেড়িবাঁধে ঢুকছে জোয়ারের পানি। ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষায় গড়ে তোলা উপকূলের নিরাপত্তা বেষ্টনী প্যারাবনও এখন ধ্বংস প্রায়। এ অবস্থায় অরক্ষিত উপকূলের লাখো মানুষ তাদের জানমাল রক্ষায় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। জীবন রক্ষায় দূরে কোন নিরাপদ স্থানে হয়তো যাওয়া যাবে, কিন্তু ভাঙা বেড়িবাঁধ আর অরক্ষিত উপকূল নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠার শেষ নেই।
তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মেজবাহ উদ্দিন দাবি করেছেন উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। রোয়ানু চট্টগ্রামের দিকে ধেয়ে আসায় জেলার আনোয়ারা-বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা ডিসি মেজবাহ উদ্দিন। গতকাল বিকেলে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়ার পরপরই উপকূলবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপকূলের জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানাযায়, বেশির ভাগ আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহারের অনুপযোগী। আশ্রয় কেন্দ্রের বদলে লোকজনকে নিরাপদ এলাকার স্কুল, মাদরাসায় তোলা হচ্ছে। উপকূলের বেশির ভাগ এলাকায় বেড়িবাঁধও নেই। জোয়ার ভাটায় প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন উপকূলের বাসিন্দারা। জানা যায়, ১৯৯১ সালের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ল-ভ- হয়ে যাওয়া উপকূলীয় জনপদ এখনও অরক্ষিত রয়ে গেছে। ওই ঘূর্ণিঝড়ের পর বিদেশী সাহায্যে বেড়িবাঁধ এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হলেও এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। উপকূলীয় জনগণকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় উপকূল জুড়ে প্যাড়াবন সৃষ্টি করা হলেও তা উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় স্বাভাবিক জোয়ারেই এখন অনেক এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার ভাঙনে মানচিত্র বদলে যাচ্ছে উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলের। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য।
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত ২ শত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী তা নির্মাণ হয়নি। বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। চট্টগ্রাম মহানগর রক্ষবাঁধ হিসাবে পরিচিত পতেঙ্গা বেড়িবাঁধও এখন চরমঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধের মুসলিমাবাদ পয়েন্টসহ কয়েকটি পয়েন্টে মাটি সরে যাওয়ায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে ওই এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এতে করে ওই এলাকায় গড়ে উঠা হাজার হাজার কোটি টাকার কলকারখানা, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি ও সামরিক স্থাপন হুমকির মুখে পড়েছে। বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে স্থানীয়রা বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে।
আনোয়ারার গহিরাসহ উপকূলীয় এলাকা, পশ্চিম বাঁশখালীর আলোকদিয়া থেকে প্রেমাসিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বেড়িবাঁধ সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকা জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দেশি-বিদেশি অর্থায়নে শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হলেও এগুলো এখন যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এসব উপকূলীয় এলাকার জনগণকে জলোচ্ছ্বাসের তা-ব থেকে রক্ষার জন্য টেকসই কোন বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়নি। ফলে বেশিরভাগ উপকূলীয় ইউনিয়ন এখনো অরক্ষিত রয়েছে। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জানমাল রক্ষার জন্য দুই উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (প্যারাবন) সৃষ্টি করা হলেও বিগত সময়ে প্রভাবশালীরা তা উজাড় করে দিচ্ছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষ চরম দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের নৌযান চলাচল বন্ধ
নাছিম উল আলম, বরিশাল থেকে জানান, আজ (শনিবার) সন্ধ্যা নাগাদ পূর্ণিমার কোটালে ভর করে নিম্নচাপটি বরগুনা-পটুয়াখালী ও ভোলা উপকূলসহ হাতিয়া-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী হয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। সাগর ও উপকূল যথেষ্ট উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপাসাগরে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা গোটা উপকূলসহ দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে এ ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ উপকূলের জেলাসমূহের দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হবার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
