Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শিক্ষক শ্যামলের ভাষ্য চড় মেরে সেলিম ওসমান বলেন, ‘শালা কান ধর’

প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : স্বেচ্ছায় কান ধরে ওঠবস করেছেন বলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। তিনি জানান, সেদিন সেলিম ওসমান তার দুই গালে দুটি করে চারটি চড় মারার পর বলেন, ‘শালা কান ধর’। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি তিনি করেননি জানিয়ে শ্যামল কান্তি বলেন, সেদিনের পুরো ঘটনাই সাজানো।
গতকাল বৃহস্পতিবার খানপুর শহরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সেদিন শিক্ষক শ্যামল কান্তি স্বেচ্ছায় কান ধরে ওঠবস করেছেন বলে সেলিম ওসমান এমপি গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে শিক্ষক বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। পুরো ব্যাপারটিই ছিল সাজানো। মসজিদের মাইকে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছিল। সভার কথা শুনে তিনি স্কুলে যান। কিন্তু গিয়ে দেখেন পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন আমাকে পেটায়। বিকালে সেলিম ওসমান ঘটনাস্থলে আসেন। আমার শরীর তখন একেবারেই দুর্বল। যে ঘরে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল, এমপি সেখানে ঢুকে কোনো কথা না বলে দুটি করে চারটি চড় মারেন। লজ্জায় তখন আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছিল। এরপর ঘর থেকে বের করে সংসদ সদস্য লোকজনের সামনে এনে আমাকে বলেন, ‘শালা কান ধর। ১০ বার ওঠবস কর।’ জীবন বাঁচাতে তা করতে বাধ্য হই।
কেন এ রকম ঘটনা ঘটল জানতে চাইলে শিক্ষক বলেন, ‘আমি স্কুলটি দাঁড় করিয়েছি। কিছু লোকজন চাচ্ছিলেন আমি যেন স্কুলে না থাকতে পারি। তারাই ষড়যন্ত্র করেন।’
ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেছিলেন কিনা, জানতে চাইলে শিক্ষক বলেন, ‘আমি কোনো কটূক্তি করিনি। পুরোটাই সাজানো। স্কুল থেকে বের করতেই এসব ষড়যন্ত্র হয়েছে।’
শিক্ষককে এমপি সেলিম ওসমান ‘তারছেড়া’ বলেছেন। জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির ব্যাপারে তার (এমপি) কাছে প্রমাণ আছে। শিক্ষকের পরিবার লিখিত দিয়েছে। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বলেন, ‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে আছেন। তাকে ডাক দেন। এগুলো ভিত্তিহীন কথা।’ তিনি বলেন, যে এমপি শিক্ষকের গায়ে হাত তোলেন, তাকে যেন বরখাস্ত করা হয়।
সরকারের তদন্ত কমিটি শিক্ষককে স্বপদে বহাল করেছে। শিক্ষক এজন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সবাইকে শত কোটি প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানান।
শিক্ষার্থীকে মারধর ও ‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির’ অভিযোগে গত শুক্রবার শ্যামল কান্তিকে স্থানীয় এমপির উপস্থিতিতে মারধর ও কান ধরে ওঠবস করানো হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, ‘ধর্মীয় অবমাননার’ অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়নি সরকারি তদন্ত কমিটি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অন্যায়ভাবে শ্যামল কান্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। তাই ওই কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আর শ্যামল কান্তিকে তার স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষক শ্যামলের ভাষ্য চড় মেরে সেলিম ওসমান বলেন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