পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুÐ থেকে ঃ সীতাকুÐে মাত্র কয়েক বছর আগেও ১৩০টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙা হতো। এখন জাহাজ ভাঙা হয় মাত্র ২৫/৩০টি ইয়ার্ডে। অন্যগুলোতে কোন কার্যক্রম নেই। যার অর্থ এখানে ১৩০টি ইয়ার্ডের মধ্যে ১০০টি’ই এখন বন্ধ! গত ৩ বছর ধরে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম বারবার উঠানামা করায় ইয়ার্ড মালিকের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়ে জাহাজ ভাঙা শিল্পে এ ঘোর দুর্দিন সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবী। এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসছে প্রতিবছর বাজেটে লোহার উপর আরোপ করা নানারকম ভ্যাট, ট্যাক্স ও শুল্ক। যা এ শিল্পকে অতি দ্রæত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৬০-এর দশকে সীতাকুÐে জাহাজ ভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। বাংলাদেশে লোহার কোন খনি না থাকায় শুরু থেকেই লোহার চাহিদা পূরণে জাহাজ ভাঙা শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখতে শুরু করে। ফলে দেশবাসীর কাছে এটি ভাসমান লৌহ খনি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। সেই হতে এ শিল্প থেকে প্রাপ্ত লোহার উপর নির্ভর করে চলতে থাকে দেশের নির্মাণ শিল্প। ৮০ দশক ছিলো শিপব্রেকিংয়ের স্বর্ণযুগ। এসময় ইয়ার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০০০ সালে ইয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৫টির মত। পরে আরো কয়েকটি ইয়ার্ড স্থাপন হলে ইয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩০টি। শিপব্রেকিং এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ ও জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড মালিকরা জানান, নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিগত অর্ধ শতাব্দীতে এ শিল্প ক্রমশ বিকাশ লাভ করে দেশে-বিদেশে নিজেদের অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরতে সক্ষম হওয়ার পর ২০১১ সালে সরকার জাহাজ ভাঙা কার্যক্রমকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ফলে আরো উৎসাহের সাথে পুুঁজিপতিরা এখানে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। কিন্তু অল্প সময়েই তাদেরকে চরম হতাশ হতে হয়। কারণ, নামে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হলেও অন্যান্য শিল্পের মত এখাতে কোন সরকারী সুবিধা প্রদান করা হয়নি। এরই মধ্যে ২০১৩ সালে একদিকে দেশে সরকার বিরোধী আন্দোলনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস আর অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম প্রতিদিন উঠানামা শুরু করায় বাজার বুঝতে না পেরে জাহাজ কিনে লোকসান দিতে শুরু করে ইয়ার্ড মালিকরা। এ অবস্থা চলতে থাকে টানা ৩বছর। এসময় দিন দিন অবস্থা এত খারাপ হতে থাকে যে, প্রতি টন লোহায় ৮/১০ হাজার টাকাও লোকসান দিতে হয়েছে তাদেরকে। যার অর্থ প্রতি (২০/৫০ হাজার টনের) জাহাজে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে প্রত্যেক মালিককে। বাংলাদেশ শিপব্রেকিং এসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য পিএইচপি শিপব্রেকিং এন্ড রি-সাইক্লিংয়ের এমডি মোঃ জহিরুল ইসলাম রিংকু ও বিএসবিএর সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, দীর্ঘ ৩ বছর ধরে স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনে লোকসান দিয়েছেন মালিকরা। এ লোকসানের অংক হাজার হাজার কোটি টাকা। কোন একজন মালিক যেমন একা ১শ’ কোটি টাকার উপর লোকসান দিয়েছেন তেমনি একা হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন এমন মালিকও রয়েছেন কয়েকজন। এ কারণে বেশিরভাগ ইয়ার্ড মালিক ঋণ খেলাপি হতে শুরু করেন। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকগুলোও এখন সহজে জাহাজ ভাঙা শিল্পে বিনিয়োগ করতে চান না। আর বিনিয়োগ করেও পুঁজি উঠাতে না পারায় বহু মালিক এ শিল্পে আর নতুন করে বিনিয়োগ করেন না। বিএসবিএ সূত্র আরো জানায়, চরম দুঃসময়ের মধ্যেও হয়ত আবার সুদিনের দেখা মিলবে এমন আশায় স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করেননি। ২০১৩ সালে জাহাজ ভাঙা শিল্পে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয় ১৫১টি। এ থেকে প্রায় ২১ লাখ টন লোহা উৎপাদন হয়। একইভাবে ২০১৪ সালে ২২৭টি স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে লৌহ উৎপাদন হয় ২৬ লাখ টনের বেশি, ২০১৫ সালে আসে ২৩০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ এবং ২০১৬ সালের এখনো পর্যন্ত এখানে জাহাজ আসে ১০২টি। এ শিল্প থেকে সরকার বার্ষিক ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করে। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্ধলক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্প সরকারীভাবে তেমন কোন ছাড় পাচ্ছে না। একেকটি জাহাজ আনতে গেলে ইয়ার্ড মালিকদের প্রতি মেট্রিক টনে অগ্রিম আয়কর দিতে হয় ৮০০ টাকা, টন প্রতি কাস্টম ডিউটি দিতে হয় ১৫শ’ টাকা, ইয়ার্ড ভ্যাট, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয়ের এনওসি, বিচিং ফি, বিচিং পরবর্তীসহ বিভিন্ন শুল্ক দিতে হয়। আবার প্রতিবছর বাজেটে লোহার উপর নানান করারোপ করা হয়। পিএইচপি শিপব্রেকিং-এর এমডি জহিরুল ইসলাম রিংকু আরো বলেন, আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই যেন জাহাজ ভাঙা শিল্পে যেসব ভ্যাট, ট্যাক্স ও শুল্ক আছে তা আর বৃদ্ধি না করে কমিয়ে আরো সহনীয় পর্যায়ে করা হয়। এসব শুল্ক আরো বৃদ্ধি হলে অস্তিত্ব সংকটে থাকা অন্য ইয়ার্ডগুলোও বন্ধ হয়ে গিয়ে দেশের সরকারী বেসরকারী ব্যাংকগুলির হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা একটি চিঠিও পাঠাচ্ছেন জানিয়ে শিল্পকে রক্ষা করে দেশে কর্মসংস্থান ও লোহা উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান বিএসবি’র সভাপতি এম.এ তাহের, শিল্পপতি কামাল উদ্দিনসহ শিপব্রেকার্স নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।