পায়রা সমুদ্র বন্দরকে গতকাল দিনভর ৫নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হলেও রাতে তা নামিয়ে ৭নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি নদী বন্দরকেও ৭নম্বর সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে গতকাল দুপুরের পরে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ উপকূলীয় নৌপথে সব ধরনের নৌচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বরিশালÑঢাকা নৌপথে বেসরকারী সব নৌযান সহ বিআইডব্লিউটিসি’র কেট স্টিমারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে মাঝারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পূর্ববর্তী ৩৬ ঘন্টায় বরিশালে প্রায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এসময় পটুয়াখালীর কলাপাড়াতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় দুশ’ মিলিমিটার। গতকাল দিনভারই পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এ বর্ষণ নিম্নচাপটিকে অনেকটাই দুর্বল করে দিতে সহায়ক হতে পারে। গত রাতে রোয়ানু পায়রা বন্দরের ৭শ’ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে।
এসব উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে সিপিপি’র পক্ষ থেকে সতর্ক পতাকা উত্তোলন করে উপকূলবাসীকে বিপদের জানান দেয়া ছাড়াও সাইরেন বাজিয়ে ও মাইকিং করেও সকলকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের বার্তা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতের বিষয়টি মাথায় রেখেই বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে সবকটি জেলাÑউপজেলায় বিশেষ সতর্কতা জারী করেছে প্রশাসন। এসব এলাকায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। বরিশাল সহ উপকূলের সবগুলো জেলা প্রশাসন জরুরী সভা করে দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা জানালেও বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসীকে উদ্ধারে কোন তৎপরতা নেই।
খুলনার উপকূলজুড়ে সতর্কতা
খুলনা ব্যুরো
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর মোকাবেলায় খুলনার উপকূলজুড়ে ব্যাপক সতর্কাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। খুলনাসহ আশপাশের এলাকা ছিলো মেঘাচ্ছন্ন। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে বিরামহীন বৃষ্টি শুরু হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও নগদ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টার সেন্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কয়রা ও দাকোপ উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৫ জন করে স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। এ দু’টি উপজেলায় মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি এনজিওদেরও কাজ করতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুল হক খান। সভায় ৯ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার কথা বলা হয়েছে।
সিপিপি’র উপজেলা টিম লিডার মো. হাবিবুর রহমান ফকির জানান, ৪ নম্বর সতর্ক সংকেতের খবর শুনেই সংকেত পতাকা টানানো হয়েছে। সিপিপি’র ৩২টি টিমকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাটে প্রশাসন প্রস্তুত, ৯ মেডিকেল টিম গঠন
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকে বাগেরহাটের উপকূলজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বইছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবে জেলার ৯ উপজেলায় ৯টি মেডিকেল টিম এবং ১৮টি কন্ট্রেলা রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া জেলার সকল উপজেলা এবং ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আরও শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে ধেঁয়ে আসায় আবহাওয়া অধিদপ্তর মংলা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন এসব সতর্কতা গ্রহণ করেছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর মংলায় ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করলে তাৎক্ষণিকভাবে জেলার উপকূলীয় সকল জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু করবে প্রশাসন এবং সেচ্ছাসেবকরা। এজন্য উপকূলীয় জেলার ২৩৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও চিড়া, গুড়সহ শুকনা খাবার মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় জেলার উপকূলীয় নদ-নদীতে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক শত মাছ ধরা ট্রলার ও জেলেরা।
মংলা বন্দরে জাহাজের কাজ বন্ধ, জনমনে আতংক
মংলা সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ক্রমে উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ায় মংলা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে গোটা উপকূলবাসী মধ্যে। এ অবস্থায় সুন্দরবন সংলগ্ন মংলা ও পার্শবর্তী বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যহত হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র খবর পেয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলো লোকদের জন্য উদ্বিগ্নের মধ্যে রয়েছেন তাদের স্বজনরা। অপরদিকে ৭ নম্বর সকর্তকতা সংকেত জারি হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সব সাইক্লোন শেল্টারগুলো ও বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগেরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে মংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে।
মংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ আলী প্রিন্স জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় জরুরী প্রস্তুতি সভা করেছে মংলা উপজেলা প্রশাসন। ওই সভায় সকল আশ্রয় কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনসাধারণকে আশ্রয় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের সাধারণ ছুটিও।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে পৃথক ৪টি কন্টোল রুল। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্ধারকারী সংস্থা। জনসাধারণকে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার সংগ্রহ ও মজুদ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী হারবার মাস্টার বেল্লাল হোসেন জানান, পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া বহির্নোঙ্গর এবং জেটি এলাকায় পণ্যবাহী ১১টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এ সকল জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাই বন্ধ রাখা হয়েছে। বেতার বার্তায় বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের ক্যাপ্টেন ও মাস্টারদের নিরাপদ এবং সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। চ্যানেলের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩২টি নৌযান। চ্যানেলে পণ্যবাহী লাইটার চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনসহ নিরাপদে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চরাঞ্চলের খালে ও বনের অভ্যন্তরে প্রায় ৫ হাজার জেলে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়ে বনবিভাগ।
কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌর শহরে রেডক্রিসেন্টের সেচ্ছাসেবক সদস্যরা মাইকিং করে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারী করেন। নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের নিরাপদে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সকাল থেকে উপকূলজুড়ে দমকা হাওয়া ও মাঝারি এবং কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে ট্রলার নিয়ে মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের শিববাড়িয়া নদীতে আশ্রয়ে নিয়েছে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিপিপি’র সকল স্বেচ্ছাসেবকদের। উপজেলার সকল সাইক্লোন শেল্টার আপদকালীন সময় খোলার জন্য শিক্ষক ও তদারকির দায়িত্ববান ব্যক্তিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের বাইরের দুই থেকে তিন ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বেশ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এছাড়া লালুয়ার মুন্সিপাড়া ও মহিপুরের নিজামপুর বেড়িবাঁধ ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে অনেকেই জোয়ারের পানির জন্য ঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। আবার নদীতে ভাটার সময় ঘরে ফিরেছেন। তবে রাতের জোয়ারে আরো বেশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন ওইসব নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এছাড়া মৎস্যবন্দর আলীপুর, মহিপুরের বেড়িবাঁধের সকল মৎস্য আড়ত ও বরফ কলগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে ওখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
ভোলায় প্রচারণা
ভোলা জেলা সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানো’ মোকাবেলায় ভোলায় রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সকালে থেকে উপকূলের তুলাতলী, কোড়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় এ প্রচার-প্রচারণার কাজ চলে আসছে।
এদিকে, ঝড় মোকাবেলায় জেলায় ১০ হাজার ২০০ সেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা হয়েছে ১১টি কন্ট্রোল রুম। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলার ৫ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো: সেলিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঝড়ের কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা বরিশাল রুটের ফেরী চলাচলসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে সকল নৌ-যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে সরকারি দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ভোলা সিপিপি উপ-পরিচালক মো: সাহাবুদ্দিন জানান, বিকাল পর্যন্ত জেলায় ৫ নাম্বার সংকেত বহাল রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলাজুড়ে আমাদের ১০ হাজার ২০০ কর্মী প্রস্তুত রয়েছে। ঝড় মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
বিপদ সংকেত, ঝুঁকিতে ১৬ কি.মি. বাঁধ
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে জেলায় ভারীবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় জ্জ ফুট জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দুপুরের পর থেকে মেঘনার পানি ২ দশমিক ৮৬ মিটার ও তেঁতুলিয়ার পানি ২ দশমিক ৪৪ উচ্চতায় প্রবাহিত হচেছ। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ১৬ কিলোমিটার বাঁধ। রোয়ানু আঘাতে এ বাধ বিধ্বস্ত হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।