পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রীষ্মকাল আসার আগেই তেঁতে উঠেছে সারাদেশ। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ। প্রত্যাশিত বৃষ্টি নেই। দিনমান সূর্যের তীর্যক রোদে যেন মরুর আগুনের হল্কা। এরই মধ্যে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সে. অতিক্রম করেছে। রুক্ষ রুদ্র বিরূপ হয়ে উঠেছে আবহাওয়া-জলবায়ু। খরার দহনে পুড়ছে মাঠ-ঘাট খাল-বিল-বাওর চরাচর। চারদিকে পানির অভাব প্রকট। মাটির নিচে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদ-নদীগুলো শীর্ণ ক্ষীণ। ন্যুনতম স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে নদীর পানি তলায় গিয়ে ঠেকেছে।
আবহাওয়া-জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এবং আশপাশ অঞ্চলে চলতি বছর টানা দুর্যোগের ঘনঘটার আলামত দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ খরা, অসহনীয় তাপপ্রবাহ, অতিমাত্রায় বজ্রপাত, হঠাৎ অতিবৃষ্টির কারণে এলাকাওয়ারি বন্যা ও সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে চলতি মার্চ মাস থেকে আগামী জুন পর্যন্ত। আবহাওয়ায় এবার নতুন করে ‘এল নিনো’ অবস্থা তৈরি রয়েছে। এরফলে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে। এরআগে পর্যন্ত আবহাওয়া একটা ‘নিরপেক্ষ’ অর্থাৎ চরম ভাবাপন্ন নয় এমন অবস্থা বিরাজ করছিল। ‘এল নিনো’ হচ্ছে বৃষ্টিপাতের আবহ রোধকারী আবহাওয়া-জলবায়ুর বিশেষ অবস্থা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আবহাওয়া-জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রিয়াজ আখতার মলিক গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, একটি ‘এল নিনো’ অবস্থা শুরু হয়েছে। এটি দুর্বল প্রকৃতির। যা আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিরাজমান থাকতে পারে। আবহাওয়ায় এর সম্ভাব্য প্রভাব হতে পারে সীমিত। তিনি বলেন, ‘এল নিনো’ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কয়েকটি বিষয়ে পূর্বাভাস প্রদান করতে পারে। যেমন- গত বছরের চেয়ে চলতি বছর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। বন্যার আশঙ্কা কম অথবা বন্যা নাও হতে পারে। প্রাক-বর্ষা (বর্ষার মৌসুমী বায়ু আগমনের পূর্বে) সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় উপক‚লে আঘাত হানতে পারে।
রিয়াজ আখতার বলেন, চলতি বছরে বৃষ্টিপাত কেমন হবে তা এ মুহূর্তে সঠিক পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব নয়। তবে ‘এল নিনো’ অবস্থা যদি বজায় থাকে তাহলে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে দেশে এবার বর্ষণ হতে পারে কম। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান তথা উপমহাদেশ এবং এর সংলগ্ন মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়া অবধি ‘এল নিনো’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ কারণে খরা, ঝড়, বন্যা, বজ্রঝড়-বজ্রপাত ও তাপপ্রবাহের পদধ্বনি জোরালো হচ্ছে। ‘এল নিনো’ অবস্থার কারণে প্রশান্ত মহসাগরের উপরতলে বইছে উতপ্ত স্রোতধারা ও বায়ুপ্রবাহ। অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব মেটেরোলজি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টার, জাপানের মেটেরোলজিকাল এজেন্সিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আহাওয়া-জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ‘এল নিনো’ অবস্থা তৈরি হওয়ার আলামত পেয়েছে।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’ অবস্থা প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। পরে তা আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। ‘এল নিনো’ অবস্থার কারণে গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহসাগরে পানির ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুমালা দুর্বল হয়ে পড়লে সমুদ্রের উপরিতলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এতে করে দক্ষিণ আমেরিকায় শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি আর বন্যা। আর তখন এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায় বয়ে যায় ঝলসে দেয়ার মতো খরতপ্ত হাওয়া। দীর্ঘস্থায়ী খরার কবলে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এরই নাম আবহাওয়ার ‘এল নিনো’ অবস্থা। স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’ মানে ‘ছোট্ট বালক’।
২০০৯, ২০১০ ও ২০১৫ সালে ‘এল নিনো’ অবস্থা বিরাজ করে। এটি আবার ফিরে আসছে। ‘এল নিনো’ অবস্থা তৈরি কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ তীব্র খরা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শস্য ক্ষেত চৌচির করে দিতে পারে এই খরা। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষককুল। বাড়তে পারে খাদ্যপণ্যের দামও। জনস্বাস্থ্য, কৃষি-খামার বাজারে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩দিন বজ্রপাতের সাথে মাঝারি থেকে প্রবল আকারে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড় এবং দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৫ দিন হালকা থেকে মাঝারি আকারে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড়, বজ্রপাত হতে পারে। এপ্রিলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঊর্ধ্বে) এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি ধরনের (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আগামী মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন মাঝারি থেকে তীব্র আকারে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ থেকে ২টি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে) এবং দেশের অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
‘এল নিনো’ অবস্থা কী : ‘এল নিনো’ অবস্থা হচ্ছে সমুদ্রের উপরিভাগের পানির তাপমাত্রার গড় মানের সাথে তুলনামূলক নিরবচ্ছিন্ন পরিবর্তন বা হেরফের। এ অবস্থার ফলে পূর্ব কেন্দ্রীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় শান্ত সমুদ্রের পানির গড় তাপমাত্রা কমপক্ষে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। সাধারণত এল নিনো’ অবস্থা ২ থেকে ৭ বছরের যে কোনো সময়ে তৈরি হয়। এটি ৯ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। ‘এল নিনো’ অবস্থার অন্যতম আলামত হচ্ছে, এরফলে ভারত মহাসাগর, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রে উপরিভাগের পানির চাপের পরিবর্তন ঘটায়। দক্ষিণ এবং ভারত মহাসাগর থেকে উত্তর দিকের শান্ত সমুদ্রে গরম পানির প্রবাহের বিস্তার ঘটায়। এটি বৃষ্টির পানি সাথে নিয়ে চলে। দক্ষিণ শান্ত সমুদ্রে অনাবৃষ্টি এবং শুষ্ক উত্তর শান্ত সমুদ্রে বৃষ্টিপাত এনে দেয়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং ‘এল নিনো’ এই দুই অবস্থার কারণেই পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ‘এল নিনো’ অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিজ্ঞানীগণ গত ২৫ বছরের ইতিহাসক্রম পর্যালোচনা করে বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আরও শক্তিশালী ধরনের ‘এল নিনো’ অবস্থার উদ্ভব ঘটতে পারে। যার ফলে খাদ্যশস্য আবাদ, উৎপাদন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য, আবাসন, জীবন-জীবিকার ওপর বৈরী প্রভাব পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।